মহররম ‘আশহুরে হুরুম’ বা সম্মানিত চার মাসের একটি, যার প্রতি আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এ মাসের ১০ তারিখ ‘আশুরা’ নামে পরিচিত। বহু নবীর জীবনে এই দিনে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। মহররম নিয়ে বিদআত ও ভ্রান্ত রীতি প্রচলিত রয়েছে। এ নিয়ে আমাদের সচেতন থাকা জরুরি।
মহররম উপলক্ষে অনেক জায়গায় কিছু কুসংস্কার ও বেদআত প্রচলিত হয়ে গেছে, যেমন—নিজের শরীর আঘাত করা; তাজিয়া মিছিলের নামে বিশৃঙ্খলা; ‘পাক রান্না’ করে তা অলৌকিক মনে করা। এসব ইসলাম স্বীকৃত নয়।
আমাদের উচিত রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী এ মাস পালন করা— ইবাদত, রোজা, তওবা ও সৎকর্মের মাধ্যমে। মহররমের গুরুত্ব ও শিক্ষা সমাজে ছড়িয়ে দিতে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা ও ইসলামী ইতিহাস চর্চা বৃদ্ধি করা। এ ছাড়া ইমাম হোসাইন (রা.)-এর জীবনভিত্তিক নাটিকা, আবৃত্তি বা বক্তৃতা প্রতিযোগিতা আয়োজন করা; টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যমে ইতিহাসনিষ্ঠ ও শুদ্ধ বার্তা তুলে ধরা।
কারবালার ইতিহাস যেন শুধু শোক নয়, নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণের অনুপ্রেরণা হয়। মহররম আমাদের জন্য শুধু একটি মাস নয়; এটি একটি চেতনা, একটি সংগ্রাম, একটি বোধ। সত্য ও ন্যায়ের পথে জীবন উৎসর্গের প্রতীক এই মাস। হোসাইন (রা.) আমাদের শেখান, সংখ্যায় বড় না হয়েও ন্যায়ের পথে অটল থাকা যায়, অন্যায়ের সামনে মাথানত করা যায় না।
মহররমের প্রথম দশ দিন আমাদের চিন্তা, চরিত্র ও কর্মে বিপ্লব ঘটাতে পারে, যদি আমরা তা বুঝে উপলব্ধি করি। এ মাসে কান্না করা উচিত। তবে নিজের গোনাহর জন্য। এ মাসে রোজা রাখা উচিত। তবে আত্মাকে খাঁটি করার জন্য। এ মাসে শোক করা উচিত। তবে সেই আদর্শের জন্য, যা জীবনকে আলোকিত করে।
এ মাসে করণীয় সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রমজান মাসের পর আল্লাহর কাছে সর্বাধিক ফজিলতপূর্ণ রোজা হচ্ছে মহররম মাসের রোজা।’ (সহিহ মুসলিম)। আবার আশুরার দিনে রোজা রাখার প্রসঙ্গে তিনি বলেন: ‘আশা করি আল্লাহতায়ালা এ রোজার মাধ্যমে অতীত এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন।’ (সহিহ মুসলিম)
রাসুল (সা.) ইহুদিদের আশুরার রোজা পালনের কথা শুনে বলেছিলেন: ‘তোমরা দশমের সঙ্গে নবম অথবা একাদশ মিলিয়ে রোজা রাখো, যাতে ইহুদিদের থেকে ভিন্ন হওয়া যায়।’
এ ছাড়া মহররমে কোরআন তেলাওয়াত বৃদ্ধি করা; ইস্তিগফার ও তওবা করা; দান-সদকা করা; অতীত গোনাহর জন্য কান্না ও আত্মসমালোচনা; আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি সাহাবা ও আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ উচিত।
সূত্র : ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খানের প্রবন্ধ থেকে সংক্ষেপিত
মন্তব্য করুন