

মানুষ মাত্রই ভুল করে, রাগ করে, আবার অভিমানও করে। কখনো পরিবারের ভেতরে, কখনো কর্মস্থলে, আবার কখনো বন্ধু বা প্রতিবেশীর সঙ্গে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। ফলে অনেকেই ক্ষোভে, কষ্টে বা অহমে কথা বলা বন্ধ করে দেন দিনের পর দিন। সমাজে এ নিয়ে নানা কথাও প্রচলিত—কেউ বলে, তিন দিনের বেশি কথা বন্ধ রাখলে নাকি মুসলমান থাকে না! তাই প্রশ্ন জাগে, কোনো মুসলিম অন্য মুসলিমের সঙ্গে তিন দিনের বেশি কথা না বললে কী হয়? আসলেই কি অমুসলিম হয়ে যায়?
এ বিষয়ে রাজধানীর জামিয়াতুল ইসলামিয়া বায়তুস সালাম ঢাকা-এর ফতোয়া বিভাগীয় প্রধান মুফতি আব্দুর রহমান হোসাইনী বলেন, ইসলামী শরিয়তে কোনো মুসলমান অন্য মুসলমানের সঙ্গে তিন দিনের বেশি কথা বন্ধ রাখা নিষেধ। তবে কথা না বললে যে তার মুসলমানিত্ব থাকে না—এ কথা ঠিক নয়।
হাদিসে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা পরস্পর বিদ্বেষ ভাবাপন্ন হয়ো না, হিংসা করো না এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন থেকো না। আর তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ও পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে যাও। কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ নয় যে, সে তার ভাই থেকে তিন দিনের অধিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে থাকবে। (বোখারি : ৬০৭৬)
এ হাদিস থেকে পরিষ্কার—রাগ, কষ্ট বা অভিমানে তিন দিন পর্যন্ত কথা না বলার সুযোগ আছে। কারণ মানুষ তো মানুষই, মনে ক্ষোভ আসতেই পারে। কিন্তু তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বন্ধ রাখা বৈধ নয়। এটি আল্লাহর নাফরমানি, গোনাহের কাজ। কিন্তু এতে কেউ ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় না।
উল্লেখ্য, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সময়সীমার বিধিনিষেধ শিথিল রাখা হয়েছে। জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহর মতে, ইসলাম সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে তিন দিন পর্যন্ত রাগ-ক্ষেভ থাকতেই পারে। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্র রয়েছে, যেগুলোর ক্ষেত্রে তিন দিনের বেশিও কথা না বলে থাকা যাবে।
উদাহরণস্বরূপ, অধীন কাউকে শাসনের ক্ষেত্রে তার সঙ্গে তিন দিনের বেশি কথা না বললে, ওই ব্যক্তি যদি চাপ অনুভব করেন এবং সঠিক পথে আসেন—এমন ক্ষেত্রে তিন দিনের বেশি সময়ও কথা না বলে থাকা যাবে। অথবা কারও সঙ্গে কথা বললে বা সম্পর্ক রাখলে সেই ব্যক্তি ক্ষতিসাধন করার আশঙ্কা আছে, এমন হলে তার সঙ্গে তিন দিনের বেশি কথা না বললেও অসুবিধা নেই।
মন্তব্য করুন