শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৪, ০৪:০৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ

জুমার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

জুমার দিনে রয়েছে বিশেষ আমল। ছবি : সংগৃহীত
জুমার দিনে রয়েছে বিশেষ আমল। ছবি : সংগৃহীত

জুমার নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এ নামাজ ছেড়ে দিলে হাদিসে ভয়াবহ ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি মুসলিমকে অবশ্যই জুমার নামাজ গুরুত্বের সঙ্গে পড়া উচিত। প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, জুমা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ দিবস। পবিত্র কোরআনে সূরা আল জুমায় ইরশাদ করা হয়েছে,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ

‘মুমিনগণ, জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ।’ (সূরা: আল জুমা, আয়াত: ৯)

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা জগৎ সৃষ্টির পূর্ণতা দান করেছিলেন এই দিনে। এই দিনেই হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-কে জান্নাতে একত্র করেছিলেন এবং এই দিনে মুসলিম উম্মাহ সাপ্তাহিক ঈদ ও ইবাদত উপলক্ষে মসজিদে একত্র হয় বলে দিনটাকে ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন বলা হয়।

মালেক ইবনে শিহাব থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি ইবনে সাব্বাক থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো এক জুমার দিনে বললেন, ‘হে মুসলিম সম্প্রদায়! আল্লাহ তায়ালা এই দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।’ আরবি শব্দ জুমুআ- এর অর্থ একত্র হওয়া। শুক্রবারকে বলা হয় ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন।

শুক্রবারের দিন যোহরের নামাজের পরিবর্তে জুমার নামাজকে ফরজ করা হয়েছে। জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজ ও ইমামের খুতবাকে যোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। সপ্তাহের এদিনে জুমার খতিব উম্মতের যাবতীয় প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে নির্দেশনা ও সমাধানমূলক উপদেশ দেবেন তার খুতবায়।

যে সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করে, সে একটি উট আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব লাভ করে। যে দুই নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি গরু আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব পায়। যে তিন নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি দুম্বা দান করার সওয়াব পায়। যে চার নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি মুরগি দান করার সওয়াব লাভ করে। আর যে পাঁচ নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব পায়। (মুসনাদে শাফী : ৬২, জামে লি ইবনে ওহাব : ২২৯, মুসনাদে হুমাইদি : ৯৬৩)।

হজরত সালমান (রা.) হতে একটি হাদিস বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, অতঃপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি নেবে, তার পর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, সে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, চুপ করে মনোযোগসহকারে তার খুতবা শুনবে। দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (মুসনাদে আবু দাউদ : ৪৭৯)।

জুমার নামাজ প্রত্যেক বালেগ পুরুষের জন্যই ওয়াজিব। হাদিসে এসেছে, হজরত হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রত্যেক (প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ) মুসলমানের জন্য জুমার নামাজ আদায় করা ওয়াজিব- অপরিহার্য কর্তব্য। (সুনানে নাসায়ী)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি অবহেলা অলসতা করে পর পর তিন জুমা নামাজ ছেড়ে দিল, মহান আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দিবেন। (আবু দাউদ)।

আরেক হাদিসে রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো ওজর এবং অনিষ্টের ভয় ছাড়া জুমার নামাজে অংশ গ্রহণ করে না, মুনাফিকের এমন দপ্তরে তার নাম লিপিবদ্ধ করা হয়, যা কখনো মোছা বা রদবদল করা হয় না।

কারোর জুমার নামাজ এক রাকআত ছুটে গেলে বাকি আর এক রাকআত ইমামের সালাম ফেরানোর পর উঠে পড়ে নিলে তার জুমা হয়ে যাবে। অনুরূপ কেউ দ্বিতীয় রাকআতের রুকুর আগে থেকে পেলেও ওই রাকআত এবং তার সঙ্গে আর এক রাকআত পড়লে তারও জুমার নামাজ হয়ে যাবে।

কিন্তু যদি কেউ দ্বিতীয় রাকআতের রুকূ শেষ হওয়ার পর জামাআতে শামিল হয়, তাহলে সে জুমার নামাজ পাবে না। এই অবস্থায় তাকে যোহরের ৪ রাকআত আদায়ের নিয়তে জামাআতে শামিল হয়ে ইমামের সালাম ফিরার পর ৪ রাকআত ফরজ পড়তে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, সৌদি উলামা-কমিটি ১/৪১৮, ৪২১)।

আর কেউ যদি জুমার নামাজ না পায় বা মসজিদে গিয়ে দেখে জুমা শেষ হয়ে গেছে তবে তাকে যোহরের নামাজ পড়তে হবে। কারণ জামাআত ছাড়া জুমার নামাজ হয় না।

হাদিসে এসেছে, ইবনে মাসঊদ (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার এক রাকআত পেয়ে যায়, সে ব্যক্তি যেন আর এক রাকআত পড়ে নেয়। কিন্তু যে (দ্বিতীয় রাকআতের) রুকূ না পায়, সে যেন জোহরের ৪ রাকআত পড়ে নেয়।’ (ইবনে আবী শাইবা, ত্বাবারানী, বায়হাকী, আলবানী : ৬২১)।

কোনো ইমাম সাহেব যদি বিনা ওজুতে জুমার নামাজ পড়িয়ে নামাজের শেষে মনে হয়, তাহলে মুক্তাদির নামাজ সহিহ হয়ে যাবে। আর ইমাম ওই নামাজ কাজা করতে ৪ রাকআত জোহর পড়বেন। (আল-মুন্তাকা মিন ফাতাওয়াল ফাওয়া : ৩/৬৮)।

জুমার খুতবা অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। জুমার খুতবা হলো ওয়াজিব। খুতবা চলাকালীন কোনো প্রকার কথা বলা যাবে না। এমনকি কাউকে কথা বলতে দেখে ‘চুপ কর’ এ কথাও বলা যাবে না। কারণ, হাদিসে এ ব্যাপারে নিষেধ এসেছে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ইমামের খুতবা দেওয়া অবস্থায় তুমি যদি তোমার সাথীকে বল, তুমি চুপ কর, তাহলে তুমি অনর্থক কথা বললে’।

ইমাম আহমদ তার বর্ণনায় হাদিসে আরো বর্ধিত করেন, অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোনো অনর্থক কর্ম করল, তার জন্য ওই জুমায় আর কিছু রইল না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভয়াবহ পরিস্থিতি, বিশেষ দোয়া চাইলেন মুসলিম নেতা

সিরিয়ায় ইরানের সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনা ব্যর্থ, গোপন নথি ফাঁস

শুধু ১০০ দিনেই ওলটপালট করেছেন সব

এনসিপির সমাবেশ নিয়ে নাহিদের বার্তা

শ্বশুরবাড়ি থেকে সাবেক কৃষিমন্ত্রীর এপিএস গ্রেপ্তার

ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েনে বাণিজ্যে ধাক্কা

আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপির সমাবেশ আজ

জুমার দিন দোয়া কবুলের উত্তম সময় কখন 

নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে গুলি

১০

গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আজ

১১

আবারও বড় ধাক্কা খেল যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পরমাণু আলোচনা

১২

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি / ইরানের তেল কিনলেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ

১৩

নতুন করে বিমান হামলা চালাল যুক্তরাষ্ট্র, অপ্রতিরোধ্য ইয়েমেন

১৪

রাজশাহীতে পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে সাবেক কাউন্সিলরের মৃত্যু

১৫

ঢাকার আবহাওয়া আজ কেমন থাকবে

১৬

শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৭

ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধুর

১৮

০২ মে : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৯

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজকে অব্যাহতি

২০
X