ইংল্যান্ড ও ভারতের মধ্যকার ম্যানচেস্টার টেস্টে খেলার ফল ছিল ড্র; কিন্তু ম্যাচ শেষে যা ঘটল তা রীতিমতো ক্রিকেট বিশ্বে বিতর্কের ঝড় তুলেছে। ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস যখন খেলা শেষ করার প্রস্তাব দেন, ভারত সেটা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে। শুধু তাই নয়, ম্যাচ শেষে ইংলিশদের সঙ্গে করমর্দন করতেও অস্বীকৃতি জানান ভারতীয় ক্রিকেটাররা।
চতুর্থ ইনিংসে ভারতীয় স্কোর ছিল ৩৮৬/৪, ১৩৮ ওভার খেলা হয়ে গেছে এবং তারা ৭৫ রানে এগিয়ে। উইকেটে ছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দর—দুজনই তখন শতকের দ্বারপ্রান্তে। ঠিক সেই সময় স্টোকস ম্যাচ ড্র করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু জাদেজা-সুন্দর পরিষ্কার জানিয়ে দেন, তারা খেলা চালিয়ে যেতে চান। তাদের লক্ষ্য ছিল শতক, আর সেটা তারা অর্জন করেই মাঠ ছাড়েন।
স্টোকস হতবাক হয়ে ফিরে যান; কিন্তু এরপর ঘটে আরও নাটকীয় ঘটনা। স্টাম্প মাইকে ধরা পড়ে ইংল্যান্ডের হ্যারি ব্রুক ও জ্যাক ক্রলির সঙ্গে জাদেজার উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। মাঠে তখন উত্তেজনার পারদ চরমে। ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকর সরাসরি বলেন, ‘ভারত এখনই করমর্দন করবে না, এটা পরিষ্কার। দুজন ব্যাটার তাদের শতরানের দিকে এগোচ্ছেন। উল্টোদিকে হলে স্টোকস কি ড্র মেনে নিতেন?’
ইংল্যান্ড এরপর বোলিংয়ে নিয়ে আসে হ্যারি ব্রুককে, যার একের পর এক ফুলটস বল দেখে বোঝা যায়—ম্যাচ তাড়াতাড়ি শেষ করাই তাদের উদ্দেশ্য। তবে জাদেজা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শতক পূর্ণ করেন এবং করেন নিজের বিখ্যাত 'তরবারি উদযাপন'। ওয়াশিংটন সুন্দরও শতকে পৌঁছান দৃঢ়চেতা ইনিংস খেলে।
এর আগে চতুর্থ দিন ১০৩ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেন শুভমান গিল। কে এল রাহুল করেন ৯০ রান। ০/২ স্কোর থেকে যখন ভারত পড়ে গিয়েছিল চাপে, তখন রাহুল ও গিলের জুটি আবারও ম্যাচে ফিরিয়ে আনে সফরকারীদের।
ড্র হলেও সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে আছে ইংল্যান্ড। তবে ভারতের এমন জবাব, বিশেষ করে শেষ দিনে শতকের জন্য খেলা চালিয়ে যাওয়া এবং করমর্দনে অনীহা, ক্রিকেটীয় সৌজন্যের ধারাবাহিকতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
ম্যানচেস্টারের মাঠে ‘ড্র’-র ভেতর লুকানো এই দ্বৈরথ আরও একবার প্রমাণ করল—ক্রিকেট কেবল খেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি একেক সময় হয়ে ওঠে মানসিক দৃঢ়তা, সম্মান আর প্রতিশোধের কাব্যও।
মন্তব্য করুন