

সিডনির মাঠে সেটি তখন একদম সাধারণ একটা মুহূর্ত—একটি ডাইভিং ক্যাচ, দর্শকদের উল্লাস, আর হঠাৎই নিস্তব্ধতা। কয়েক সেকেন্ড পর বোঝা গেল, কিছু একটা ভয়ংকর ঘটেছে। ভারতীয় ক্রিকেটার শ্রেয়াস আইয়ার পড়ে আছেন মাঠে, পেট চেপে ধরেছেন দুই হাতে। পরবর্তী কয়েক ঘণ্টা হয়ে ওঠে জীবনের সঙ্গে লড়াইয়ের সময়। আর আজ, সেই মৃত্যুর ছায়া পেরিয়ে প্রথমবার মুখ খুললেন তিনি—জানালেন তিনি ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছেন প্রতিদিন আরও একটু করে।
সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে মাঠে নেমেছিলেন ভারতীয় দলের এই নির্ভরযোগ্য মিডল-অর্ডার ব্যাটার। কিন্তু ম্যাচের মাঝেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। অ্যালেক্স কেরিকে অসাধারণ এক ডাইভে ক্যাচ ধরার পরপরই আইয়ার মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সবাই ভেবেছিল সামান্য পাঁজরের চোট; কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জানা গেল আসল ভয়াবহতা—গ্রেড-টু স্প্লিন ল্যাজারেশন, অর্থাৎ প্লীহায় গভীর ক্ষত ও অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ।
তৎক্ষণাৎ তাকে নেওয়া হয় সেন্ট ভিনসেন্টস হাসপাতালে, যেখানে জরুরি চিকিৎসায় মৃত্যুর মুখ থেকে টেনে আনা হয় তাকে। চিকিৎসকরা জানান, আইয়ারের রক্তচাপ দ্রুত নিচে নেমে গিয়েছিল, পরিস্থিতি তখন ছিল অত্যন্ত সংকটজনক। সৌভাগ্যবশত, অপারেশন ছাড়াই রক্তপাত থামানো সম্ভব হয়।
ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর বৃহস্পতিবার সকালে শ্রেয়াস নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে লেখেন—
‘আমি এখন সেরে ওঠার পথে, প্রতিদিন একটু একটু করে ভালো হচ্ছি। সারা বিশ্বের ভক্তদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা পেয়েছি, তা সত্যিই আমার জন্য অনেক বড় আশীর্বাদ। সবাইকে ধন্যবাদ—আমার জন্য প্রার্থনা করার জন্য।’
এই বার্তাটিই এখন যেন ভারতীয় সমর্থকদের জন্য এক বিশাল স্বস্তি। কারণ ঘটনার পর থেকে দলের ভেতরে-বাইরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। এমনকি ডাক্তারদেরও আশঙ্কা ছিল, দেরি হলে ঘটনাটি প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারত।
খেলার বিশ্লেষক গ্রিনস্টোন লোবো বলেন, ‘আইয়ার ভীষণ ভাগ্যবান। যে ধরণের স্প্লিন ইনজুরি ওর হয়েছিল, সেখানে কয়েক মিনিটের বিলম্বও ভয়াবহ হতে পারত। তবে আমি নিশ্চিত, এই অভিজ্ঞতা তাকে আরও দৃঢ় করে তুলবে।’
আইসিইউ থেকে ফিরলেও এখনো সম্পূর্ণ বিশ্রামে আছেন শ্রেয়াস। আপাতত কোনো ক্রিকেট কার্যক্রমে ফেরার সম্ভাবনা নেই এই বছরের শেষের আগে। তবে বোর্ড ও তার সতীর্থদের বিশ্বাস—এই চোট কাটিয়ে তিনি আরও শক্ত হয়ে ফিরবেন, যেমনটা করেছেন আগেও পিঠের অস্ত্রোপচারের পর।
সিডনির সেই দুঃস্বপ্ন আজও চোখে ভাসে, কিন্তু শ্রেয়াসের এই বার্তা ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে নতুন আলো জ্বেলেছে—মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা এক যোদ্ধার প্রত্যাবর্তনের শুরু এটিই।
মন্তব্য করুন