মিরপুরে আজ একটি আউট নিয়ে বেশ হই-চই। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটার ইশ সোধিকে আউট করেও তাকে আবার ব্যাট করার সুযোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস। আউট করেছিলেন পেসার হাসান মাহমুদ। ক্রিকেটের ভাষায় যে আউটের নাম মানকাডিং।
মানকাড আউট হলো একজন বোলারের বল ডেলিভারি দেওয়ার আগ মুহূর্তে নন স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা ব্যাটসম্যান কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলে বোলার যদি স্টাম্প ভেঙে দেন তাহলে তিনি আউট হিসেবে ঘোষিত হবেন। আর একেই বলে মানকাড আউট। ব্যাটসম্যানরা সাধারণত দ্রুত সিঙ্গেল নেওয়ার সুবিধার্থে ক্রিজ ছেড়ে বাইরে চলে আসেন। তেমনটা করতে গিয়েই আউট হয়েছিলেন সোধি।
ইনিংসের ৪৬তম ওভারে বোলিং করতে এসেছিলেন হাসান। চতুর্থ বল করার আগে থেমে যান তিনি। দেখেন সোধি ক্রিজ ছেড়ে বাইরে। তিনি ভেঙে দেন স্টাম্প। এরপর আবেদনও করেন। অন ফিল্ড আম্পায়ার মারাই এরাসমাস যান টেলিভিশন আম্পায়ারের কাছে। রিপ্লেতে দেখা যায়, স্টাম্প ভাঙার সময় ক্রিজের বাইরেই ছিলেন সে সময় ২৫ বলে ১৭ রানে অপরাজিত থাকা সোধি।
আউট হওয়ার পর হাসতে হাসতে মাঠ ছাড়তে থাকেন সোধি। কিছুক্ষণ পর দেখা যায়, সোধি ফিরে আসছেন আবার। বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাসকে আম্পায়ার এরাসমাসের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় এর আগে, এরপরই আম্পায়ার সোধিকে ফিরে আসার সংকেত দেন। এর অর্থ, আবেদন তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এসব ক্ষেত্রে চাইলে দলের অধিনায়ক আবেদন তুলে নিতে পারেন।
ফিরে আসা সোধির মুখের তখন চওড়া হাসি। জড়িয়ে ধরেন পেসার হাসান মাহমুদকে। শেরেবাংলার দর্শকেরাও করতালিতে তাকে স্বাগত জানান আবার। ক্রিকেটে ‘মানকাডিং’ বলে পরিচিত এ আউট নিয়ে বিতর্ক হয় মাঝেমধ্যেই। অনেকেই এটিকে ‘ক্রিকেটের চেতনাবিরোধী’ বলেন। যদিও এমন আউটকে ক্রিকেটের আইনে বেশ কিছুদিন আগেই ‘স্পিরিট অব ক্রিকেট’ থেকে ‘রান আউটের’ আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। তার মানে, এমন আউট এখন বৈধ, কোনো চেতনাবিরোধীর আওতায় তা এখন পড়ে না।
এমন আউটের ইতিহাস আজ থেকে ৭৬ বছর আগে। ভারতীয় বাঁহাতি স্পিনার ভিনু মানকড় সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই আউটের প্রচলন করেন। তার নামের শেষাংশ ‘মানকড়’ বলেই এই ‘মানকাডিং’ নামকরণের উৎপত্তি। ১৯৪৭ সালে সিডনি টেস্টে বল ছোঁড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ভিনু মানকড় খেয়াল করলেন যে, নন স্ট্রাইকে থাকা ব্যাটসম্যান বিল ব্রাউন ক্রিজ থেকে কিছুটা বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি বল ডেলিভারি না করে সোজা স্টাম্প ভেঙে দেন এবং আপিল করেন রান আউটের। যেহেতু ক্রিকেটের আইন অনুযায়ী, এভাবে আউট করার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ বৈধ তাই মানকড়ের আপিলে সাড়া না দিয়ে কোনো উপায় ছিল না আম্পায়ারের। আর এই আউটের মধ্য দিয়েই মানকাডেড হওয়া ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে রেকর্ডবুকে ঢুকে যান বিল ব্রাউন।
সে সময় অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়ায় ব্যাপক শোরগোল ফেলে দিয়েছিল এই মানকাডিং আউট। ক্রিকেট মহলে এই বিষয়টি তুমুল সমালোচিতও হয়েছিল। কারণ অনেকেই এটিকে ক্রিকেটীয় চেতনার পরিপন্থি বলে মনে করেন। আবার অনেকে উপস্থিত বুদ্ধির বেশ তারিফও করেন। তাদের যুক্তি ছিল, একজন ব্যাটসম্যান যদি কয়েক ধাপ সামনে এগিয়ে থেকে ‘অনৈতিক’ সুবিধা ভোগ করতে পারেন তো একজন বোলার কেন তাকে আউট করার সুযোগ নিতে পারবেন না। তবে টেকনিক্যালি এই মানকাডিং আসলে রান আউট ছাড়া কিছুই নয়।
এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে এমন আউটের ঘটনা আছে ৫টি। সর্বশেষ পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে শাদাব খানকে এভাবে আউট করেছিলেন আফগানিস্তান বোলার ফজলহক ফারুকি। মিরপুরে আজ ষষ্ঠ ঘটনাটি দেখা গিয়েছিল প্রায়, শেষ পর্যন্ত সেটি হলো না।
মন্তব্য করুন