ভারতে অনুষ্ঠিত এবারের বিশ্বকাপে একটি অলিখিত নিয়ম দেখা গেছে-যাই হোক না কেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে আগে ব্যাটিং করতে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এর পিছনে যথেষ্ঠ কারণ আছে এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত আগে ব্যাট করে কোন ম্যাচ হারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। আজ দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ম্যাচ নিউজিল্যান্ড টস জিতেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে সেই ভুলটাই করে বসল। ডি কক-ভান ডুসেনদের প্রথমে ব্যাট করতে দিয়ে ৩৫৬ রানের পাহাড়ে চাপা পড়ে কিউইরা টানা তৃতীয় পরাজয়ের মুখ দেখল ।
পুনেতে বিশ্বকাপের ৩২তম ম্যাচে বুধবার (১ নভেম্বর) নিউজিল্যান্ডকে ১৯০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে এই বিশ্বকাপে হঠাৎ করেই ফেভারিটের কাতারে চলে আসা দক্ষিণ আফ্রিকা। এ জয়ে ৭ ম্যাচ শেষে ১২ পয়েন্ট নিয়ে স্বাগতিক ভারতকে পেছনে ফেলে টেবিলের শীর্ষে উঠে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৬ ম্যাচে সমান সংখ্যক পয়েন্ট নিয়েও নেট রান রেটে পিছিয়ে থাকায় দুইয়ে নেমে গেছে ভারত। অন্যদিকে ৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে নেমে গেছে নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার পর প্রোটিয়াদের বিপক্ষে হারে কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের সেমিফাইনালের পথ।
অন্যসব দলের মতো টস জিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোয় আফসোস হবার কথা কিউই অধিনায়ক টম লাথামের। চলতি বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের আগে ব্যাটিংয়ে পাঠানো মানেই তো রান বন্যার সুযোগ করে দেয়া। আজও তা-ই হয়েছে। ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে থাকা কুইন্টন ডি কক ও রাসি ফন ডার ডুসেনের জোড়া সেঞ্চুরিতে রানের পাহাড়ে চড়েছে প্রোটিয়ারা। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৫৭ রান সংগ্রহ করে প্রোটিয়ারা।
বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে এদিন মাত্র ৮ রানেই ডেভন কনওয়েকে হারায় নিউজিল্যান্ড। ৬ বলে মাত্র ২ রান আসে এ ওপেনারের ব্যাট থেকে। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেও প্রোটিয়া বোলারদের তোপে ব্যর্থ হন উইল ইয়াং ও রাচিন রবীন্দ্র। দলীয় ৪৫ রানে রবীন্দ্র আর ৫৬ রানে বিদায় নেন ইয়াং। মার্কো জানসেনের শিকার রাচিন ১৬ বলে ৯ আর জেরাল্ড কোয়েতজির শিকার ইয়াং ৩৭ বলে ৩৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন।
দুজনের বিদায়ের পর ধস নামে কিউইদের ব্যাটিং শিবিরে। অধিনায়ক টম লাথাম দলীয় ৬৭ রানে ব্যক্তিগত ৪ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন। আর ড্যারিল মিচেল দলীয় ৯০ রানে ব্যক্তিগত ২৪ রানের ইনিংস খেলে কেশভ মহারাজের বলে সাজঘরে ফেরেন। এরপর গ্লেন ফিলিপস একপ্রান্ত আগলে রেখে দলের হাল ধরার চেষ্টা করলেও মিচেল স্যান্টনার, জেমস নিশামরা সঙ্গ দিতে পারেননি তাকে। দলীয় ১৩৩ রানের মধ্যে নবম উইকেটটি হারিয়ে ফেললে কিছুটা মারকুটে হয়ে ওঠেন ফিলিপস। দ্রুত তুলে নেন ব্যক্তিগত ফিফটি। শেষ পর্যন্ত ৪ ছক্কা ও ৪ চারের মারে ৫০ বলে ৬০ রান করে ৩৬তম ওভারে আউট হন তিনি। তাতে ১৬৭ রানে থামে কিউইদের ইনিংস।
প্রোটিয়াদের হয়ে ৪৬ রান খরচ করে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট তুলে নেন কেশভ মহারাজ। ৩১ রান খরচায় ৩ উইকেট তুলে নেন জানসেন। ২ উইকেট তুলে নেন জেরাল্ড কোয়েতজি ।
অপরদিকে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ৩৮ রান সংগ্রহ করে প্রোটিয়ারা। ২৪ রানে সাজঘরে ফিরে যান অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। দ্বিতীয় উইকেটে ডুসেনকে নিয়ে ২০০ রানের বিশাল জুটি গড়েন আরেক ওপেনার কুইন্টন ডি কক। ২৩৮ রানের মাথায় ১১৪ রানে আউট হন প্রোটিয়া উইকেটকিপার। এটা নিয়ে এবারের প্রতিযোগিতায় চতুর্থ সেঞ্চুরি হাঁকালেন ডি কক। ১১৬ বলে ১১৪ রানের ইনিংসে ১০টি চার ও ৩টি ছক্কা মারেন প্রোটিয়া এই ওপেনার ।
৩১৬ রানের মাথায় ব্যাক্তিগত ১৩৩ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে আউটি হন ডুসেন। ১১৮ বলের মোকাবিলায় ৯টি চার ৫টি ছক্কা হাঁকান এই ব্যাটার। ডেভিড মিলার নিজের কিলার মিলার রূপে আবির্ভূত হয়ে মাত্র ৩০ বলে তুলে নেন নিজের ক্যারিয়ারের ২৪তম ফিফটি। ২ চার ও ৪ ছক্কায় ৫৩ রানে ঝোড়ো ইনিংস খেলেন এই প্রোটিয়া ব্যাটার। শেষ দিকে ক্লাসেন ৭ বলে ১৫ এবং মার্করাম ১ বলে ৬ রানে অপরাজিত থাকেন। তাদের ঝেড়ো ব্যার্টিংয়ে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৫৭ রানের সংগ্রহ পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। নিউজিল্যান্ডের হয়ে সাউদি সর্বোচ্চ ২টি উইকেট শিকার করেন।
মন্তব্য করুন