ভারত-নেদারল্যান্ডসের ম্যাচ দিয়ে শেষ হয়েছে বিশ্বকাপের ত্রয়োদশ আসরের লিগ পর্ব। ৫ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর ৪৫ ম্যাচ শেষে বিশ্বকাপ এসে ঠেকেছে চার দলে। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের একমাত্র অপরাজিত দল স্বাগতিক ভারতের সঙ্গে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড। এশিয়ার মাটিতে বিশ্বকাপ হলেও দাপট দেখিয়েছে এশিয়ার বাইরের দলগুলোই। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও অনেকেই এবারের বিশ্বকাপে নজর কেড়েছেন। প্রথম পর্ব শেষে তাই এবারের বিশ্বকাপে নজর কাড়া সেরা পারফরমারদের নিয়ে একাদশ সাজিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ক্রিকেট ডট কম ডট এইউ।
চলতি বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফর্মে আছে পুরো ভারতীয় দল। রান সংগ্রাহকের তালিকায় প্রথম নামটিও এক ভারতীয়র। বিরাট কোহলি তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে রাঙিয়েছেন বিশ্বকাপ। তাই তাকেই অধিনায়ক করে ক্রিকেট ডট কম ডট এইউ একাদশ সাজিয়েছে। তিনি ছাড়াও আরও তিন ভারতীয় জায়গা পেয়েছেন সেরা একাদশে। ভারত বাদে এশিয়ার অন্য কোনো দেশের খেলোয়াড় এই একাদশে জায়গা করে নিতে পারেনি। তবে দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে জায়গা পেয়েছেন শ্রীলঙ্কার দিলশান মাদুশঙ্কা। একাদশে প্রতিটি খেলোয়াড়ের জায়গা পাওয়ার ব্যাখ্যাও দিয়েছে সংংবাদমাধ্যমটি।
১. কুইন্টন ডি কক (উইকেটকিপার, দক্ষিণ আফ্রিকা)
বিশ্বকাপের এই একাদশে তকে বাদে অন্য কাউকে রাখলে অবিচার করা হতো। প্রথম পর্বের ৯ ম্যাচে চারটি শতক হাঁকিয়েছেন যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৭৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। বাকি তিনটি শতক এসেছে শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ৫৯১ রান নিয়ে টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক ডি কক। দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো খেলোয়াড়ের বিশ্বকাপের এক আসরে এটাই সর্বোচ্চ রান। এক বিশ্বকাপে শচীন টেন্ডুলকারের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড থেকে ৮২ রান দূরে তিনি। ২০০৩ বিশ্বকাপে ৬৭৩ রান করেছিলেন টেন্ডুলকার।
২. ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)
ডি ককের ওপেনিং সঙ্গী হিসেবে আছেন অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টানা দুটি শতক করেছেন অস্ট্রেলিয়ার এ ওপেনার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮১ রানে আউট না হয়ে গেলে টানা তিনটি শতকও হতে পারত তার। শুরুতেই তার মারমুখি ব্যাটিংয় এই বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লেতে রান তোলার দিক থেকে অস্ট্রেলিয়া সেরা দল করেছে। সব মিলিয়ে এই বিশ্বকাপে করেছেন ৪৯৯ রান।
৩. রাচিন রবীন্দ্র (নিউজিল্যান্ড)
এবারের বিশ্বকাপের সম্ভবত সবচেয়ে বড় চমকের নাম কিউই ব্যাটার রাচিন রবীন্দ্র। ২৩ বছর বয়সী অলরাউন্ডার বিশ্বকাপ অভিষেকেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে এসেই তিনটি শতক হাঁকিয়ে ফেলেছেন। বাকি দুটি শতক পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হাঁকিয়েলেন তিনি। এ ছাড়া ভারতের বিপক্ষেও ৭৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৫৬৫ রান করেছেন রবীন্দ্র। এ ছাড়া বাঁহাতি স্পিনে নিয়েছেন ৫ উইকেট।
৪. বিরাট কোহলি (ভারত), অধিনায়ক
দুটি শতক, পাঁচটি অর্ধশতক। এবারের বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দেই আছেন বিরাট কোহলি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বশেষ শতক দিয়ে তিনি ছুঁয়েছেন ওয়ানডেতে শচীন টেন্ডুলকারের সর্বোচ্চ শতকের রেকর্ড (৪৯)। ৯৯ গড়ে ৫৯৪ রান তুলে এখন পর্যন্ত এবারের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক কোহলি। বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব না করলেও সেরা পারফরমারদের দলের নেতৃত্ব তার হাতেই দেওয়া হয়েছে।
৫. এইডেন মার্করাম (দক্ষিণ আফ্রিকা)
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মারকুটে এক শতক দিয়ে টুর্নামেন্ট নিজের আগমন জানান দেন এইডেন মার্করাম। ৪৯ বলে করা যে শতকে তিনি ভেঙেছেন বিশ্বকাপে দ্রুততম শতকের রেকর্ড। পরে অবশ্য গ্লেন ম্যাক্সওয়েল সেটা ভেঙে দেন। ডেথ ওভারে দারুণ কার্যকর মার্করাম, শেষ ১০ ওভারে তিনি প্রতি ১০০ বলে তুলেছেন ২৪৪.৪৪ রান। প্রতি ২.৪ বলে মেরেছেন বাউন্ডারি।
৬. গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (অস্ট্রেলিয়া)
ঘরের মাঠে ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জয়ের পেছনে বড় অবদান ছিল ম্যাক্সওয়েলের। চলতি বিশ্বকাপেও দারুণ ছন্দে তিনি। ইনজুরির কারণে দুটি ম্যাচ খেলতে না পারলেও ৩৯৭ রান করে ফেলেছেন। হাঁকিয়েছেন দুটি শতক। প্রথমটি নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৪০ বলে, যাতে ভেঙে গেছে দিন কয়েক আগে মার্করামের গড়া বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরেরটিকে তো ওয়ানডে ইতিহাসেরই সেরা ইনিংস বলে মনে করছেন অনেকেই। সেদিন ৯১ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর পায়ে ক্র্যাম্প নিয়ে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে জয় এনে দিয়েছিলেন ম্যাডম্যাক্স। এ ছাড়া তাএ অফস্পিনেও প্রতিপক্ষের মাথাব্যথা বাড়িয়েছেন। শিকার করেছেন ৫ উইকেট।
৭. মার্কো জানসেন (দক্ষিণ আফ্রিকা)
এই বিশ্বকাপে পেস বোলিং অলরাউন্ডারের অভাব অনেক দলই অনুভব করছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সেই অভাব টের পেতে দিচ্ছেন না মার্কো ইয়ানসেন। ব্যাট হাতে ৭ ইনিংসে করেছেন ১৫৭ রান। আর বল হাতে ৮ ইনিংসে নিয়েছেন ১৭ উইকেট।
৮. রবীন্দ্র জাদেজা (ভারত)
বাঁহাতি স্পিনে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের হিমশিম অবস্থায় ফেলে দিচ্ছেন রবীন্দ্র জাদেজা। ১৮.২৫ গড়ে নিয়েছেন ১৬ উইকেট। ব্যাট হাতেও প্রয়োজনের সময় জ্বলে উঠতে পারেন জাদেজা। এই বিশ্বকাপে ৪ ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন। ৫৫.৫০ গড়ে তুলেছেন ১১১ রান।
৯. মোহাম্মদ শামি (ভারত)
প্রথম চার ম্যাচে ভারতের একাদশে জায়গা পাননি মোহাম্মদ শামি। হার্দিক পান্ডিয়ার চোটের কারণে দলে সুযোগ পেয়েই দেখিয়েছেন ভারত কি বসিয়ে রেখেছিল। ৫ ম্যাচে ৯.৫৬ গড়ে এখন পর্যন্ত ১৬ উইকেট নিয়েছেন ভারতের এ পেসার। রান দেওয়াতেও বেশ কৃপণ তিনি (ইকোনমি ৪.৭৮)।
১০. অ্যাডাম জাম্পা (অস্ট্রেলিয়া)
বিশ্বকাপে তাকে লড়াই করতে হচ্ছে শারীরিক সমস্যার সঙ্গে। পিঠের সমস্যা নিয়েও অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার বোলিংকে বলতে গেলে একাই টানছেন অস্ট্রেলিয়ান এই লেগ স্পিনার। ১৮.৯১ গড়ে ২২ উইকেট নিয়ে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি অ্যাডাম জাম্পা।
১১. জাসপ্রীত বুমরাহ (ভারত)
৯ ম্যাচে ১৭ উইকেট তার। নতুন বলে দলকে যেমন ব্রেকথ্রু এনে দিচ্ছেন, তেমনি ডেথ ওভারেও দুর্দান্ত বোলিং করছেন যশপ্রীত বুমরা। সময়ের অন্যতম সেরা পেস বোলার রানও দিচ্ছেন হিসাব করে। এই বিশ্বকাপে তার ইকোনমি মাত্র ৩.৬৫। পাওয়ার প্লেতে তো আরও কম—২.৯৫!
১২. দিলশান মাদুশঙ্কা (শ্রীলঙ্কা)
দল সেমিফাইনালে ওঠেনি। কিন্তু মাদুশঙ্কা বল হাতে ছিলেন দুর্দান্ত। ২৫ গড়ে ৯ ম্যাচে নিয়েছেন ২১ উইকেট। তাকে তাই দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে রাখা হয়েছে দলে।
মন্তব্য করুন