২০২৩ সালটি স্বপ্নের মতো কেটেছে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি দিয়ে বছর শুরু করার পর ইংল্যান্ডের মাটিতে অ্যাশেজ ধরে রাখা তারপর নিজেদের ষষ্ঠ ওয়ানডে বিশ্বকাপ শিরোপা জয় মনে হয় না প্যাট কামিন্সের নিজেও এই বছর থেকে আর কিছু চাওয়ার ছিল। তবে কামিন্সের তখনো ক্রিকেটকে দেওয়ার বাকি ছিল। আজ অজি ক্যাপ্টেনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে বক্সিং ডে টেস্টে অস্ট্রেলিয়া জয় পেয়েছে ৭৯ রানে। আর এই জয়ে ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ইতিমধ্যে ২-০ তে জিতে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়া জয় পেলেও বক্সিং ডে টেস্টের চতুর্থ দিনে মেলবোর্নে রোমাঞ্চ ছিল। চতুর্থ ইনিংসে ৩১৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে বিপর্যয়ে পড়লেও সালমান–রিজওয়ানের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে একসময় মনে হচ্ছিল পাকিস্তান ম্যাচটি জিতেই যাবে। জয়ের জন্য পাকিস্তানের যখন একশর কম রান দরকার তখন কামিন্সের দারুণ এক ডেলিভারিতে রিজওয়ানের বিতর্কিত আউটের পর মুহূর্তেই যেন ম্যাচের চিত্রপট পাল্টে যায়। রিজওয়ানের বিদায়ের পর পাকিস্তান শেষ পাঁচ উইকেট হারিয়েছে মাত্র ১৮ রানের ব্যবধানে।
পার্থ টেস্টে ভরাডুবির পর মেলবোর্নেও ৭৯ রানের হারে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলা সর্বশেষ ১৬ টেস্টে জয়হীন রইল পাকিস্তান। অন্যদিকে, এক ম্যাচ হাতে রেখেই তিন টেস্টের সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। দুই ইনিংস মিলিয়ে দশ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স।
অস্ট্রেলিয়াকে ৩১৮ রানে থামিয়ে দেওয়ার পর নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৬৪ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। ৫৪ রানে এগিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ছিল ৬ উইকেটে ১৮৭ রান। অবশ্য আজ চতুর্থ দিনে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি স্বাগতিকরা। অজি উইকেট কিপার অ্যালেক্স ক্যারির ৫৩ রানে ভর করে ২৬২ রান পর্যন্ত যায় স্বাগতিকরা।
জয়ের জন্য ৩১৭ রানের বড় লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই আব্দুল্লাহ শফিককে হারায় শান মাসুদের দল। এরপর ৪৯ রানের মাথায় আরেক ওপেনার ইমাম উল হক আউটের পর দলের হাল ধরেন শান মাসুদ ও বাবর আজম। দুইজন মিলে দ্রুতগতিতে গড়েন ৫১ রানের জুটি। তবে ৬০ রান করে কামিন্সের শিকার হন পাক অধিনায়ক মাসুদ। এরপর ব্যক্তিগত পঞ্চাশের দোড়গোড়ায় গিয়ে বিদায় নেন বাবর আজমও।
ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে আগা সালমানকে নিয়ে ভালোই ছন্দে ছিলেন রিজওয়ান। একসময় পাকিস্তানের জয়টাও মনে হচ্ছিল হাতের নাগালে। জয়ের জন্য যখন প্রয়োজন মাত্র ৯৮ রান, রিজওয়ানকে ফিরিয়ে ব্রেকথ্রু এনে দেন কামিন্স। শর্ট বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন রিজওয়ান। অস্ট্রেলিয়ানদের আবেদনে ফিল্ড আম্পায়ার এটিকে আউট দেননি, ব্যাট বা গ্লাভসে লাগেনি বলে আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল রিজওয়ানকেও। তবে অস্ট্রেলিয়া রিভিউ নিলে তৃতীয় আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ তাকে আউট দেন।
রিভিউতে দেখা যায়, বল রিজওয়ানের রিস্ট ব্যান্ডের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় স্নিকোতে স্পাইক ধরা পড়ে। তবে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট দেখা গেছে পাকিস্তানি উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যানকে। আউট হওয়ার পরও ক্রিজে বেশকিছু সময় দাঁড়িয়ে ছিলেন রিজওয়ান। রিজওয়ানের বিদায়ের পর আগা সালমান ব্যক্তিগত ফিফটি পূর্ণ করতে পারলেও জয়ের জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।
স্টার্ক আর কামিন্স ঝড়ে উড়ে যায় পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন-আপ। শেষ দিকে মাত্র ১৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৩৭ রানে থেমে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৯ রানের ইনিংস অধিনায়ক শান মাসুদের ৬০। ৫ উইকেট নেন কামিন্স, টানা দুই বলে শেষ দুই উইকেট তোলা মিচেল স্টার্কের শিকার ৪ উইকেট।
মন্তব্য করুন