বয়স ৪০ হওয়ায় ফুটবলীয় ক্ষমতা কিছুটা কমেছে বটে, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কিন্তু নিজের জায়গায় এখনো অনন্য—টানা তৃতীয়বারের মতো বিশ্বের সর্বোচ্চ বেতনভোগী ক্রীড়াবিদ নির্বাচিত হয়েছেন পর্তুগিজ তারকা।
ফোর্বস ম্যাগাজিন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রীড়াবিদদের আয়ের ওপর বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সে প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী টানা তৃতীয়বারের মতো রোনালদো এ তালিকার শীর্ষে রয়েছেন। পর্তুগালের ফুটবলার বর্তমানে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আল-নাসরের হয়ে খেলছেন। তিনি গত ১২ মাসে প্রায় ২৭৫ মিলিয়ন ডলার আয় করেছেন। এ আয়ের মাধ্যমে রোনালদো গোল্ডেন স্টেট ওয়ারিয়র্সের স্টেফ কারি (১৫৬ মিলিয়ন ডলার) এবং হেভিওয়েট বক্সার টাইসন ফিউরিকে (১৪৬ মিলিয়ন ডলার) ছাড়িয়ে গেছেন। আর্জেন্টিনা ও ইন্টার মিয়ামির তারকা লিওনেল মেসি ১৩৫ মিলিয়ন ডলার আয় নিয়ে তালিকার পঞ্চম স্থানে আছেন। আর্জেন্টাইন তারকার আগের অবস্থানে আছেন ডলাস কাউবয়সের কোয়ার্টারব্যাক ড্যাক প্রেসকট।
সৌদি প্রো লিগে যোগদান রোনালদোকে বিশ্বের সর্বোচ্চ বেতনভোগী ক্রীড়াবিদের স্থান ধরে রাখতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড এখন নতুন রেকর্ড গড়ার কাছাকাছি আছেন। ফোর্বসের মতে, মাঠের পারফরম্যান্স থেকে ২২৫ মিলিয়ন ডলার এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রম থেকে আরও ৫০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছেন রোনালদো। বক্সার ফ্লয়েড মেওয়েদার ২০১৫ সালে ৩০০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০১৮ সালে ২৮৫ মিলিয়ন আয় করেছিলেন।
রোনালদো সর্বোচ্চ বেতনভোগী ক্রীড়াবিদদের তালিকার অন্যদের সঙ্গে ব্যবধান আরও বাড়িয়েছেন। গত ১২ মাসে তিনি অন্য যে কোনো ক্রীড়াবিদের চেয়ে প্রায় ১১৯ মিলিয়ন ডলার বেশি আয় করেছেন। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে রোনালদোকে ধরা কঠিন হবে। লিওনেল মেসির বাণিজ্যিক আয় রোনালদোর চেয়ে বেশি। কিন্তু সার্বিকভাবে এখনো দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছেন আর্জেন্টাইন ফুটবলার।
প্রিমিয়ার লিগ বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা হিসেবে বিবেচিত। ফোর্বসের সর্বোচ্চ বেতনভোগী ক্রীড়াবিদদের তালিকা কিন্তু ‘অন্যতম জনপ্রিয়’ খেতাবের সঙ্গে বড্ড বেমানান। ম্যাগাজিনটির ২০২৫ সালের তালিকায় ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগের মাত্র একজন খেলোয়াড় রয়েছেন। তিনি ম্যানচেস্টার সিটির স্ট্রাইকার আর্লিং হলান্ড। ৬২ মিলিয়ন আয় নিয়ে তালিকার ৩৪তম স্থানে আছেন এ নরওয়েজিয়ান। ২৫ বছর বা তার কম বয়সী ক্রীড়াবিদদের তালিকার চতুর্থ স্থানে আছেন আর্লিং হলান্ড।
গত বছর ৩৮তম স্থানে থাকা লিভারপুলের মোহামেদ সালাহ এবারের তালিকার শীর্ষ ৫০-এ জায়গা পাননি। এমনকি ম্যানচেস্টার সিটির মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনারও স্থান হয়নি তালিকায়। যিনি সর্বশেষ তালিকার শীর্ষ ১০-এ ছিলেন। অন্যান্য ইউরোপীয় লিগের মধ্যে শুধু লা লিগার তারকারা এ তালিকায় স্থান পেয়েছেন। রিয়াল মাদ্রিদের কিলিয়ান এমবাপ্পে (৯০ মিলিয়ন ডলার) ১৬তম স্থানে এবং ভিনিসিয়ুস জুনিয়র (৫৫ মিলিয়ন ডলার) ৪৬তম স্থানে রয়েছেন।
জন রাহম গত বছর সৌদি-সমর্থিত এলআইভি গলফ ট্যুরে যোগদানের পর আবারও বিশ্বের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী গলফারের স্বীকৃতি পেয়েছেন। ক্রীড়া ক্ষেত্রে দেশটির ক্রমবর্ধমান প্রভাব অন্যান্য ক্ষেত্রেও লক্ষণীয়। ফোর্বসের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত শীর্ষ আট ফুটবলারের মধ্যে অর্ধেক গত ১২ মাসে সৌদি প্রো লিগে খেলেছেন। প্রো লিগে রোনালদোর ছাড়াও আল-ইত্তিহাদের করিম বেনজেমা (১০৪ মিলিয়ন ডলার) এবং আল-নাসরের সাদিও মানে (৫৪ মিলিয়ন ডলার) বিপুল পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। তালিকায় ছিলেন ব্রাজিলের নেইমার। ইনজুরিতে জর্জরিত দুটি বছর আল-হিলালে কাটানোর পর শৈশবের ক্লাব সান্তোসে ফিরেছেন। ৩৩ বছর বয়সী এ ফুটবলার ৭৬ মিলিয়ন আয় করতেন।
শীর্ষ ৫০ ক্রীড়াবিদের মধ্যে ফুটবলার আটজন; যার পাঁচজনের বয়স ৩৩ বা তার বেশি। এ তথ্যই বলছে ব্র্যান্ড এবং খ্যাতি তৈরি করতে সময়ের প্রয়োজন। এমবাপ্পে ১৯ বছর বয়সে ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জেতার পর থেকেই বিশাল আয়ের পথ চওড়া করেছেন। বার্সেলোনার লামিনে ইয়ামাল যদি বর্তমান গতিপথ ধরে রাখেন, আগামী বছরগুলোতে তার আয়ও বিশাল অঙ্কে পৌঁছাবে।
মন্তব্য করুন