

ইউরোপীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা এবার পড়েছে এক নতুন আইনি জটিলতায়। চিলির একটি কনসালট্যান্সি প্রতিষ্ঠান ম্যাচভিশন (MatchVision) সংস্থাটির বিরুদ্ধে ২০ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ১৭.৫ মিলিয়ন পাউন্ড) ক্ষতিপূরণের মামলা করেছে, অভিযোগ— চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নতুন “লিগ ফেজ” ফরম্যাটটি উয়েফা চুরি করেছে তাদের কাছ থেকে।
এই মামলা শুরু হয় চলতি বছরের এপ্রিল মাসে, স্পেনের একটি বাণিজ্যিক আদালতে। পরে সেপ্টেম্বর মাসে মামলাটি স্থানান্তর করা হয় সুইজারল্যান্ডের লসান শহরের আদালতে, যেখানে উয়েফার সদর দপ্তর অবস্থিত। এখন পর্যন্ত উয়েফা আনুষ্ঠানিকভাবে নোটিশ পায়নি, তবে নোটিশ পাওয়ার পর ২০ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের জবাব দিতে হবে।
চিলিয়ান প্রতিষ্ঠান ম্যাচভিশনের প্রতিষ্ঠাতা লিয়ান্দ্রো শারা দাবি করেছেন, তিনি ২০০৬ সালে এই ফরম্যাটের মূল কাঠামো— অর্থাৎ “পটস (pots)” পদ্ধতি— কপিরাইট করেছেন। ২০১৩ সালে তিনি উয়েফাকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেছিলেন, পরবর্তীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনফারেন্সেও ধারণাটি তুলে ধরেন।
এই “পটস” মডেলেই এখন চলছে উয়েফার নতুন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফরম্যাট— যেখানে ৩২ দলের বদলে এখন ৩৬ দল একক লিগ টেবিলে, প্রতিটি দল খেলছে ৮টি ভিন্ন দলের বিপক্ষে— চারটি ঘরে, চারটি বাইরে।
এই পদ্ধতিকে উয়েফা বলছে “সুইস মডেল”, যা মূলত দাবা টুর্নামেন্টের ফরম্যাট থেকে অনুপ্রাণিত। কিন্তু শারার দাবি, এটাই তার উদ্ভাবন, যা উয়েফা এখন “নিজস্ব ফরম্যাট” বলে চালাতে চাইছে।
শারা বলেন, “আমি গণিতভিত্তিক অ্যালগরিদমের উদ্ভাবক, যা বহু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে খেলাধুলায়। এই অ্যালগরিদমই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নতুন ফরম্যাটের ভিত্তি। উয়েফা প্রকাশ্যে এই ধারণা ব্যবহার করেছে, অথচ এর মূল স্রষ্টাকে আড়াল করার চেষ্টা করছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, তার ফরম্যাট ব্যবহারের ফলে নতুন চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোলসংখ্যা বেড়েছে, প্রতিযোগিতা হয়েছে আরও রোমাঞ্চকর— “কিন্তু উয়েফা ইচ্ছাকৃতভাবে নাম পাল্টে আমার কৃতিত্ব মুছে ফেলতে চাইছে,” বলেন তিনি।
ম্যাচভিশন আদালতের কাছে ২০,০০৫,৫৫১ ইউরো ক্ষতিপূরণ এবং শারার ব্যক্তিগতভাবে আরও ২ লাখ ইউরো দাবি করেছে। তারা গত মৌসুম, বর্তমান মৌসুম ও আসন্ন মৌসুমের জন্যও সুদসহ অর্থ দাবি করেছে, যা ইঙ্গিত করে— তারা দ্রুত সমঝোতার আশা করছে না।
শারা সতর্ক করে বলেছেন, “যে কেউ এই বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ লঙ্ঘনে সহায়তা করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও মামলা বিস্তৃত করা হবে।”
উয়েফা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য দেয়নি। তবে গত বছর শারার পাঠানো আইনি নোটিশের জবাবে সংস্থার এক মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, ‘ম্যাচভিশনের দাবিগুলো ভিত্তিহীন। এরকম দাবি আমরা আগেও দেখেছি। উয়েফা দৃঢ়ভাবে নিজেদের অবস্থান রক্ষা করবে।’
২০২১ সালের ইউরোপিয়ান সুপার লিগ বিতর্কের পরই উয়েফা দ্রুত তাদের প্রতিযোগিতার ফরম্যাট বদলানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্ত থেকেই জন্ম নেয় বর্তমান লিগ-ফেজ মডেল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, নতুনত্বের গর্বে উয়েফা হয়তো জড়িয়ে পড়েছে আরেকটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি সংকটে, যার মূল্য দিতে হতে পারে কোটি কোটি ইউরো।
মন্তব্য করুন