

ফুটবল মাঠে প্রতিদিনই দেখা যায় আনন্দ, উত্তেজনা, জয়ের উল্লাস। কিন্তু সোমবার সার্বিয়ার এক স্টেডিয়ামে সেই ফুটবল মাঠই হয়ে উঠেছিল এক নিঃশব্দ শোকস্তম্ভে। ম্যাচ চলাকালীন হঠাৎই লুটিয়ে পড়লেন এফকে রাদনিজকি ১৯২৩-এর কোচ ম্লাদেন জিজোভিচ। কয়েক মুহূর্ত পরই হাসপাতালে নেওয়ার পথে থেমে যায় তার জীবনযাত্রা। খবরটা পৌঁছাতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন দুই দলের খেলোয়াড়রা— মাঠজুড়ে নেমে আসে গভীর শোক।
সার্বিয়ান সুপারলিগার সোমবারের ম্যাচে ম্লাদোস্ত লুসানির বিপক্ষে দলকে পরিচালনা করছিলেন জিজোভিচ। ম্যাচের মাঝপথেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। মাঠের পাশে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া হয়, পরে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর স্টেডিয়ামে পৌঁছায় তার মৃত্যুর খবর—অবস্থাটা বোঝার সঙ্গে সঙ্গেই খেলোয়াড়রা মাটিতে বসে পড়েন, কেউ কাঁদতে থাকেন, কেউবা বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকেন শূন্যে। এরপরই প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই ম্যাচটি বাতিল ঘোষণা করা হয়।
৪৪ বছর বয়সী এই কোচ মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই, গত ২৩ অক্টোবর দায়িত্ব নিয়েছিলেন রাদনিজকি ১৯২৩-এর প্রধান কোচ হিসেবে। তার মৃত্যুতে ক্লাবটি এক বিবৃতিতে জানায়, ‘আমরা হারালাম শুধু একজন অসাধারণ কোচকেই নয়, বরং এক মহান মানুষ, বন্ধু ও ক্রীড়াসত্তার প্রতীককে। তার জ্ঞান, উদ্যম ও মানবিকতায় তিনি আমাদের হৃদয়ে অমলিন ছাপ রেখে গেছেন।’
বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা ফুটবল ফেডারেশনও শোক প্রকাশ করে লিখেছে, ‘আমাদের ফুটবল সমাজ হারাল এক প্রকৃত পেশাদারকে। তার আকস্মিক মৃত্যু বসনিয়ান ফুটবলের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।”
খেলোয়াড়ি জীবনে জিজোভিচ ছিলেন বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা জাতীয় দলের ফুটবলার। ক্লাব পর্যায়ে খেলেছেন দেশের শীর্ষ ক্লাবগুলোতে—এইচএসকে জ্রিনস্কি মোস্তার, এফকে রাদনিক বিজেলজিনা এবং এফকে বোরাক বান্যা লুকায়। খেলার জার্সি তুলে রাখার পর নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করেছিলেন কোচিং পেশায়, দেশের ভেতর ও বাইরে একাধিক ক্লাব পরিচালনা করেছেন তিনি।
সার্বিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএসএস) জানায়, ‘তোমার ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা, মাঠে রেখে যাওয়া দাগ চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
দেশটির শীর্ষ ক্লাব রেড স্টার বেলগ্রেডও শোকবার্তা দিয়ে জানিয়েছে, ‘আমাদের গভীর সমবেদনা রইল জিজোভিচের পরিবার, সহকর্মী ও সমর্থকদের প্রতি।’
জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ফুটবলের মাঝেই ছিলেন ম্লাদেন জিজোভিচ। ঠিক যেন মাঠই হয়ে উঠেছিল তার জীবনের মঞ্চ— যেখানেই তিনি থেমে গেলেন, কিন্তু রেখে গেলেন এক অবিনশ্বর স্মৃতি, এক অনন্ত শূন্যতা।
মন্তব্য করুন