ইসলামিক দেশ তাই আগ্রহের মূলে মুসলিম ফুটবলাররা। পেশাদার ফুটবলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে সৌদি আরব। পরিবর্তিত হাওয়ায় অর্থের ঝনঝনানির সঙ্গে ধর্মের যোগসূত্রতাও কাজ করছে ইউরোপ আর আফ্রিকান ফুটবলারদের সৌদির ক্লাবগুলোতে যোগ দেওয়ার পেছনে।
এই যেমন একদিনে চেলসি ছেড়ে সৌদি প্রো লিগে যোগ দিয়েছেন চার মুসলিম ফুটবলার। তারা হলেন—এনগোলো কান্তে, হাকিম জিয়েচ, কালিদু কুলিবালি ও এডুয়ার্ড মেন্ডি। এ যেন দলে দলে সৌদি লিগে ভিড়ছেন মুসলিম ফুটবলাররা। এখন পর্যন্ত এ বছর সৌদি ক্লাবে যোগ দেওয়া মুসলিম ফুটবলারের সংখ্যা পাঁচে গিয়ে ঠেকেছে।
দলবদলের মৌসুম শেষ হওয়ার আগে সংখ্যাটা আরও বাড়বে, এটা প্রায় নিশ্চিত। ইউরোপ ছেড়ে কেন সৌদি প্রো লিগে যাচ্ছেন মুসলিম ফুটবলাররা এমন প্রশ্নে আল ইত্তিহাদে যোগ দেওয়ার সময় সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকা করিম বেনজেমা জানিয়েছিলেন, আমি একজন মুসলিম এবং সৌদি আরব একটা ইসলামিক দেশ। আমি সবসময় চেয়েছি এমন দেশে থাকতে। যেখানে আমার ভালো লাগে।
শুধু বেনজেমা নন ফ্রান্সের আরও এক বড় তারকা এনগোলো কান্তেকে দলে ভিড়িয়েছে লিগ চ্যাম্পিয়ন আল ইত্তিহাদ। মরোক্কান হাকিম জিয়েচকে নিয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ক্লাব আল নাসর। সেনেগালের কালিদু কুলিবালিকে দলে নিয়েছে মেসিকে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকের প্রস্তাব দেওয়া আল হিলাল। আর এডুয়ার্ড মেন্ডির দল আল আহলি।
এখানেই শেষ নয়। দলবদলের আলোচনায় আছেন আরও অনেক মুসলিম ফুটবলার। আর্সেনাল মিডফিল্ডার থমাস পার্তে, বায়ার্ন মিউনিখের সাদিও মানে, ম্যানসিটির উইঙ্গার রিয়াদ মাহরেজ, আর সেভিয়ার গোলকিপার ইয়াসিন বোনোর সঙ্গে কথা বলছে সৌদি ক্লাবগুলো।
সৌদির ক্লাবগুলোতে যাওয়ার পেছনে ধর্মের সঙ্গে বিপুল অর্থের হাতছানিও ফুটবলারদের আগ্রহী করে তোলার আরেকটি কারণ বলে মনে করছেন ফুটবলবোদ্ধারা। আর এটি সম্ভব হচ্ছে সরকারের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড থেকে ক্লাবগুলোর জন্য বিপুল অর্থ বিনিয়োগের কারণে। যার চেয়ারম্যান সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।
তবে এমন বিনিয়োগকে ভুল সিদ্ধান্ত বলছেন উয়েফা সভাপতি আলেকজান্ডার সেফেরিন। তিনি বলেন, ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে থাকা ফুটবলারদের জন্য অর্থ ব্যয় করে ভুল করছে সৌদি আরব। কারণ এখন তাদের একাডেমিতে বিনিয়োগ করা উচিত, কোচ আনা উচিত, নিজেদের ফুটবলার তৈরি করা দরকার। যেসব ফুটবলার ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে তাদের কিনে ফুটবল কাঠামোর উন্নতি করা যাবে না। এই একই ভুল করেছিল চীনও।
লিওনেল মেসি-লুকা মদ্রিচ সৌদির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও অর্থের মোহ বা ধর্মের কারণে উপেক্ষা করতে পারছেন না অনেক তারকা ফুটবলার। রোনালদোর দেখানো পথে ইউরোপ ছেড়ে আরবে পাড়ি দেওয়া ফুটবলারের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এসব দেখে ফুটবলবোদ্ধাদের মনে প্রশ্ন, উচ্চবিলাসি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিপুল বিনিয়োগের সুফল সৌদি আরব আদৌ কী পাবে?
মন্তব্য করুন