দারুণ লড়াই শেষে অতিরিক্ত মিনিটে করা এক গোলে সাফ বঙ্গবন্ধু চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হলো বাংলাদেশকে।
বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে শনিবার বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম সেমি-ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের গোলে ১-০ ব্যবধানে কুয়েতের বিপক্ষে হেরে যায় বাংলাদেশ। ম্যাচ জুড়ে দারুণ ফুটবলের পসরা মেলেও পরাজিত হতে হয় লাল-সবুজেরা।
কিন্তু ম্যাচ শেষে মাঠে খুশি ছিলেন না বাংলাদেশ দলের ফুটবলাররা। তাঁরা ভারতীয় রেফারি জন ক্রিস্টালের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেন। বাংলাদেশ দলের মিডিয়া অফিসার খালিদ মাহমুদ বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ দল রেফারিং নিয়ে খুবই অসন্তুষ্ট। তাঁর ভাষ্য, এ ম্যাচে ভারতীয় রেফারি কুয়েতের অনেক ফাউল এড়িয়ে গেছেন, আবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কঠিন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এ কারণে ফুটবলারদের ক্ষোভ রেফারির ওপর।
বাংলাদেশের রক্ষণভাগের বিস্বস্ত সৈনিক কাজী তারিক ছিলেন ক্লান্ত। বাসে ওঠার আগে শুধু বলে গেলেন, ‘কিছু বলার নেই। কিচ্ছু বলার নেই।’
জামাল ভূঁইয়া ক্ষোভ উগরে দিলেন ভারতীয় রেফারি জন ক্রিস্টালের উপর। ম্যাচে রেফারির অনেক সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে গিয়েছে বলে দাবি অধিনায়কের।
“আমরা অনুভব করেছি, ১২০ মিনিট রেফারি আমাদের বিপক্ষে ছিল। একারণে আমরা একটু রাগ করেছিলাম। কুয়েতের প্লেয়াররা অনেক ভুল করেছে, কিন্তু রেফারি ফাউল দেয়নি। এ কারণে আমাদের মনে হয়েছে রেফারি আমাদের বিপক্ষে ছিল।”
অধিনায়কের সাথে মিল রেখে একই কথা বললেন অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার তপু বর্মন। “কিছুই বলার নেই, রেফারি আমাদের শেষ করে দিয়েছে। নাথিং টু সে। নাথিং টু সে।”
উইঙ্গার মোহাম্মদ ইব্রাহিমের কণ্ঠে ঝরল অন্যরকম আক্ষেপ। কুয়েত ও লেবাননের মতো শক্তিশালী দল এবার অতিথি হিসেবে না এলে বাংলাদেশ ফাইনাল খেলত বলে মনে করেন তিনি।
“অনেক খারাপ লাগছে। আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছি। অনেক ভালো খেলেছি। জয়ের জন্য মাঠে নেমেছিলাম, সবাই জান-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করেছে। দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছু বলার নেই। রেফারি আমাদের সঙ্গে অনেক ইয়ে (ভুল সিদ্ধান্ত) করেছে। অনেক ফাউল করেছে ওরা, কিন্তু রেফারি ফাউল দেয়নি।”
“একটা বিষয় একবার ভাবুন, সাফের বাইরে এই দুইটা দল যদি না আসত, তাহলে আমাদের অবস্থান কোথায় থাকত। তবে তারা এলেও আমরা সেভাবে প্রস্তুত ছিলাম। মাঠে সেভাবে খেলছিলামও, কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য।”
তরুণ ফরোয়ার্ড ফয়সাল আহমেদ ফাহিম এক কথায় বুঝিয়ে দিলেন এই হার থেকে শিখতে চান তারা, ‘অবশ্যই এখান থেকে আমরা শিখব। ইচ্ছা তো থাকেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার, সবাই দোয়া করবেন। আমাদের চেষ্টা ছিল, আমরা সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছি, কিন্তু হয়নি।’
আরও একবারে শেষ মুহূর্তের গোলে স্বপ্ন ভঙ্গের হতাশার অনলে পুড়ছেন বিশ্বনাথ ঘোষ। বুঝে উঠতে পারছেন না তাদের সঙ্গেই কেন এমন হয়। দ্বিতীয় মিনিটে মোরসালিনের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করা, ৬০ মিনিটে রাকিবের শট ক্রসবার কাঁপিয়ে ফেরা নিয়ে আফসোসের শেষ নেই তার।
“সবসময় তো আমরা সান্ত্বনা নিয়েই দেশে ফিরি। এবার আমাদের আশা ছিল আরও বেশি। মাঠে নামার আগে, নামার পরে, এমনকি টিম ব্রিফিংয়ে আমি বারবার বলেছি, আমরা যদি পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রাখি, তাহলে আমরা কুয়েত বাধা পেরুতে পারব। কিন্তু দিনটি আসলে আমাদের ছিল না।”
মন্তব্য করুন