এবারের প্রিমিয়ার লিগ মৌসুম যে আসরের অন্যতম সফল দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কতটা খারাপ যাচ্ছে তা একবার প্রিমিয়ার লিগ টেবিলে দেখলেই বোঝা যাবে। যে দল গোল সংখ্যায় সবার আগে ১০০০ পার করেছে তারাই যেন গোল করতে একেবারে ভুলে গেছে। নয়তো ব্রুনো ফার্নান্দেজ-মার্কাশ রাশফোর্ডদের নিয়ে গড়া আক্রমণ ভাগ কিভাবে লিগে ৪০০ মিনিট ধরে গোলহীন থাকে? তার ওপর আজকের প্রতিপক্ষ এই মৌসুমে উড়তে থাকা অ্যাস্টন ভিলা। মনে হচ্ছিল আজও মনে হয় গোল ও জয় ছাড়াই থাকতে হবে ইউনাইটেডের। প্রথমার্ধে ভিলার কাছে দুই গোল খেয়ে যখন সেই আশঙ্কাই সত্যি হওয়ার পথে তখনই দেখা দিল ক্রিসমাস মিরাকল। আর তাতে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে টেন হাগের দল।
এমনিতেই দলের টানা ব্যর্থতায় আত্মবিশ্বাস নেই বললেই চলে। তারপর আবার ম্যাচের শুরুর দিকেই জোড়া গোলের ধাক্কা। এই অবস্থায় যে কোনো দলের খেই হারিয়ে ফেললে কিছু বলার থাকে না। তবে এদিন যেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাদের সমর্থকদের ওল্ড ট্রাফোড থেকে খালি হাতে ফিরতে দিতে চাইছিল না। তাই জোড়া গোলের পরেও একের পর এক আক্রমণে চেপে ধরল এই মৌসুমে উড়তে থাকা অ্যাস্টন ভিলাকে। আর তার ফল স্বরূপ পেল পূর্ণ তিন পয়েন্ট ও তিন গোল।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বক্সিং ডের রাতে ইউনাইটেডের জয়ের নায়ক অবশ্য আর্জেন্টাইন সেনসেশন আলেহান্দ্রো গারনাচো। জন ম্যাকগিন ও ডেনডোকারের গোলে পিছিয়ে পড়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে ১২ মিনিটে দুবার জালে বল পাঠিয়ে সমতা টানেন গারনাচো। আর প্রিমিয়ার লিগে হোয়লুন্দের প্রথম গোলে ৩-২ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে এরিক টেন হাগের দল।
এর মাধ্যমে চার ম্যাচ ধরে জয়হীন থাকার ধারা ভাঙল রেজ ডেভিলসরা।
ম্যাচের অবশ্য প্রথমার্ধের পাঁচ মিনিটে দুর্দান্ত দুটি সেটপিসে গোল আদায় করে ভিলেনসরা ম্যানইউর হারের ধারা পাঁচে নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রাখে। ২১তম মিনিটে জন ম্যাকগিনের বুদ্ধীদিপ্ত ফ্রি-কিক ও কর্নারে ইউনাইটেডের হাস্যকর ডিফেন্স কাজে লাগিয়ে ব্যবধান ২-০ করে ডেনডোকার। আর এতে মনে হচ্ছিল ১৯৭৮ এর পর প্রথমবার বক্সিং’-ডেতে ম্যাচ হারতে যাচ্ছে ম্যানইউ।
গোল খেয়ে হতবিহ্বল হয়ে পড়া ইউনাইটেড ফিরে আসার চেষ্টা করে ম্যাচে। প্রথমার্ধের শেষ দিকে অবশ্য তারা ভালো কিছু আক্রমণ শানায়। কিন্তু জয়ের মতো গোলের স্বাদও ভুলতে বসা দলটি বিরতির আগে সমর্থকদের কাঙ্ক্ষিত গোল উপহার দিতে পারেনি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আলেহান্দ্রো গারনাচো গোল করলে উল্লাসে ফেটে পড়ে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড। তবে মুহূর্তেই সেই উল্লাস থেমে যায় ভিএআরের কারণে।
কিছুক্ষণ পর অবশ্য সত্যিই গোলের দেখা পায় ইউনাইটেড। ৫৯তম মিনিটে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত আসে। ডি-বক্সে রাশফোর্ডের পাস পেয়ে ডান পায়ের নিচু শটে ব্যবধান কমান তরুণ আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড গারনাচো। এই গোলে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে চার ম্যাচ এবং ৪৩০ মিনিট পর জালের দেখা পেল প্রিমিয়ার লিগের রেকর্ড চ্যাম্পিয়নরা।
গোল পেয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা ইউনাইটেড সমতায় ফিরতে বেশি সময় নেয়নি। ৭১ মিনিটে ব্রুনো ফার্নান্দেজের ক্রস প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের পা লেগে গারনাচোর কাছে এলে ডি-বক্সের মাঝামাঝি থেকে জোরাল শট নেন তিনি। আর তাতে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বিশ্বকাপজয়ী গোলকিপার মার্তিনেজকে বোকা বানিয়ে জালে ঢুকে।
৮২তম মিনিটে জয়সূচক গোল পায় ইউনাইটেড। কর্নার থেকে আসা বল ম্যাকগিনের হাঁটুতে লেগে চলে যায় হোয়লুন্দের পায়ে। আর তাতে ঠান্ডা মাথায় নিখুঁত শটে প্রিমিয়ার লিগে অভিষেকের ১০০০ মিনিট পর বল জালে পাঠান ডেনমার্কের তরুণ এই স্ট্রাইকার।
এই হারে সাত ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর হারের তেতো স্বাদ উপহার পেল অ্যাস্টন ভিলা। আর জয়ে ১৯ ম্যাচে ১০ জয় ও ১ ড্রয়ে ষষ্ঠ স্থানে উঠে এলো ইউনাইটেড।
মন্তব্য করুন