বীর মুক্তিযোদ্ধা কৃষ্ণা রহমানের জীবন সংগ্রামের ইতিহাসে ভরা। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতী মানুষ-পেশাজীবীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছেন তিনি। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে যেসব মা-বোন সর্বশক্তি দিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন কৃষ্ণা রহমান ছিলেন তাদের একজন। বিপ্লবী কৃষ্ণা রহমানের স্মরণ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর উদীচী চত্বরে এ স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তারা জানান, ১৯৫৪ সালের ১৫ আগস্ট খুলনায় জন্ম নেওয়া কৃষ্ণা রহমান ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে পথচলা শুরু করেন। এরপর খুলনায় দাঙ্গার বিরুদ্ধে মাঠে নামা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সশস্ত্র সংগ্রামেও অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেন কৃষ্ণা রহমান। বাগেরহাটের চিতলমারীতে অস্ত্র চালনার ট্রেনিং নিয়ে তিনিসহ মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় রাজাকারদের উপর হামলা চালিয়ে জয়লাভ করেন। এরপর কলকাতায় গিয়ে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে নারীদের আশ্রয় ও প্রশিক্ষণের জন্য গোবরা ক্যাম্পে কাজ করতে শুরু করেন। সেখানে তিনি জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা, নার্সিং এবং সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন। এছাড়া যেসব মেয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল, তাদের দেখাশোনা করার দায়িত্বও ছিল কৃষ্ণা রহমানের ওপরে।
স্মরণ সভায় সমবেত সংগীত ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। একক সংগীত পরিবেশন করেন নজর উল ইসলাম। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য শিখা সেন গুপ্তা। এছাড়া কৃষ্ণা রহমান-এর দুই সন্তান সৈয়দা অনন্যা রহমান ও সৈয়দ অন্বেষা রহমান দ্বৈত সংগীত পরিবেশন করেন।
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কৃষ্ণা রহমানের সন্তান, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য সৈয়দা অনন্যা রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা, সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম প্রমুখ।
আলোচকরা বলেন, আজীবন বিপ্লবী এই মানুষটি দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও সক্রিয় ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কৃষ্ণা রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে প্রায় ২ মাস ধরে ভর্তি ছিলেন তিনি। বেশ কিছুদিন ধরেই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। তবে, সবার শুভকামনা ব্যর্থ করে ২৬ ডিসেম্বর সকালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন কৃষ্ণা রহমান।
মন্তব্য করুন