বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত, তবে তার শর্ত একটাই—ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে ইসরায়েলকে।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন। বুধবার (২৮ মে) ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রাবোও সুবিয়ান্তো সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাই একমাত্র পথ। এটি সত্যিকারের শান্তি প্রতিষ্ঠার উপায়। আমাদের ইসরায়েলের অধিকারকে স্বীকার করতে হবে। ইসরায়েল একটি সার্বভৌম দেশ এবং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যদি ইসরায়েল ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তবে ইন্দোনেশিয়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে।
ইন্দোনেশিয়া সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর পাশে দাঁড়িয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। পাশাপাশি, ফ্রান্সের ভূমিকাও তিনি তুলে ধরেন। তিনি জানান, ফ্রান্সও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা এবং শান্তির সমর্থনে পদক্ষেপ গ্রহণে উৎসাহী থাকবে।
বর্তমানে, ইন্দোনেশিয়ার ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এবং দেশটি ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোর এই অবস্থান ইন্দোনেশিয়ার আন্তর্জাতিক কূটনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ইন্দোনেশিয়া আগেও ফিলিস্তিনের প্রতি তার সমর্থন জানিয়ে এসেছে এবং এই পরিস্থিতিতে, তাদের শর্ত পুরণ হলে তারা ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।
ইন্দোনেশিয়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা স্বীকৃতির পক্ষে বিশ্বব্যাপী সমর্থন বাড়ছে। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্স, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন এবং আরও কিছু ইউরোপীয় দেশ রয়েছে।
এছাড়া, মাল্টা সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী রবার্ট আবেলার মতে, গাজায় চলমান মানবিক ট্র্যাজেডির জন্য এই পদক্ষেপটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা ছিল।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁও গত মাসে ঘোষণা করেছেন যে, তারা ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত এবং জুন মাসে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে পারে। মাখোঁর মতে, ফ্রান্স এবং সৌদি আরব একযোগে একটি সম্মেলন আয়োজন করবে, যেখানে ফিলিস্তিনের সমস্যার সমাধানে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে।
২০১৪ সালে, সুইডেন প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ হিসেবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। এরপর বুলগেরিয়া, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড এবং রোমানিয়া এই পদক্ষেপ নেয়। এর আগে গত বছর, স্পেন, আয়ারল্যান্ড এবং নরওয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়।
বিশ্বে চলমান এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বব্যাপী চাপ বাড়ছে।
এখন, বিশ্বের অনেক দেশই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন জানাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া তার অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছে, ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তাদের শর্ত হলো ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা। এর মাধ্যমে, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির পক্ষে আরও একধাপ এগিয়ে গেল বিশ্ব।
মন্তব্য করুন