রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রোষানলে পড়ে দেশটি। তবু নিজের অবস্থানে অনড়। বিশ্ব কূটনীতিতে রাশিয়ার বন্ধু বিবেচিত চীনের সঙ্গেও রয়েছে দেশটির সখ্য। এর জেরেও পশ্চিমা শক্তি দেশটিকে সন্দেহের চোখে দেখে। তাই তো চাপে রাখতে দেশটির ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে বিশ্ব মোড়লরা।
সেই দেশকে প্রকৃত বন্ধু হিসেবে অভিহিত করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বুধবার (৪ জুন) বেলারুশের নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে সাক্ষাতে বেলারুশকে চীনের সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে প্রশংসা করেন। পাশাপাশি রাশিয়ার মিত্র এই নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ইউরোপীয় দেশকে বেইজিংয়ের সঙ্গে মিলে ‘আধিপত্য ও হুমকি’ মোকাবিলা করার আহ্বান জানান।
লুকাশেঙ্কোর এবারের বেইজিং সফর ছিল জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি বিজয়ী ঘোষিত হওয়ার পর প্রথম সফর। এ নির্বাচন তার ৩১ বছরের শাসনের মেয়াদ আরও বাড়ানোর একটি কৌশলমাত্র। পশ্চিমা সরকারগুলো তার এই বিজয়কে প্রতারণা হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
বেলারুশের অর্থনীতি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও বাণিজ্য শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ, তারা ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সমর্থন করছে। এমনকি রাশিয়ান বাহিনীকে ইউক্রেন আক্রমণের জন্য তাদের ভূখণ্ড ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল মিনস্ক।
পশ্চিমা বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বেলারুশ দমে যায়নি। তারা ক্রমশ পূর্ব দিকে ঝুঁকছে। এরই ধারাবাহিকতায় চীনের সঙ্গে সখ্য বেড়েছে দেশটির।
শি বেইজিংয়ের ক্ষমতার কেন্দ্র জোংনানহাইয়ে লুকাশেঙ্কোকে স্বাগত জানিয়ে জানান, চীন ও বেলারুশ সত্যিকারের বন্ধু এবং ভালো অংশীদার। দুই দেশের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব দীর্ঘদিন ধরে টিকে আছে। রাজনৈতিক পারস্পরিক আস্থা অটুট আছে।
শি লুকাশেঙ্কোকে বলেন, দুই দেশের উচিত আধিপত্য ও হুমকির বিরোধিতা করা এবং আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার রক্ষা করা।
লুকাশেঙ্কো বলেন, আপনি আমাদের প্রধান বৈশিষ্ট্যটি খুব সঠিকভাবে চিহ্নিত করেছেন। পশ্চিমের চাপ ব্যাপক। বিশেষ করে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ওপর তা অভূতপূর্ব। আজ বেলারুশসহ অনেক দেশের দৃষ্টি বেইজিংয়ের দিকে।
গত মাসে শি রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতে গিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তারা ‘ইস্পাতের ন্যায় বন্ধু’ হিসেবে থাকবেন এবং একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য আর থাকবে না।
ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে রাশিয়া ও চীন ওয়াশিংটনের নতুন চাপের মুখে পড়েছে। মস্কোকে ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানাচ্ছেন ট্রাম্প। পাশাপাশি শি-কে চাপে রাখতে বেইজিংয়ের ওপর নতুন বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করে। পরিস্থিতি অনেকটা বাণিজ্যে যুদ্ধে রূপ নিয়েছে।
লুকাশেঙ্কো তার শাসনামলে অন্তত ১৫ বার চীন সফর করেছেন। রাশিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক দৃঢ় এবং ইউক্রেন যুদ্ধে প্রাচ্যের সমর্থন আদায়ে তার প্রভাব রয়েছে।
মন্তব্য করুন