বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন ওয়াগনার প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন। যিনি রাশিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধাদল ওয়াগনারের প্রতিষ্ঠাতা। গেল জুনে দেশটির সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ওয়াগনার। যার নেতৃত্ব দেন প্রিগোজিন।
অসমাপ্ত ওই বিদ্রোহের জেরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের চক্ষুশুলে পরিণত হন ৬২ বছর বয়সী প্রিগোজিন। বিদ্রোহের মাস দুয়েক পর ওয়াগনার প্রধানের এমন মৃত্যুর জন্য অনেকেই অভিযোগের তীর ছুঁড়ছেন পুতিনের দিকে।
কে এই প্রিগোজিন?
আগ্রাসী আচরণ, বেপরোয়া মুখের ভাষা এবং ইউক্রেনে ক্রমাগত উপস্থিতির কারণে খুব দ্রুতই পরিচিতি পান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন। প্রথম দিকে রুশ প্রেসিডেন্টের বাবুর্চি হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি।
এরপর ক্ষমতার ছত্রছায়ায় গড়ে তোলেন ভয়ঙ্কর ভাড়াটে যোদ্ধা দল। এর মাধ্যমে শুধু রুশ ভূখণ্ডেই নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নৃশংসতা ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।
পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা
আশির দশকে দীর্ঘ কারাবরণ শেষে মুক্তি পান প্রিগোজিন। চলে আসেন নিজ জন্মস্থান সেন্ট পিটাসবার্গে। শুরু করেন ফাস্টফুড বিক্রি। এরপর, রেস্টুরেন্ট ও ক্যাটারিং ব্যাবসার মাধ্যমে ক্রমেই বেশ বিত্তশালী হয়ে ওঠেন। ক্রমেই সেন্ট পিটাসবার্গের তৎকালীন ডেপুটি মেয়র ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে তার।
মূলত সেই সময়ই উত্থান ঘটে প্রিগোজিনের। প্রভাব খাটিয়ে একে একে বাগিয়ে নিতে থাকেন সরকারি পণ্য সরবরাহের দরপত্র। ক্রেমলিনের সঙ্গে ক্যাটারিং-সংক্রান্ত চুক্তির মধ্য দিয়ে পুতিনের ব্যক্তিগত বাবুর্চি হিসেবে পরিচিতি পান প্রিগোজিন।
নিয়ন্ত্রণ নেন ওয়াগনার বাহিনীর
মূলত ওয়াগনার প্রতিষ্ঠা করেন সাবেক রুশ সেনাকর্মকর্তা দিমিত্রি উটকিন। কিন্তু পরে বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন ধনী ব্যবসায়ী প্রিগোজিন। তার অধীনেই সম্প্রসারণ ঘটে ভাড়াটে এই গ্রুপটির। এর প্রধান হওয়ায় রাশিয়ার শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে দিন দিন প্রভাব বাড়তে থাকে প্রিগোজিনের।
নজরে আসেন ইউক্রেন যুদ্ধের মাধ্যমে
ইউক্রেনে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করে ওয়াগনার সেনারা। তাদের নৈপুণ্যে চলতি বছরের মে মাসে শিল্পশহর বাখমুতের দখল নেয় রাশিয়া। তবে, যুদ্ধে যথেষ্ট গোলাবারুদ সরবরাহ না করার অভিযোগ তুলে রুশ সেনা কর্মকর্তাদের কড়া সমালোচনা করতে থাকেন প্রিগোজিন।
পরের মাসে ওই কর্মকর্তাদের উচ্ছেদে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন ওয়াগনার প্রধান। দখলে নেন সীমান্তবর্তী রুশ অঞ্চল রোস্তভ-অন-ডন। পরে যোদ্ধাদের বহর নিয়ে রওনা হন মস্কো অভিমুখে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্রেমলিনের সঙ্গে সমঝোতা করে বিদ্রোহের ইতি টানে ওয়াগনার।
পুতিনের রোষানলে প্রিগোজিন
ওয়াগনারের ওই বিদ্রোহকে পেছন থেকে ছুরি মারা বলে আখ্যা দেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। বলেন, এই বিশ্বাসঘাতকতার মূল্য হবে বেশ চড়া। এরপর ওয়াগনার বস প্রিগোজিনকে প্রতিবেশি দেশ বেলারুশে নির্বাসন দেওয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে তার উপস্থিতি শনাক্ত হয়।
বুধবার রাজধানী মস্কোর উত্তর-পশ্চিমের টিভের এলাকায় একটি জেট বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মারা যান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন। সন্দেহ করা হচ্ছে, এটি নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেওয়া ওয়াগনার প্রধানকে।
মন্তব্য করুন