ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে শুক্রবার (৪ জুলাই) ভোরে ভয়াবহ রুশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় আক্রমণ বলে দাবি করেছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ। রাতভর বিস্ফোরণ, ড্রোনের গুঞ্জন এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার শব্দে প্রকম্পিত ছিল শহরটি।
বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কিয়েভে বিভিন্ন এলাকায় আগুন লেগেছে, কিছু ভবনও ধ্বংস হয়েছে এবং রেলপথের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা বিভাগ জানায়, এতে কমপক্ষে ২৩ জন আহত হয়েছেন।
ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানায়, রাশিয়া এক রাতে ৫৫০টি ড্রোন ও ১১টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এর মধ্যে ৭২টি ড্রোন প্রতিরক্ষা ভেদ করে কিয়েভে প্রবেশ করে। এটি আগের সপ্তাহের ৫৩৭ ড্রোন হামলার রেকর্ডও ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় আট ঘণ্টা ধরে বারবার বিমান হামলার সতর্কতা বাজানো হয় কিয়েভজুড়ে।
এই হামলার কিছুক্ষণ আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে ফোনালাপ হয়। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি হতাশ, কারণ প্রেসিডেন্ট পুতিন যুদ্ধ থামাতে কোনো আগ্রহ দেখাননি।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দপ্তরের উপদেষ্টা আন্দ্রিই সিবিহা বলেন, ‘পুতিন ইচ্ছাকৃতভাবে এই আক্রমণ করেছেন। তিনি বোঝানোর চেষ্টা করছেন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুদ্ধ থামাতে যারা আহ্বান জানাচ্ছেন, তাদের কোনো গুরুত্ব দেন না তিনি।’
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই রাতকে ‘সর্বাধিক ভয়াবহ রাতগুলোর একটি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে রাশিয়ার ওপর কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে ইউক্রেনও রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের রোস্তভ অঞ্চলে পাল্টা ড্রোন হামলা চালায়, যেখানে একজন নারী নিহত হন বলে জানিয়েছে রুশ কর্মকর্তারা।
এইসময়েই যুদ্ধবিরতি আলোচনার আশাও কার্যত ভেঙে পড়েছে। বৃহস্পতিবার পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, কোনো অগ্রগতি হয়নি। প্রেসিডেন্ট পুতিন যুদ্ধ থামাতে আগ্রহী নন।
রুশ পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এখনো ইউক্রেন যুদ্ধের মূল কারণ দূর করার লক্ষ্যেই কাজ করছে। পুতিন সম্প্রতি বলেন, ‘সমগ্র ইউক্রেনই আমাদের’, যা তাকে ইউক্রেনকে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে ফেরানোর লক্ষ্যে অনড় অবস্থানে রাখছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চান। বিশেষ করে মার্কিন অস্ত্র সহায়তা নিয়ে, যা সম্প্রতি কিছু ক্ষেত্রে স্থগিত হয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করিনি, তবে কমিয়ে দিয়েছি।’ তিনি জো বাইডেনের প্রশাসনকে দোষারোপ করে বলেন, ‘অতিরিক্ত অস্ত্র সহায়তা যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব প্রতিরক্ষা দুর্বল করে ফেলছিল।’
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আক্রমণ শুরুর পর থেকে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধ এখন আরও প্রচণ্ড ও নির্দয় পর্বে প্রবেশ করেছে। কিয়েভে শুক্রবারের হামলা সেই চলমান উত্তেজনারই সর্বশেষ উদাহরণ।
মন্তব্য করুন