গাজা উপত্যকায় প্রায় ৮৫ হাজার টন বিস্ফোরক নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েল। এ পরিমাণটি হিরোশিমায় ব্যবহৃত পারমাণবিক বোমার তুলনায় ছয়গুণ বেশি ধ্বংসাত্মক বলে তুলে ধরেন ফ্রান্সেসকা আলবানিজ। খবর আলজাজিরার।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের এক অধিবেশনে এই তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির বিশেষ দূত আলবানিজ। তিনি এ বিস্ফোরণের মাত্রাকে ‘আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুর গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং এর জন্য ইসরায়েলকে সরাসরি দায়ী করেন।
আলবানিজ বলেন, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত তথাকথিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’ আসলে একটি ‘মৃত্যুফাঁদ’। এর মাধ্যমে উপত্যকার দুর্বল, ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত জনগণকে হত্যা কিংবা এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের এ দূত জানান, চলমান হামলায় সরকারি হিসাবে ২ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছে। যদিও বাস্তব সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ১১৮ জন নিহত ও ৫৮১ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১২ জন ত্রাণপ্রার্থীও রয়েছেন।
মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এখন পর্যন্ত নিহত ত্রাণপ্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫২। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৫৭ হাজার ১৩৪ জন নিহত ও ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯২ জন আহত হয়েছেন।
ফ্রান্সেসকা আলবানিজ অভিযোগ করেন, গাজাকে সামরিক প্রযুক্তির পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল। তিনি বলেন, প্রাণঘাতী ড্রোন, নজরদারি প্রযুক্তি ও নতুন অস্ত্র সিস্টেম গাজার নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।
তিনি আরও দাবি করেন, এই যুদ্ধ ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যবসা করা অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রায় রেকর্ড মুনাফা এনে দিয়েছে। তার জানান, ৪৮টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান- যার মধ্যে অস্ত্র কোম্পানি, ব্যাংক, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, জ্বালানি সংস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে, এ দখলদারিত্বমূলক যুদ্ধ-অর্থনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আলবানিজ বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, সব বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত রাখা এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের জন্য সংশ্লিষ্ট করপোরেট প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
পাশাপাশি তিনি বিশ্বব্যাপী নাগরিক সমাজকে বয়কট, নিষেধাজ্ঞা এবং আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে এ গণহত্যা বন্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানান।
মন্তব্য করুন