সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১০:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

যে ছয় ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছাড়তে রাজি নয় ইসরায়েল

কারাগারে থাকা বন্দিরা। ছবি : সংগৃহীত
কারাগারে থাকা বন্দিরা। ছবি : সংগৃহীত

ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ছয় হাই-প্রোফাইল বন্দির মুক্তির দাবি করেছে হামাস। তবে এ প্রস্তাবে রাজি নয় ইসরায়েল। বিষয়টি নিয়ে চলছে দরকষাকষি। নিজেদের কারাগারে থাকা এসব বন্দি এখন আতংক হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসরায়েলের। দেশটির দাবি, এসব বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হলে গাজায় প্রতিরোধ আন্দোলন আবার প্রাণ ফিরে পাবে।

শুক্রবার (১০ অক্টোবর) মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে এসব বন্দির পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।

মারওয়ান বারঘুতি

ইসরায়েলের সঙ্গে বন্দি বিনিময় আলোচনায় সবচেয়ে আলোচিত নামগুলোর মধ্যে রয়েছেন মারওয়ান বারঘুতি। তিনি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক নেতা হিসেবে পরিচিত। বলা হয়ে থাকে, তিনি ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে সহজেই জয়ী হতেন।

১৯৬২ সালে পশ্চিম তীরের কোবার শহরে জন্ম নেওয়া বারঘুতি ১৯৮০-এর দশকে বীরজেইত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রনেতা হিসেবে রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং ফাতাহ আন্দোলনে সক্রিয় হন। ১৯৮৭ সালে ইসরায়েল তাকে জর্ডানে নির্বাসিত করে। এরপর থেকে তিনি ফাতাহর সিনিয়র নেতাদের অন্যতম ছিলেন। ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরই বারঘুতি ফিলিস্তিনে ফিরে আসেন।

পরের বছর তিনি ফাতাহর মহাসচিব হন এবং ১৯৯৬ সালে ফিলিস্তিনি আইন পরিষদে নির্বাচিত হন। ২০০২ সালের মার্চ মাসে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় ফাতাহর সশস্ত্র শাখা আল-আকসা শহীদ ব্রিগেড যখন বেশ কয়েকটি হামলা চালায়, তখন ইসরায়েল বারঘুতিকে গ্রেপ্তার করে এবং তাকে সংগঠিত করার জন্য অভিযুক্ত করে। ২০০৪ সালে ইসরায়েল তাকে হত্যার বিভিন্ন অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। এরপর তাকে পাঁচটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে এসব অভিযোগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করে আসছেন।

হামাসের প্রিজনারস মিডিয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় আলোচনার শেষ মুহূর্তে একতরফাভাবে বারঘুতির নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে।

আহমদ সাদাত

বারুতির মতো, আহমদ সাদাতও এক দশকের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি রয়েছেন। বন্দি বিনিময়ের আলোচনায় তার নামও রয়েছে। সাদাত ২৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের (পিএফএলপি) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

১৯৫৩ সালে পশ্চিম তীরের রামাল্লাহর কাছে আল-বিরেহে জন্মগ্রহণ করেন আহমদ সাদাত। ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী দল গঠিত হওয়ার কয়েক বছর পর তিনি পিএফএলপিতে যোগ দেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বারবার কারারুদ্ধ হওয়ার পরও তিনি দলের শীর্ষ পদে চলে আসেন। ২০০১ সালের আগস্টে, ইসরায়েল তার পূর্বসূরি আবু আলী মুস্তাফাকে দুটি অ্যাপাচি হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া রকেট ব্যবহার করে হত্যা করে। এরপর তিনি পিএফএলপির নেতা হন। পিএ কারাগার থেকে সাদাত ২০০৬ সালের ফিলিস্তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ফিলিস্তিনি আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

সেই বছরের মার্চ মাসে, ইসরায়েলি বাহিনী জেরিকো কারাগারে আক্রমণ করে এবং কারাগার থেকে তাকে বন্দি করা হয়। দুই বছর পর তাকে ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ এবং জিভি হত্যাসহ পিএফএলপি সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত হামলার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। সাদাতকে প্রায় নির্জন কারাগারে রাখা হয় এবং আটক থাকা অবস্থায় বেশ কয়েকটি অনশন ধর্মঘট শুরু করেন।

আবদুল্লাহ বারঘুতি

ইসরায়েলি হেফাজতে থাকা যে কোনো ব্যক্তির মধ্যে আবদুল্লাহ বারঘুতি সবচেয়ে দীর্ঘ কারাদণ্ড ভোগ করছেন। তার পরিবার রামাল্লাহর কাছে বেইত রিমা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। বারঘুতি ১৯৭২ সালে কুয়েতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে পশ্চিম তীরে চলে আসেন। আব্দুল্লাহ বারঘুতি হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

আবদুল্লাহ বারঘুতিকে হামাসের অন্যতম প্রধান বোমা প্রস্তুতকারক হিসেবে ব্যাপকভাবে উল্লেখ করা হয়। ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে একাধিক হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। এ হামলায় কয়েক ডজন ইসরায়েলি নিহত হয়।

২০০৩ সালের মার্চ মাসে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে বারঘুতিকে ৬৭ বার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার ২০০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। গিলবোয়া কারাগারে ইসরায়েলি রক্ষীদের হাতে কারাগারে তিনি গুরুতর শারীরিক নির্যাতন সহ্য করেছেন। তার মেয়ে জানিয়েছেন, আবদুল্লাহ বারঘুতিকে কারাগারে লোহার রড এবং বেল্ট দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নির্যাতন করা হয়েছে। এর ফলে শরীরে ক্ষতচিহ্ন হয়ে যায় এবং একাধিক ফ্র্যাকচার দেখা দেয়। তিনি ২৩ বছরের বেশিরভাগ সময় নির্জন কারাগারে কাটিয়েছেন।

হাসান সালামেহ

আবদুল্লাহ বারঘুতির মতো দীর্ঘ সাজা ভোগ করছেন হাসান সালামেহ। ১৯৭১ সালে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদার সূত্রপাতের পর তিনি ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনে জড়িত হন। তিনি আল-কাসেম ব্রিগেডের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন এবং ১৯৯৬ সালে ইসরায়েল কর্তৃক বেশ কয়েকটি আত্মঘাতী বোমা হামলার পরিকল্পনার জন্য দোষী সাব্যস্ত হন।

সালামেহ জানান, ওই বছরের শুরুতে হামাসের বোমা নির্মাতা ইয়াহিয়া আয়াশের ইসরায়েলি হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে হামলা চালানো হয়েছিল। তাকে ৪৮ বার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০১১ সালের গিলাদ শালিত বন্দি বিনিময় চুক্তির পর থেকে তার নাম প্রায়ই আলোচনায় উঠে এসেছে।

ইব্রাহিম হামেদ ইব্রাহিম হামেদ বর্তমানে ইসরায়েলি কারাগারে ৫৪টি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। ১৯৬৫ সালে রামাল্লাহর কাছে সিলওয়াদে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এরপর বিরজেইত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে আল-কাসসাম ব্রিগেডে সক্রিয় হন।

১৯৯৮ সালে ইসরায়েল তার ভাই এবং হামাস কমান্ডার ইমাদ এবং আদেল আওয়াদাল্লাহকে হত্যা করার পর তিনি পশ্চিম তীরে গোষ্ঠীর সশস্ত্র শাখার প্রধান হন। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাকে ২০০০ সালের শুরুর দিকে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় বেশ কয়েকটি হামলার জন্য দায়ী করে।

তিনি আট বছর ধরে ইসরায়েলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় ছিলেন। এরপর ২০০৬ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১২ সালে ৪৬ জন ইসরায়েলিকে হত্যা এবং আরও শত শত আহত করার অভিযোগে তাকে ৫৪ বার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আব্বাস আল-সাঈদ আব্বাস আল-সাঈদ ২৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি রয়েছেন। ১৯৬৬ সালে পশ্চিম তীরের তুলকারমে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৯০-এর দশকে হামাসের সশস্ত্র শাখার অন্যতম নেতা ছিলেন আব্বাস। ২০০২ সালের মে মাসে তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর ইসরায়েলি আদালত তাকে ৩৫ বার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত ১০০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। কারাবাসের সময় তিনি অনশন ধর্মঘটের নেতৃত্ব দেন। তাকে ফিলিস্তিনি বন্দিদের অন্যতম প্রধান সংগঠক হিসেবে দেখা হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাঠ্যপুস্তক ছাপার দায়িত্ব হস্তান্তর ‘মাথাব্যথায় মাথা কাটার মতো সিদ্ধান্ত’ : টিআইবি

বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়ে ভারতকে হারাল অস্ট্রেলিয়া

মৌসুমি বায়ুসহ আগামী ৪ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস

চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা

এবার উপদেষ্টাদের নিয়ে মুখ খুললেন সামান্তা শারমিন

ঢাকায় আসছেন জাকির নায়েক

ছক্কা মেরে ইতিহাস গড়লেন স্মৃতি মান্ধানা!

উপদেষ্টা রিজওয়ানাকে এনসিপি নেতার হুঁশিয়ারি

একটি দল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায় : কফিল উদ্দিন 

চাকসু নির্বাচনে নতুন প্রত্যয়ে ছাত্রদল

১০

বন্দর ব্যবসায়ী নেতারা / মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধের ষড়যন্ত্রের অংশ

১১

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নিয়ে ৬ হাজারের বেশি মতামত পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

১২

জুলাইয়ের গাদ্দারদের সব রেকর্ড প্রকাশ করা হবে : মুনতাসির

১৩

যে ছয় ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছাড়তে রাজি নয় ইসরায়েল

১৪

ময়মনসিংহে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার

১৫

ধানের শীষের বিজয় মানেই জনগণের মুক্তি : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

১৬

রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

১৭

বাবর আজমকে নিয়ে ধারাভাষ্যে রমিজ রাজার তির্যক মন্তব্য

১৮

‘সঠিক ও মানসম্পন্ন সংবাদ উপস্থাপনে সাংবাদিকদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে’

১৯

আন্দরকিল্লা মসজিদ আইকনিক করতে ব্যয় ৩০০ কোটি

২০
X