কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৫৪ পিএম
আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:৫০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

৫০ হাজার বছর পর ঘুম ভাঙছে জোম্বি ভাইরাসের, আশঙ্কা মহামারির

বিজ্ঞানীরা এমন ভাইরাসের খোঁজ পেয়েছেন যা প্রায় ৪৮ হাজার ৫০০ বছর হিমায়িত অবস্থায় ছিল। ছবি: জ্য মিশেল ক্লিভেরি/IGS/CNRS-AMU
বিজ্ঞানীরা এমন ভাইরাসের খোঁজ পেয়েছেন যা প্রায় ৪৮ হাজার ৫০০ বছর হিমায়িত অবস্থায় ছিল। ছবি: জ্য মিশেল ক্লিভেরি/IGS/CNRS-AMU

জলবায়ু পরিবর্তন বোঝার জন্য এক ফরাসি ভাইরোলজিস্টের গবেষণা নতুন সব বিচলিত করার মতো বাস্তবতার মুখোমুখি করছে। বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি ‘জোম্বি’ ভাইরাসের সন্ধান পেয়েছেন যা ৫০ হাজার বছর ধরে চিরহিমায়িত অবস্থায় ছিল।

৭৩ বছর বয়সী জ্য মিশেল ক্লেভরি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গবেষণা চালিয়ে ‘দানবীয়’ ভাইরাসের সন্ধান পেয়েছেন। এ ভাইরাসগুলো এতদিন সাইবেরিয়ার ভূগর্ভস্থ চিরহিমায়িত অঞ্চলে ছিল। তার গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে পৃথিবীর উষ্ণায়ন আর চিরহিমায়িত অঞ্চলের বরফ গলার কারণে সুপ্ত রোগজীবাণু, মাইক্রোব, ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসগুলো জনস্বাস্থ্যের ওপর নতুন ঝুঁকি তৈরি করছে। খবর ইকোনমিক টাইমসের।

এই হুমকিকে আরও ভালো করে বোঝার জন্য মেডিসিন ও জিনমিক্সের প্রফেসর জ্য মিশেল ক্লেভরি সাইবেরিয়ান চিরহিমায়িত অঞ্চলের মাটি পরীক্ষা করেন। ‘জোম্বি ভাইরাস’-এর খোঁজ করার জন্যই তিনি এ পরীক্ষা করেন।

সাধারণত আর্কটিক অঞ্চল, গ্রিনল্যান্ড, আলাস্কা, রাশিয়া, চীন এবং পূর্ব ইউরোপে এমন চিরহিমায়িত অঞ্চল দেখা যায়। এসব জায়গা সাধারণত স্থলে এবং সাগরতটের নিচে পাওয়া যায়- যেখানে তাপমাত্রা কদাচিত হিমায়িত অবস্থার চেয়ে বাড়ে।

গবেষণায় দেখা গেছে, আর্কটিক চিরহিমায়িত অঞ্চলে মাটির বরফ হয়ে থাকা একটি আচ্ছাদন তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে গলে যাচ্ছে এবং এতে যেসব ভাইরাস বহুকাল ধরে সুপ্ত অবস্থায় ছিল সেগুলো জেগে উঠছে।

মার্সেলিতে অবস্থিত অ্যাইক্স-মার্সেলি ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের অ্যামিরেটাস প্রফেসর ক্লেভরি এবং তার দল সাইবেরিয়ান চিরহিমায়িত অঞ্চলের এসব প্রাচীন ভাইরাস সংরক্ষণ করেছেন। ক্লেভরির দল এসব ভাইরাসের সবচেয়ে পুরোনো স্ট্রেইন খুঁজে পেয়েছেন। এগুলোর খোঁজ মিলেছে মাটির নিচের একটি হিমায়িত লেক থেকে। এগুলোর বয়স আনুমানিক ৪৮,৫০০ বছর। যেসব নমুনা তারা পশমি ম্যামথের পাকস্থলি থেকে পেয়েছেন সেগুলো ২৭ হাজার বছর পুরোনো।

ক্লেভরির মতে, যেসব ভাইরাস বরফ হয়ে যাওয়ার পরেও সংক্রামক থাকে সেগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে। সিএনএনকে তিনি বলেন, আমরা অনেক ভাইরাসের চিহ্ন পেয়েছি। আমরা জানি সেগুলোর অস্তিত্ব রয়েছে। তবে আমরা এখনো নিশ্চিত নই -এই ভাইরাসগুলো বেঁচে আছে কি না। তবে আমাদের যুক্তি হচ্ছে যদি আমরা অ্যামিবা ভাইরাসগুলোর জীবিত থাকা সমন্ধে নিশ্চিত হই- তবে অন্যান্য ভাইরাসগুলোর না বেঁচে থাকার কোনো কারণ নেই। এগুলো যেখানে আশ্রয় নেয় সেখানে সংক্রমণ ঘটাতেও সক্ষম। বছরের পর বছর ধরে মানুষের ইম্যুইনিটি নেই এমন সব সংক্রামক রোগ নিয়ে কাজ করছে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের সরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘ডিজিজ এক্স’ নামে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্যাথোজেনের একটি তাল্কা করেছে। মূলত গবেষণা ও মহামারির আশঙ্কাকে যাচাই করার জন্য এ তালিকা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ মহামারির পর এসব চেষ্টা আরও সুবিন্যস্ত করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র ড. মার্গারেট হ্যারিস বলেন, ‘ডব্লিউএইচও তিনশরও বেশি বিজ্ঞানীকে নিয়ে কাজ করছে। চিরহিমায়িত বরফ গলার মাধ্যমে যেসব ব্যাকটেরিয়া মহামারি সৃষ্টি করতে পারে, তাদের নিয়ে গবেষণা করছে এ বিজ্ঞানীরা।’

ক্লেভরির রিসার্চ বেশ আনকোরা। ফ্রান্সে তার ল্যাবরেটরিতে মাটির বিভিন্ন নমুনা রয়েছে। এ ছাড়া সেখানে বায়োসেফটি সুবিধাও রয়েছে। পার্টিক্যাল ফিজিক্স, কম্পিউটার সাইন্স এবং বায়োকেমিস্ট্রির অভিজ্ঞান ক্লেভরিকে একজন ভাইরোলজিস্ট হিসেবে নতুন সব ধারণা প্রদানে সহায়তা করেছে।

চিরহিমায়িত অঞ্চলের নিয়ে ক্লেভরি অবাক হন যখন তিনি দেখতে পারেন, ক্লেভরি দেখেছেন ৩০ হাজার বছর পুরোনো একটি ফল থেকে একটি চারাগাছ জন্মেছে। এরপরই তিনি এ নিয়ে আরও বিস্তর গবেষণা শুরু করেন। ২০১৪ সালে তিনি সফলভাবে সাইবেরিয়ান হিমায়িত অঞ্চল থেকে ‘জীবিত’ ভাইরাস উদ্ধার করতে সক্ষম হন। ২০১৯ সালে তিনি এবং তার দল আরও ১৩টি ভাইরাস আলাদা করেন। মানুষ, প্রাণি অথবা গাছপালার ভেতর প্রাচীন এসব প্যাথোজেনের দ্বারা সংক্রমিত ভাইরাস ভয়াবহ পরিণতি বয়ে নিয়ে আসতে পারে বলেও জানান তিনি।

রাশিয়ার দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চলই বরফে আচ্ছাদিত। এটিই জৈব বস্তুর টিকে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো পরিবেশ। সাইবেরিয়ায় চিরহিমায়িত অঞ্চলের গভীরতা ১ কিলোমিটারেরও বেশি। এসব জায়গায় হাজারো মাইক্রোব প্রজাতির ভাইরাস রয়েছে। যদিও আর্কটিকে উষ্ণতা বাড়ার জন্য প্রশস্ত মিথেনের ক্রেটার দৃষ্টিলব্ধ হচ্ছে এবং বরফে আচ্ছাদিত এসব অঞ্চলে গড়ে ওঠা শহরগুলোও অধোগামী হচ্ছে। ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পশ্চিমা ও রুশ বিজ্ঞানীদের মধ্যেকার শীতল সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে যা গবেষণার পথে অন্তরায়। মাটির আরও গভীরে খনির কাজের জন্য রাশিয়া প্রায়ই খননকাজ চালাচ্ছে। এসবের ফলে প্রাচীন প্যাথোজেন বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে রাশিয়া প্রাকৃতিক সম্পদ আরোহণের তাগিদেই এ জাতীয় খননকাজ চালাচ্ছে। তবে এতে অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও ভয়াবহ মাইক্রোব সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে চলেছে।

এসব ভীতি সঞ্চারকারী প্রশ্নকে সামনে রেখে ক্লেভরি আবারও সাইবেরিয়ায় ফিরে গেছেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা চালিয়ে যেতে চান।

(ইকোনমিক টাইমস ও ইউএসএটুডে অবলম্বনে)

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কত বয়সে শুরু করবেন কোলেস্টেরল টেস্ট? চিকিৎসক যা বলছেন

অবৈধ পার্কিংয়ে বাসচালককে জরিমানা, পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা

পাল্টে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্বকাপের সময়

১৭ জেলায় রাতে ঝড়ের আভাস

ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আর নেই

দিল্লিতে বসে হাসিনার অপরাজনীতি চলবে না : রাশেদ প্রধান

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন শহিদুল আলম

এরদোয়ানের সবুজ সংকেত, গাজা মিশনের জন্য প্রস্তুত তুর্কি সেনা

শাহবাগের তিন জায়গায় ৩ জনের মরদেহ

মিয়ানমারে আবারও সংঘাত, সীমান্তে গোলাগুলি

১০

এক রাতে ছয়টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি

১১

এবার ইসরায়েলে মোতায়েন হবে মার্কিন সেনা

১২

ট্রাম্পের নোবেল না পাওয়ার কারণ জানাল শান্তি কমিটি

১৩

সেলস বিভাগে নিয়োগ দিচ্ছে রূপায়ন গ্রুপ

১৪

ডিএমপির ঊর্ধ্বতন ৮ কর্মকর্তাকে রদবদল

১৫

বিএনপির ৩১ দফা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে : কফিল উদ্দিন

১৬

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত নজরুল / ‘যদি ফোন বন্ধ থাকে, ধরে নিও আমি বেঁচে নেই’

১৭

টাইফয়েড টিকা নিয়ে জরুরি ৫ প্রশ্নের সমাধান

১৮

টি ব্যাগ দিয়ে তৈরি চা কি শরীরের জন্য নিরাপদ? কি বলছেন পুষ্টিবিদ

১৯

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় অভিযুক্তদের দায়মুক্তি নিয়ে যা বললেন আসিফ নজরুল 

২০
X