বিদ্রোহের কয়েক দিন পর ক্রেমলিনে ওয়াগনারপ্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন ও বেশ কয়েকজন কমান্ডারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেই বৈঠকে ওয়াগনার ভবিষ্যতে কীভাবে কাজ করতে পারে সে বিষয়ে একটি প্রস্তাব দেন পুতিন। সেখানেই ওয়াগনার যোদ্ধারা নতুন একজন কমান্ডারের নেতৃত্বে কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন বলে জানান পুতিন।
গত ২৩ জুন রাশিয়ার সামরিক নেতাদের উৎখাত করতে বিদ্রোহের ঘোষণা দেন ওয়াগনারপ্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। ঘোষণার পর পর দেশটির রাজধানী মস্কো অভিমুখে যাত্রাও করে ওয়াগনার বাহিনী। তবে ওইদিন রাতে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট অ্যালেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় বিদ্রোহ থেকে সরে আসেন প্রিগোজিন।
এ ব্যর্থ বিদ্রোহের পর ২৯ জুন ক্রেমলিনে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। এ সময় তার সঙ্গে আরও ৩৫ জন ওয়াগনার কমান্ডার উপস্থিত ছিলেন। পুতিন ও তাদের মধ্যে তিন ঘণ্টা আলাপ-আলোচনাও হয়।
ওয়াগনারের বিদ্রোহের পর দলটির কমান্ডারদের সঙ্গে তার সাম্প্রতিক বৈঠক এবং দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে রাশিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম কমার্স্যান্টকে একটি সাক্ষাৎকার দেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।
সাক্ষাৎকারে পুতিন জানান, বৈঠকে তিনি ওয়াগনার যোদ্ধাদের একই কমান্ডারের নেতৃত্বে তাদের সামরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। এই কমান্ডারের নেতৃত্বেই তারা গত ১৬ মাস তারা কাজ করেছেন।
বৈঠকে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট আসলে ওয়াগনারের নতুন প্রধান হিসেবে আন্দ্রে ত্রোশেভের নাম প্রস্তাব করেন বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। তাকে সবাই চেনেন ‘সেদোয়’ নামে। এর মানে হলো ‘ধূসর চুল’।
এমন প্রস্তাব দেওয়ার পর কী হয়েছিল তা জানতে চাওয়া হলে পুতিন বলেন, ‘তাদের অনেকে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়েছেন। তবে তাদের মধ্য থেকে প্রিগোজিন কথা বলেন এবং জানান তারা এ প্রস্তাবে রাজি হতে পারবেন না।
কে এই আন্দ্রে ত্রোশেভ
আন্দ্রে ত্রোশেভ অবসরপ্রাপ্ত একজন রুশ কর্নেল। তিনি ওয়াগনার গ্রুপের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও নির্বাহী পরিচালক। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ফ্রান্সের প্রকাশিত বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত নথিপত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে সিএনএন।
সিরিয়ায় নিয়োজিত ওয়াগনার গ্রুপের অপারেশন বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ত্রোশেভ। গ্রুপটি সিরিয়ার বাসার আল-আসাদ সরকারের সমর্থনে কাজ করেছে। সিরিয়া নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত বিবরণ থেকে এ তথ্য উঠে আসে।
২০২১ সালে ইইউর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা থেকে আরও জানা যায়, ত্রোশেভ ১৯৫৩ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের লেনিনগ্রাদে জন্মগ্রহণ করেন।
ত্রোশেভকে নিয়ে একই ধরনের তথ্য পাওয়া যায় যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা থেকেও। সেখানে বলা হয়েছে, তিনি ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান নির্বাহী ছিলেন।
ত্রোশেভ ওয়াগনার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা দিমিত্রি উটকিনের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। এ ছাড়া ওয়াগনারের কমান্ডার আলেকজান্ডার সের্গেভিচ কুজনেটসভ ও আন্দ্রে বোগাতোভের সঙ্গেও তার সখ্য রয়েছে।
আফগানিস্তান ও চেচনিয়ায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য তাকে বেশ কয়েকটি মেডেল দেওয়া হয়। তবে ২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইউক্রেন।
মন্তব্য করুন