পাকিস্তানের ভূখণ্ডে চালানো বিশেষ সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় ভারতের একাধিক যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ।
তবে এই বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বরং ভারতীয় বিমানবাহিনী বলেছে, ক্ষয়ক্ষতি যুদ্ধেরই অংশ, তবে এখনই কিছু বলার সময় নয়।
রোববার (১১ মে) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় দিল্লিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় বিমানবাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তা এয়ার মার্শাল একে ভারতী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমরা এখনো সক্রিয় যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে আছি। এ অবস্থায় আমাদের অপারেশন বা ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত জানানো শত্রুপক্ষের জন্য সুবিধা তৈরি করতে পারে। তাই এই মুহূর্তে আমরা যুদ্ধবিমান ধ্বংস হওয়া নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সব বৈমানিক নিরাপদে ঘরে ফিরেছেন এবং আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণে সফল হয়েছি। ক্ষয়ক্ষতি যে কোনো যুদ্ধেরই বাস্তবতা।
এর আগে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাইও দিল্লিতে এক ব্রিফিংয়ে একই ধরনের বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধবিরতির পর নতুন করে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি। সামরিক স্তরে আলোচনাও চলছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত ৭ মে, যখন মধ্যরাতে ভারতের যুদ্ধবিমানগুলো পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পাকিস্তান প্রতিরোধ গড়ে তুলে পাল্টা হামলায় অংশ নেয় এবং দাবি করে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ফ্রান্স থেকে কেনা অত্যাধুনিক তিনটি রাফাল ফাইটার জেট।
ভারতের পক্ষ থেকে এই দাবির পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য না এলেও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে কিছু তথ্য উঠে এসেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স পাকিস্তানের দাবি নিয়ে এক প্রতিবেদনে জানায়, চারটি ভিন্ন ভারতীয় সরকারি সূত্রের ভিত্তিতে অঞ্চলটিতে অন্তত তিনটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে।
পরদিন (৮ মে) রয়টার্স আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের দুজন কর্মকর্তার বরাতে বলা হয়- পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ যুদ্ধবিমান দিয়ে ভারতের অন্তত দুটি বিমান ভূপাতিত করেছে। এই বিমানগুলোর মধ্যে একটি ছিল ফরাসি প্রযুক্তির রাফাল।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, পাকিস্তানি পাইলটরা আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য চীনা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এই হামলা চালান। তার মতে, এটি চীনা সামরিক প্রযুক্তির কার্যকারিতার একটি ‘মাইলফলক’।
এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক সামরিক বিশ্লেষকরা চীনের জে-১০ ও ভারতের রাফায়েল যুদ্ধবিমানের সক্ষমতা নিয়ে নতুন করে তুলনা শুরু করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংঘর্ষ ভবিষ্যতের আকাশযুদ্ধ কৌশল এবং সামরিক জোট নির্ধারণে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি পাকিস্তানের দাবি সত্যি হয়, তবে ভারতের জন্য এটি শুধু সামরিক নয়, কূটনৈতিকভাবেও বড় ধরনের ধাক্কা। কারণ যুদ্ধবিমান রাফাল ছিল ভারতের ‘গেমচেঞ্জার’ অস্ত্র হিসেবে পরিচিত, যার ওপর নির্ভর করে দিল্লি দক্ষিণ এশিয়ায় আকাশ-নিয়ন্ত্রণে নেতৃত্বের দাবি করছিল।
সূত্র : রয়টার্স, এনডিটিভি
মন্তব্য করুন