গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা নিরসনে শান্তির নতুন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও মিসর। আগামীকাল সোমবার মিসরের বিখ্যাত অবকাশযাপন কেন্দ্র শারম আল শেখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘শান্তি শীর্ষ সম্মেলন’, যেখানে সভাপতিত্ব করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি।
সবশেষ পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, এই সম্মেলনে যোগদানের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসর শনিবার শেষ মুহূর্তে মোদিকে আমন্ত্রণ পাঠায়। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এখনো তার উপস্থিতি নিশ্চিত করেনি।
শান্তি শীর্ষ সম্মেলনের লক্ষ্য
মিসরের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই সম্মেলনে ২০টির বেশি দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান অংশ নেবেন। এর ৩টি প্রধান লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের সমাপ্তি, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার নতুন অধ্যায় সূচনা।
এ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে এমন এক সময়, যখন ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ কার্যকর হয়েছে। আলোচনায় গাজা পুনর্গঠন এবং ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
ভারতের জন্য কৌশলগত সুযোগ
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, যদি প্রধানমন্ত্রী মোদি অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে এটি হবে ভারতের জন্য অত্যন্ত কৌশলগত সুযোগ। এতে একদিকে ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলে যেতে পারে, অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে ভারতের উপস্থিতি আরও দৃশ্যমান হবে।
নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ফিলিস্তিন ইস্যুতে ভারতের ঐতিহাসিক নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরে গিয়ে ইসরায়েল-পন্থী নীতি অনুসরণ করছে। মোদি ব্যক্তিগতভাবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ‘বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করেন। গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় নিয়েও তার নীরবতা ভারতে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও টানাপড়েনের প্রেক্ষাপট
মোদিকে এই আমন্ত্রণের খবর এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ভারত-মার্কিন সম্পর্ক বাণিজ্য ও কূটনৈতিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের রপ্তানি পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি, ট্রাম্প প্রশাসন এইচ-১বি ভিসার ফি ১ লাখ ডলার পর্যন্ত বাড়িয়েছে, যা ভারতীয় আইটি কর্মীদের ওপর বড় চাপ ফেলেছে।
সম্পর্কের এই টানাপড়েন দূর করতে সম্প্রতি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করেছে দুই দেশ। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মনোনীত সার্জিও গর বর্তমানে নয়াদিল্লি সফরে আছেন, যদিও তার কূটনৈতিক নথিপত্র এখনো ভারতের অনুমোদনের অপেক্ষায়।
গতকাল মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সার্জিও গর সফরটিকে ‘অবিশ্বাস্য ও উষ্ণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।
মন্তব্য করুন