কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ধ্বংসস্তূপে এখনো স্ত্রী-স্বজনদের দেহ খুঁজছেন বৃদ্ধ

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

ইসরায়েলি নৃশংসতায় এখন ধ্বংসস্তূপ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। বোমার আঘাতে ‍মাটির সাথে মিশে গেছে হাজার হাজার বাড়ি-ঘর। আর সেসব বিধ্বস্ত বাড়ি-ঘরের নিচে এখনো স্বজনদের মরদেহ খুঁজে ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী অন্তত ১৪ হাজার মরদেহ গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। সেসব মরদেহ খুঁজে বের করে নতুন করে দাফন করছেন স্বজনরা।

ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই মা হারানো নাতিকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বৃদ্ধ আদলি আসলিয়া। ইসরায়েলি হামলায় ‍মাটির সাথে মিশে গেছে তার বাড়ি-ঘর। শুধু তাই নয়, স্ত্রী-সন্তান ও পুত্রবধূর মরদেহটাও খুঁজে পাননি তিনি। এতো মাস পরে এসেও তাইতো মরদেহগুলোর অন্তত ‘কোনো একটি অংশ’ খুঁজে পেতে মরিয়া স্বজনহারানো এই ফিলিস্তিনি।

গাজার এই বাসিন্দা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘কেউ কেউ প্রশ্ন করেন—আমি এখানে কী খুঁজছি। আমার বিশ্বাস, স্ত্রী ও পুত্রবধূর মরদেহ খুঁজে পাব। যদিও আমি এখনো তাদের পাইনি, কিন্তু তাদের খুঁজতে গিয়ে জীবনের সবচেয়ে মধুর স্মৃতিগুলো খুঁজে পেয়েছি। একটি ছেঁড়া ও পোড়া ছবির অ্যালবাম, কিছু পোড়া জামাকাপড় ও জুতা পেয়েছি। আমার স্ত্রীর কিছু পোশাকও পেয়েছি। আমাদের শোবার ঘর পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপের নিচে, ঠিক এখানে।’

আশাপাশে কোথাও একটু মাথাগোঁজার ঠাঁই নেই। তবুও, ধ্বংসস্তূপের কনক্রিট থেকে সরতে চান না এই ফিলিস্তিনি। বেঁচে থাকা একমাত্র নাতিকে নিয়ে তাই ধ্বংস হওয়া বাড়ির কাঠামোর নিচেই থাকছেন তিনি। জীবনের বাকিটা সময় কাটিয়ে দিতে চান প্রিয়জনদের স্মৃতি হাতড়েই।

তিনি বলেন, ‘আমি কতবার চেষ্টা করেছি এই শয়নকক্ষের প্রতিটি জিনিস মেরামত করতে, যেন এগুলো আমার কাছে স্মৃতি হয়ে থাকে, কিন্তু পারিনি। সময় অনেক বয়ে গেছে। সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার স্ত্রী শহীদ হয়েছেন ১৮ নভেম্বর, এরপর ইসরায়েল তার সেনাদের সরিয়ে নিয়েছে। মাঝখানে কেটে গেছে দীর্ঘ সময়।’

আদলি আসলিয়া মনকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন—তার সময়ও ফুরানোর পথে। তবে, কোলের নাতিটিকে নিয়েই যতো দুশ্চিন্তা তার। মনে সব সময় ঘরপাক খাচ্ছে এই প্রশ্ন— মা হারা এই দুধের শিশুটিকে কী খাওয়াবেন, কোথায় রাখবেন? আদৌ কতদিন টিকে থাকবেন এভাবে।

এই বৃদ্ধ আরও বলেন, ‘আমি সারাক্ষণ কাঁদি। বন্ধুরা সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তারা বলেন, যা চলে গেছে তা নিয়ে আর ভাবতে নেই। হ্যাঁ, আমাকে ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে। ভাবতে হবে নাতি-নাতনি, কন্যা, সন্তান এবং নিজের কথাও। কিন্তু আমি পারছি না। এই বিপর্যয় এতটাই বড় যে আমি আমার স্ত্রী ও ছোট্ট এই বাচ্চাটিকে রেখে যাওয়া পুত্রবধূকে কোনোভাবেই ভুলতে পারছি না।’

আদলি মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছেন জানিয়ে বলেন, মানুষকে সব যন্ত্রণা থেকে একমাত্র মৃত্যুই পারে মুক্তি দিতে। তাই অপেক্ষাটা কেবল সেই অন্তিম লগ্নের!

মাথা গোজার ঠাঁই নাই, নেই পর্যাপ্ত খাবার, পানি, ওষুধসহ বেচেঁ থাকার জন্য আবশ্যকীয় অন্যান্য উপাদান। তবুও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর নিজের বিধ্বস্ত বাড়ি-ঘরের কাছেই ফিরেছেন কয়েক লাখ উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনি। কেউ আদলির মতো স্বজনদের মরদেহ খুঁজছেন, কেউ নিজের অতীত স্মৃতি হাতড়ে বেঁচে থাকতে চাইছেন। কেউবা নতুন করে আবার বাঁধতে চাইছেন স্বপ্ন।

সূত্র : ভায়োরি নিউজ

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

১২ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

জুতা পরে জানাজার নামাজ পড়া কি জায়েজ?

প্রতিদিনের সাধারণ যে অভ্যাসেই কমে যাচ্ছে আপনার মোবাইলের আয়ু

যে গ্রামে বসবাস করলেই মিলবে ২৭ লাখ টাকা!

পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে তুমুল সংঘর্ষ

‘শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের শহীদ পরিবারকে সহযোগিতা করবে সরকার’

অসুস্থ বিএনপি নেতা ডা. রফিকের খোঁজ নিতে বাসায় জোনায়েদ সাকি

আফগানদের কাছে নাস্তানাবুদ হয়ে বাংলাদেশের সিরিজ হার

যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবল ম্যাচ শেষে এলোপাতাড়ি গুলি, নিহত ৪

চট্টগ্রামে কনসার্টে গোলাগুলি, গুলিবিদ্ধ ১

১০

চিহ্নিত ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠানের ওপর দেওয়া উচিত নয় : বিএনপি

১১

জবি তরুণ কলাম লেখক ফোরামের নেতৃত্বে ইমন-সোহান

১২

এনসিপির ‘পলিসি ও রিসার্চ উইং’ গঠন, দায়িত্ব পেলেন যারা

১৩

নড়াইলে সাংবাদিকদের মিলনমেলা

১৪

‘তিন মাসের মধ্যে ৬ লেনের কাজ দৃশ্যমান হবে’

১৫

শাবিপ্রবির ২৫ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ বাতিলের সিদ্ধান্ত

১৬

ওমরজাইয়ের বোলিং তোপে বিপদে বাংলাদেশ

১৭

প্রবীণদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে : টুকু

১৮

শুধু বক্তব্যে নয়, বাস্তব কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে বিএনপি মানুষের পাশে রয়েছে : আনোয়ারুজ্জামান

১৯

গুম-খুনে জড়িতদের সঙ্গে আপস নেই : আখতার হোসেন

২০
X