বিশ্বখ্যাত সুইডিশ জলবায়ু ও মানবাধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ইসরায়েল থেকে ফ্রান্সগামী একটি ফ্লাইটে ইসরায়েল ছেড়েছেন। তিনি অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উদ্দেশে একটি ত্রাণবাহী জাহাজে ছিলেন, যেটি স্থানীয় সময় সোমবার (৯ জুন) ইসরায়েলি সেনারা আটকে দেয়।
মঙ্গলবার (১০ জুন) সংবাদমাধ্যম সিএনএনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
এ বিষয়ে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স-এ এক পোস্টে লিখেছে, ‘গ্রেটা থুনবার্গ ফ্রান্স হয়ে সুইডেনে ফিরে গেছেন।’ এ পোস্টে গ্রেটার বিমানে ওঠার দুটি ছবিও প্রকাশ করা হয়।
উল্লেখ্য, ২২ বছর বয়সী গ্রেটা থুনবার্গ বিমানে ভ্রমণ না করার জন্য পরিচিত। ২০১৯ সালে জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি সমুদ্রপথে নিউইয়র্ক গিয়েছিলেন, যা বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়।
অন্যদের কী হলো?
গ্রেটার সঙ্গে থাকা জাহাজ ‘ম্যাডলিন’-এর পাঁচজন ফরাসি সহকর্মী এখনো ইসরায়েল ছাড়তে রাজি হননি।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো এক্সে জানিয়েছেন, ‘গত রাতে আমাদের কনসাল ছয়জন ফরাসি বন্দির সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের পরিবারকে জানানো হয়েছে। একজন স্বেচ্ছায় ফিরে যাচ্ছেন, বাকিদের জোরপূর্বক বিতাড়ন করা হবে।’
আটক ফরাসিদের মধ্যে রয়েছেন ইউরোপীয় সংসদের সদস্য রিমা হাসান। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছে রিমা ও তার সঙ্গীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
ইসরায়েল আগেই জানিয়েছিল, যারা স্বেচ্ছায় দেশ ছাড়বে না, তাদের আদালতের মাধ্যমে বহিষ্কার করা হবে।
জাহাজ কোথা থেকে এসেছিল?
জাহাজ ‘ম্যাডলিন’ ইতালির সিসিলির কাতানিয়া শহর থেকে রওনা দেয় ১ জুন। এটি পরিচালনা করছিল আন্তর্জাতিক সংগঠন এফএফসি, যারা ইসরায়েলের গাজা অবরোধকে অবৈধ বলে মনে করে এবং তা ভাঙার জন্য নৌ-অভিযান চালায়।
এই জাহাজে ওষুধ, শিশুদের দুধ, চাল, ময়দা, স্যানিটারি পণ্য, পানি বিশুদ্ধকরণ কিটসহ নানা জরুরি ত্রাণ ছিল। গাজায় চলমান যুদ্ধ ও ১১ সপ্তাহের অবরোধে প্রায় ২১ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্যসংকটে পড়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক
ইসরায়েল বলছে, তারা আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে গাজায় যে কোনো জাহাজ প্রবেশ বন্ধ রেখেছে। তাদের দাবি, এসব জাহাজ ‘সেলফি ইয়ট’ তথাকথিত সেলিব্রিটিদের নিয়ে প্রচারের জন্য পরিচালিত।
ইসরায়েল ২ মার্চ থেকে গাজায় মানবিক ত্রাণ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মে মাসের শেষ দিকে সামান্য ত্রাণ প্রবেশ করতে দেয়। কিন্তু মানবিক সংগঠনগুলো বলছে, এটি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম এবং দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা বাড়ছে।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি পাঁচজন গাজাবাসীর একজন এখন চরম খাদ্য সংকটে আছে।
নতুন বিতরণব্যবস্থাও নিরাপদ নয়
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সহায়তায় গঠন করা গাজার মানবিক ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামের নতুন ত্রাণ বিতরণব্যবস্থাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গত সপ্তাহে অনেক ফিলিস্তিনি এই ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। জাতিসংঘ একে ‘মৃত্যুফাঁদ’ বলে অভিহিত করেছে।
মানবাধিকার সংস্থার নিন্দা
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ইসরায়েলের এই অভিযান আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। মধ্যরাতে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ত্রাণবাহী জাহাজে অভিযান চালানো মানবিক ও আইনি দিক থেকে বিপজ্জনক।
গ্রেটা থুনবার্গ ও তার সহকর্মীরা একটি শান্তিপূর্ণ ও প্রতীকী ত্রাণ মিশন পরিচালনা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনীর বাধায় তারা গাজায় পৌঁছাতে পারেননি। এই ঘটনার ফলে আবারও গাজার মানবিক বিপর্যয়, অবরোধ ও আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে বিতর্ক সামনে এলো।
মন্তব্য করুন