

ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের মেক্সিকোতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের দাবি, এটি তেহরানের পক্ষ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতকে লাতিন আমেরিকায় সম্প্রসারিত করার সর্বশেষ প্রচেষ্টা।
শুক্রবার (০৭ নভেম্বর) ডেইলি সাবাহর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মার্কিন এক কর্মকর্তা জানান, ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) অভিজাত শাখা কুদস ফোর্স ২০২৪ সালের শেষের দিকে এই পরিকল্পনা শুরু করে। তবে চলতি বছরের শুরুতেই মার্কিন গোয়েন্দারা তা নস্যাৎ করে দেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ষড়যন্ত্রটি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে এবং বর্তমানে কোনো হুমকি নেই।,
তিনি বলেন, এটি ইরানের দীর্ঘ ইতিহাসের আরেকটি অধ্যায়— যেখানে তারা বিশ্বজুড়ে কূটনীতিক, সাংবাদিক, ভিন্নমতাবলম্বীসহ যেকোনো বিরোধীর বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী হামলার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এটি প্রতিটি দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয় হওয়া উচিত, যেখানে ইরানের উপস্থিতি রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ বা কীভাবে ষড়যন্ত্রটি ভেস্তে দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি। জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশন বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আগে থেকেই উল্লেখ ছিল যে, ইরানি অপারেটিভরা লাতিন আমেরিকায় লক্ষ্যবস্তু খুঁজছে—যেখানে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে তেহরানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
ডেইলি সাবাহ জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত ইরানি দূতাবাসে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর এ অভিযোগ তোলা হয়। ওই হামলায় ইরানের আইআরজিসির কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত হন। এরপর ইরান প্রতিশোধের হুমকি দেয় এবং পরবর্তীতে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়।
এক বছর পর, ইসরায়েল ইরানে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। এতে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। যুক্তরাষ্ট্রও ওই অভিযানে অংশ নেয় এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের সরকার এখনো ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাসের প্রধান সমর্থক হিসেবে বিবেচিত। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে নজিরবিহীন আক্রমণ চালানোর পর থেকে দুই দেশের সংঘাত ব্যাপক আকার ধারণ করে। ইসরায়েলের পাল্টা অভিযানে গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের অভিযোগ, আইআরজিসির কুদস ফোর্স বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলি ও ইহুদি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার পরিকল্পনা করছে।
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ইসরায়েল ইরানের অভ্যন্তরে একাধিক বিমান হামলা চালায়। এতে অন্তত ১১ জন পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং ৩০ জন উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কাজেমি এবং নতুন নিয়োগ পাওয়া যুদ্ধকালীন চিফ অব স্টাফ জেনারেল আলি শাদমানি।
অন্যদিকে তেহরান এসব হামলাকে ‘সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড’ হিসেবে নিন্দা জানিয়ে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করে আসছে।
মন্তব্য করুন