অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার মাঝ বরাবর নতুন একটি রাস্তা তৈরি করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। রাস্তাটি পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে গিয়ে দুই ভাগে ভাগ করেছে গাজাকে। সম্প্রতি স্যাটেলাইটে তোলা একটি ছবিতে বিষয়টি ধরা পড়েছে। ইসরায়েলের দাবি, শুধু পণ্য ও ত্রাণ সরবরাহের উদ্দেশ্যেই নির্মাণ করা হয়েছে রাস্তাটি।
তবে অনেক বিশ্লেষক উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, রাস্তাটিকে একটি স্থায়ী অবকাঠামো হিসেবে রূপ দিতে পারে ইসরায়েল। তাদের আশঙ্কা, রাস্তাটিকে হয়তো একটি প্রাচীর হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে, যেন ফিলিস্তিনিরা গাজার উত্তরাঞ্চলে নিজেদের বাসস্থানে আর ফিরে যেতে না পারেন। গাজার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার ব্যাপারে ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার একটি অংশ হতে পারে রাস্তাটি।
নির্মিত নতুন রাস্তাটি নাহাল অজ কিবুৎজের নিকটবর্তী ইসরায়েল-গাজার সীমান্ত প্রাচীর থেকে শুরু হয়ে গাজার ওপর দিয়ে গিয়ে পশ্চিমে উপকূলীয় এলাকায় শেষ হয়েছে। ছোট ছোট আরও অনেক রাস্তা গাজার পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলকে যুক্ত করলেও তৈরি করা নতুন রাস্তাটি একেবারে সোজাসুজি গিয়ে দুই ভাগে ভাগ করেছে গাজাকে।
বিবিসির বিশ্লেষণ করা স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, নির্মিত রাস্তাটিকে অন্যান্য রাস্তার সঙ্গে সংযুক্ত করতে পাঁচ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা নতুন করে তৈরি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার পূর্বাঞ্চলে এই রাস্তাটির প্রথম অংশ নির্মাণ শুরু হয় গত অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের শুরুর মাঝামাঝি সময়ে। কিন্তু রাস্তাটির বেশিরভাগ অংশই তৈরি করা হয়েছে ফেব্রুয়ারি ও মার্চের প্রথম দিকে। ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাস্তাটির পাশে যেসব ভবন ছিল, সেগুলো গত ডিসেম্বর মাসের শেষ থেকে শুরু করে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সাবেক একজন কর্মকর্তা জানান, নতুন রাস্তাটির মাধ্যমে ইসরায়েলের জন্য গাজার ভেতরে প্রবেশ ও বের হতে সুবিধা হবে। কারণ গাজার পূর্ণ প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা এবং সব ধরনের দায়িত্ব থাকবে ইসরায়েলের হাতে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধপরবর্তী গাজার বিষয়ে তার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন, যেখানে বলা হয়েছিল অনির্দিষ্টকালের জন্য গাজার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করবে ইসরায়েল। নবনির্মিত রাস্তাটি সেই পরিকল্পনারই অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গাজা নিয়ে ইসরায়েলের যুদ্ধপরবর্তী কৌশল এমন হলে তা বিতর্ক আরও উসকে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন