‘মেটাল অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্ক’ বা এমওএফ উদ্ভাবনের জন্য ২০২৫ সালের রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী। তাদের মধ্যে রয়েছেন ফিলিস্তিনি এক শরণার্থী পরিবারে জন্ম নেওয়া ওমর এম. ইয়াগি। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন।
ওমর ইয়াগির জন্ম ১৯৬৫ সালে জর্ডানের রাজধানী আম্মানে। তার বাবা-মা ছিলেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি, যারা যুদ্ধের কারণে দেশ ছেড়ে জর্ডানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। শৈশবে দারিদ্র্য ও অনিশ্চয়তার মধ্যেই বেড়ে ওঠেন ওমর। পরিবারটি একসময় একটি ছোট রুমে গাদাগাদি করে থাকত, যেখানে পানির প্রকট সংকট ছিল। দুই সপ্তাহ পর পর কয়েক ঘণ্টার জন্য পানি পাওয়া যেত— এই অভিজ্ঞতাই পরবর্তীতে তার গবেষণার অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাবার উৎসাহে ওমর যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তখন ইংরেজিতে খুব একটা দক্ষ না হলেও এক কলেজে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ধীরে ধীরে নিজের প্রতিভা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন। পরবর্তীতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
বিজ্ঞানকে তিনি কেবল গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ রাখেননি; বরং বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানে প্রয়োগের পথ খুঁজেছেন। বিশেষত, পানিসংকট নিরসন এবং বায়ুমণ্ডল থেকে পানি আহরণের প্রযুক্তি বিকাশে তার অবদান অনন্য। এই লক্ষ্যে তিনি এমন এক নতুন কাঠামো তৈরি করেন, যা বায়ু থেকে আর্দ্রতা শোষণ করে বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন করতে সক্ষম।
তার এই গবেষণা শুধু রসায়নের ক্ষেত্রে নয়, পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
বিশ্বজুড়ে তার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২১ সালে সৌদি আরব তাকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করে। দেশটির ‘ভিশন ২০৩০’ কর্মসূচির আওতায় বিশ্বের গুণী বিজ্ঞানীদের সম্মান জানাতে তাকে সৌদি নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।
ওমর ইয়াগির সঙ্গে এ বছর নোবেল পেয়েছেন আরও দুই বিজ্ঞানী— জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুসুমু কিতাগাওয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড রবসন। তারা তিনজনই যৌথভাবে এমওএফ প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে পদার্থ রসায়নে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন।
নোবেল কমিটি জানায়, তাদের উদ্ভাবন এমন এক প্রযুক্তির ভিত্তি স্থাপন করেছে, যা গ্যাস সংরক্ষণ, কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ, পানি উৎপাদন এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ভবিষ্যৎ উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।
দরিদ্র এক ফিলিস্তিনি পরিবারের ঘর থেকে শুরু করে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক স্বীকৃতি অর্জন— ওমর ইয়াগির জীবনের এই যাত্রা এখন তরুণ বিজ্ঞানীদের প্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে।
মন্তব্য করুন