কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আগ্নেয়গিরির ছাই-লাভা সরাতেই চমক প্রাচীন পম্পেই নগরীর দেয়ালে

প্রাচীন পম্পেই নগরীর দেয়ালে শিল্পীদের অপূর্ব কীর্তি। ছবি : সংগৃহীত
প্রাচীন পম্পেই নগরীর দেয়ালে শিল্পীদের অপূর্ব কীর্তি। ছবি : সংগৃহীত

দক্ষিণ-পশ্চিম ইটালির বন্দর নগরী পম্পেই। ৭৯ খ্রিস্টাব্দে মাউন্ট ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল শহরটি। একইসঙ্গে আগ্নেয়গিরি থেকে বেরিয়ে আসা লাভার নিচে চাপা পড়েছিল পার্শ্ববর্তী হারকিউলেনিয়ামসহ রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃত এলাকা। সেখানেই দেখা গেল এক চমক।

১৯৪৫ বছর ধরে জমাটবদ্ধ লাভা ও পুরু ছাইয়ের নিচে চাপা পড়ে ছিল উঁচু দেওয়ালের ঘরটি। সেই আস্তরণ সরাতেই বেরিয়ে এলো ঝলমলে ফ্রেস্কো, দুই হাজার বছর আগের কোনো নাম না জানা শিল্পীদের অপূর্ব কীর্তি।

প্রচীন পম্পেই নগরীকে খুঁজে বের করতে ১৯ শতকের গোড়ার দিকে খননকাজ শুরু করে ইটালি। দীর্ঘ সময়ে দফায় দফায় খননকাজ চলেছে। ছাই ও জমে যাওয়া লাভা সরিয়ে আস্তে আস্তে বেরিয়ে এসেছে গোটা একটা শহর। বর্তমানে বছরে ২৫ লাখ পর্যটক পম্পেইয়ের ধ্বংসস্তূপ দেখতে আসেন।

দুইশো বছরের বেশি সময় ধরে পম্পেই ও তার আশপাশের এলাকায় খনন চললেও এখনো পর্যন্ত এখানকার এক তৃতীয়াংশ এলাকা ছাই ও লাভার তলায় চাপা পড়ে রয়েছে। সে রকমই একটি এলাকায় খননকাজে চালিয়ে কয়েক সপ্তাহ আগে বেরিয়ে এসেছে একটি বিশাল ঘর। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, এটি একটি ব্যাঙ্কোয়েট রুম বা পালা-পার্বণে ব্যবহৃত ভোজ-কামরা।

বিশাল এই ঘরটির মেঝে ১০ লাখেরও বেশি ছোট ছোট সাদা টাইলসের টুকরো দিয়ে মোজাইক করা। দেওয়ালগুলোর রং কালো। আর সেই কালো রংয়ের ওপরে কমলা, সবুজ, নীল ও হলুদের মতো উজ্জ্বল রং ব্যবহার করে আঁকা হয়েছে গ্রিক প্রত্নকথার নানা দৃশ্য।

ছাই-লাভার পলেস্তারা সরিয়ে এখনো পর্যন্ত দুটি ফ্রেস্কো বের করেছেন প্রত্নবিদরা। একটি ছবিতে সূর্য ও সংগীতের গ্রিক দেবতা অ্যাপোলো রাজকুমারী কাসান্দ্রাকে প্রেম নিবেদন করছেন। অ্যাপোলোর হাতে বাঁশি। আর একটি ছবিতে রয়েছেন ট্রয়ের রাজকুমার প্যারিস ও স্পার্টার রানি হেলেন। হেলেনের পাশে সম্ভবত তার পরিচারিকা। প্যারিসের পায়ের কাছে বসে রয়েছে একটি বাঘ। মিথ অনুযায়ী প্যারিসের প্রেমে পড়ে স্বামী-সংসার ত্যাগ করে ট্রয় পাড়ি দিয়েছিলেন হেলেন।

প্যারিসের সঙ্গে হেলেন পালিয়ে যাওয়ার পরেই ট্রয় আক্রমণ করেন গ্রিক রাজারা। দশ বছরের দীর্ঘ যুদ্ধের পরে ট্রয়ের পতন হয়। গ্রিক কবি হোমার তার দুটি মহাকাব্যে সেই যুদ্ধ এবং তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ঘটনাক্রমকে অমর করে গেছেন।

হোমারের প্রায় ৯শ বছর পরে একটি রোমান নগরীর দেওয়ালে গ্রিক প্রত্নকথা-সম্পর্কিত এই ছবি ইতিহাসবিদদের পম্পেই সম্পর্কে নতুন করে ভাবাচ্ছে। পম্পেই পুরাতাত্ত্বিক এলাকার দায়িত্বে থাকা গবেষক গাব্রিয়েল জুকট্রিগেল বলেন, ‘পম্পেইকে এত দিন গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর ভেবে এসেছি। কিন্তু সাম্প্রতিক এই আবিষ্কার আমাদের সামনে এই প্রাচীন নগরীর অন্য একটি সত্তা তুলে ধরেছে। পম্পেই যে রোমান সাম্রাজ্যের শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থানও ছিল, সে বিষয়ে আমাদের আর সন্দেহ নেই।’

ফ্রেস্কোগুলো সংরক্ষণের পদক্ষেপ নিয়েছেন পুরাতাত্ত্বিকরা। আপাতত সংবাদমাধ্যমের কিছু প্রতিনিধি ছাড়া কাউকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে ভবিষ্যতে সাধারণ পর্যটকদের জন্য ঘরটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় গবেষণা মেলা শুরু

চীনের সঙ্গে পশ্চিমাদের শত্রুতার ইতিকথা

৫ ঘণ্টা পর ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ শুরু

মাটিতেও যেভাবে চলে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ

গজারিয়া গণহত্যা দিবস আজ

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ২৮ জনকে সাজা

উপজেলার জনগণ সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে : সালাম

আজকের নামাজের সময়সূচি

বগি লাইনচ্যুত, ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

১০

ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা

১১

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায় আজ 

১২

উপজেলা চেয়ারম্যানকে হারালেন ভাইস চেয়ারম্যান

১৩

হোসেলুর জোড়া গোলে ফাইনালে মাদ্রিদ

১৪

ময়মনসিংহের ৩ উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত যারা

১৫

কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় বাদাম চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা

১৬

বিপুল ভোটে বিজয়ী হলেন সেই প্রতিবন্ধী সুইটি

১৭

মাদ্রাসার শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ

১৮

পরিবেশ দূষণ / টায়ার গলিয়ে তেল উৎপাদন

১৯

ছাত্রের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষিকা

২০
X