চমৎকার এক শহর ছিল পম্পেই। রোমান সাম্রাজ্যের সময়কার এই নগরীতে পর্যটক ঠাসা থাকত। ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে এ নগরী ধ্বংস হয়ে গেলেও এই ধ্বংসাবশেষের মধ্যেই মানুষ আবারও ফিরে এসে বসবাস করেছিল। এ বিষয়ে নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ খবর প্রকাশ করা হয়। গবেষকরা বলছেন, আগ্নেয়গিরির বিধ্বংসী অগ্ন্যুৎপাতের পর পম্পেই নগরী থেকে অন্য কোথাও গিয়ে নতুন জীবন শুরু করার সামর্থ্য যারা হারিয়েছিল, তাদের কেউ কেউ আবারও পম্পেইয়ের ধ্বংসস্তূপেই ফিরে আসে। শুধু তাই নয়, যারা ফিরে এসেছিল, তারা সম্ভবত অন্য জায়গা থেকে বাসস্থান খুঁজতে আসা নতুন কিছু লোকের সঙ্গও পেয়েছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৭৯ সালে ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের আগপর্যন্ত পম্পেই ছিল একটি জনবহুল শহর। এই শহরে বাস করত প্রায় ২০ হাজার মানুষ। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে শহরটি ছাই ও আগ্নেয় পাথরে চাপা পড়ে যায় এবং আশ্চর্যজনকভাবে সংরক্ষিত থাকে শতাব্দীর পর শতাব্দী। ষোড়শ শতকে এটি পুনরাবিষ্কৃত হয়। অতীতেও অনুমান করা হয়েছিল, ধ্বংসের পর কেউ কেউ সেখানে ফিরে এসেছিল। তবে গতকাল বুধবার (৬ আগস্ট) প্রত্নতাত্ত্বিকরা এক বিবৃতিতে জানান, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় সেই ধারণা নিশ্চিত হয়েছে। সাইটটির পরিচালক গ্যাব্রিয়েল জুখত্রিগেল বলেন, নতুন খননের মাধ্যমে বিষয়টি এখন আরও স্পষ্ট। খ্রিষ্টপূর্ব ৭৯-এর পর পম্পেই আবারও মাথা তোলে। যদিও সেটি আর সুশৃঙ্খল নগরী ছিল না, বরং একটি অস্থায়ী ও রুক্ষ বসতির মতো হয়ে পড়েছিল। যেন ধ্বংসাবশেষের মধ্যে গড়ে ওঠা কোনো ক্যাম্প।
গবেষকদের মতে, এ অনানুষ্ঠানিক বসতি পঞ্চম শতক পর্যন্ত টিকে ছিল। তবে সেখানে প্রথাগত রোমান নগরের মতো অবকাঠামো বা পরিষেবা ছিল না। তবে ধ্বংসাবশেষে মূল্যবান বস্তু খোঁজার সুযোগ ছিল। বিশ্বাস করা হচ্ছে, লোকজন বাড়ির ওপরের তলায় আগ্নেয় ছাইয়ের ওপরে বাস করত। আর নিচের তলাগুলো গুদামে রূপান্তরিত করেছিল। জুখত্রিগেল বলেন, পম্পেই ধ্বংসের ঘটনা আমাদের স্মৃতিকে একচেটিয়াভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। ফলে সংরক্ষিত নিদর্শনগুলো উদ্ধারের তাড়নায় পরে যারা বসবাস করেছিল, তাদের প্রমাণ প্রায় সময়ই নথিভুক্ত না করেই মুছে ফেলা হয়েছে।
পম্পেই বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। প্রতি বছর লাখো মানুষ সেখানে ঘুরতে যায়। এটি প্রাচীন রোমান জীবনের একটি দুর্লভ জানালার মতো কাজ করে।
মন্তব্য করুন