কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত-পাকিস্তান। হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার অভিযোগ করে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। এবার দেশটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে।
সোমবার ( ০৫ মে) এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের পর নতুন ৬টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ভারত। সিন্ধু নদীর পানি আটকাতে এসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
সূত্রের বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটক নিহতের এক সপ্তাহ পর, ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ১৯৬০ সালের ইন্দুস ওয়াটারস ট্রিটি (আইডব্লিউটি) বা সিন্ধু পানি চুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে একাধিক হাইড্রোইলেকট্রিক প্রকল্পের জলাধার সংস্কার ও নতুন প্রকল্প নির্মাণের তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, সালাল (৬৯০ মেগাওয়াট) এবং বাগলীহার (৯০০ মেগাওয়াট) জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বহু বছর পর ‘রিজার্ভয়ার ফ্লাশিং’ অর্থাৎ তলদেশ থেকে পলি সরানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই কাজ এতদিন সিন্ধু পানি চুক্তির অধীনে নিষিদ্ধ ছিল, কারণ ভাটির দেশ (পাকিস্তান) এই ধরনের হঠাৎ পানি ছাড়া হলে বন্যা ও ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে পারে।
কেন্দ্রীয় সরকার আরও ছয়টি স্থগিত থাকা প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছে – যার মধ্যে সাওয়ালকোট (১,৮৫৬ মেগাওয়াট), কিরথাই-১ ও ২ (মোট ১,৩২০ মেগাওয়াট) এবং পাকাল দুল (১,০০০ মেগাওয়াট) অন্যতম। সব মিলিয়ে প্রায় ১০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে এগোচ্ছে সরকার।
প্রতিবেদেনে বলা হয়েছে, সাধারণভাবে সিন্ধু পানি চুক্তির অধীনে নতুন প্রকল্প শুরু করতে ভারতকে পাকিস্তানের ছয় মাস আগাম নোটিশ দিতে হতো এবং পাকিস্তান সেগুলোর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফোরামে আপত্তি তুলতো। ফলে প্রকল্পগুলোর নির্মাণে দীর্ঘ বিলম্ব হতো।
চুক্তি স্থগিত হওয়ায় ভারত এখন সরাসরি কাজ শুরু করতে পারছে, এবং কাশ্মীরে অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ ও সেচ ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।
পাকিস্তান এই পদক্ষেপকে ‘যুদ্ধের সমতুল্য’ আখ্যা দিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ভারতের পক্ষ থেকে কোনো পানিপ্রবাহ বন্ধ করা হলে তারা আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে।
পাকিস্তানের সেচ ব্যবস্থা মূলত পশ্চিমের নদীগুলোর ওপর নির্ভরশীল। পানিপ্রবাহে সামান্য পরিবর্তনও ফসল উৎপাদনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে সিন্ধুর পানিতে এ ধরনের পদক্ষেপে বড় ক্ষতিতে ফেলতে পারে পাকিস্তানকে।
বিদ্যুৎ খাতেও ভয়াবহ ক্ষতিতে পড়তে পারে পাকিস্তান। দেশটির এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ জলবিদ্যুৎ থেকে আসে। উজানে পানি প্রবাহ কমে গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। এছাড়া পানি সংকট আন্তঃপ্রাদেশিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে, বিশেষ করে পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশের মধ্যে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও ভারত এখনই পানি পুরোপুরি বন্ধ করতে পারছে না – কারণ প্রয়োজনীয় রিজার্ভয়ার নেই – তবে এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের জন্য কূটনৈতিক চাপের একটি কৌশল। ইতোমধ্যে বাগলীহার বাঁধে কিছুক্ষণের জন্য জল রোধ করা হয়েছিল, যা স্পষ্টতই একটি সতর্কবার্তা।
এনটিভি জানিয়েছে, সামগ্রিকভাবে সিন্ধু পানি চুক্তির অধীনে বাঁধ এবং জলাধার নির্মাণ নিষিদ্ধ করা অথবা নিয়ন্ত্রিত ছিল। উদাহরণস্বরূপ, পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দকৃত তিনটি নদীর উপর, ভারত কেবল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে পারে। তবে কোনো ধরনের বড় বড় জলাধার সুবিধার অনুমোদন নেই।
সিন্ধু বিরোধ নিয়ে কাজ করা কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের সাবেক প্রধান কুশবিন্দর ভোহরা বলেণ, এখন যদি ভারত পাকিস্তানের পানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার হুমকি দিয়ে এগিয়ে যায়, তাহলে আরও বাঁধ এবং জলাধার নির্মাণ করতে হবে। চুক্তি স্থগিতাদেশের অর্থ হল ভারত এখন ইচ্ছামতো এই ধরনের প্রকল্পগুলো চালিয়ে যেতে পারে।
মন্তব্য করুন