কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা সামরিক সংঘাতে গড়াল। মঙ্গলবার (৬ মে) ভারত চির বৈরী প্রতিবেশী দেশের ৯টি স্থানে হামলা চালায়। জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা আক্রমণ করে। এতে ভারতের বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়। চলমান সংঘাত শুধু ভারত-পাকিস্তানেই নয় বরং উদ্বেগ ছড়াচ্ছে সারা বিশ্বে। বিশেষ করে ২০১৯ সালের একটি গবেষণা সামনে আসায় উৎকণ্ঠায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
৫ বছর আগের সেই গবেষণায় ভয়াবহ ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়। বলা হয়, কাশ্মীর বিরোধের জের ধরে ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিক যুদ্ধে হবে ২০২৫ সালে। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি মানুষ নিহত হবে। পারমাণবিক বিস্ফোরণে জলবায়ুর ওপর চরম বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাতে যুদ্ধ-পরবর্তী বছরগুলোতে আরো বহু কোটি মানুষ মারা যাবে। অনাহারে মারা যাবে দুই দেশের আরও কয়েক কোটি মানুষ।
আমেরিকার রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এমন ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। তাতে যুদ্ধ শুরুর প্রেক্ষাপট নিয়ে দুটি দৃশ্যকল্প তৈরি করা হয়। একটিতে বলা হয়, কাশ্মীরে আক্রমণ করবে ভারত। তার পর শুরু হয়ে যাবে পারমাণবিক যুদ্ধ। তবে উভয় দেশে যদি বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন নেতারা ক্ষমতায় থাকেন তাহলে হয়তো এরকম কিছু হবে না, এবং একারণেই এখনও পর্যন্ত সেরকম কিছু হয়নি। কিন্তু এরকম আরো নানা রকমের কাল্পনিক দৃশ্য তৈরি করা যায় যার ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়া কয়েকজন জেনারেলকে আলাদা আলাদা দুটো কক্ষে বসিয়ে ওই দৃশ্যকল্প তৈরি করা হয়।
গবেষণ প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ওই সময় ভারতীয় সেনা বাহিনীর একজন সাবেক কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জি বলেন, ২০২৫ সালে না হলেও যে কোনো সময় এই দুটো দেশের মধ্যে যুদ্ধ হতে পারে। তবে কোনো দেশ ইচ্ছে করে কিছু করতে চায় না। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত বিভিন্ন কারণে - যেমন ভয়ে, রাগে অনেক সময় অনেক কিছুই হয়ে যায়।
পাকিস্তানে কায়দে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরমাণু বিজ্ঞানী ড. পারভেজ হুডভাই বলেন, কোনো পরিকল্পনা থেকে নয়, বরং দুর্ঘটনাবশতই পারমাণবিক যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। দুটো দেশের মধ্যে যদি অনন্তকাল ধরে উত্তেজনা বিরাজ করে এবং তাদের কাছে পরমাণু অস্ত্র থাকে, তাহলে তো অনেক কিছুই ঘটতে পারে।
তিনি আরও বলেন, কাশ্মীরের পরিস্থিতি যতোই শান্ত করা যাবে, পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকিও ততটা কমে আসবে। দুর্ভাগ্যজনক হলো সেরকম কিছুই হচ্ছে না। এছাড়াও পরিবেশগত কিছু পরিবর্তনও পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে দিতে পারে। পাকিস্তানের বেশিরভাগ পানি আসে হিমালয় থেকে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমালয়ের সব হিমবাহ গলে উধাও হয়ে গেলে কাশ্মীর পাকিস্তানের জন্যে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে পানির উৎসের জন্য। এ নিয়ে যদি সমঝোতা না হয় তাহলে তো যুদ্ধের আশঙ্কাও বেড়ে যায়।
বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটাই গবেষণার সঙ্গে মিলে যায়। এবারের সংঘাতের জের কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলা। এ নিয়ে উত্তেজনা বাড়ে ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করলে। পাকিস্তান ঘোষণা করে, তারা কখনো সিন্ধুর পানির অধিকার ছেড়ে দেবে না। তা আদায়ে যা করা দরকার তাই করবে। অপরদিকে ভারতীয় রাজনীতিবিদরা পাকিস্তানে পানি সরবরাহ বন্ধে বারবার হুমকি দিয়ে আসছে।
এদিকে মঙ্গলবারের ভারতীয় হামলার তাৎক্ষণিক জবাব দিয়েছে পাকিস্তান। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, লাইন অব কন্ট্রোলে দুই দেশের সেনাদের গোলাগুলি চলছে। বিশ্লেষকরা বলছে, এমন পরিস্থিতিতে উভয়ই চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে সতর্কাবস্থায় নিজ সীমান্তে অবস্থান করছে। যদি কোনো পক্ষ আবার আক্রমণ করে বসে তবে পাল্টা হামলায় সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। আর যদি তা হয় তবে আত্মরক্ষায় বা শত্রুকে ধ্বংস করতে কোনো এক পক্ষ পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করলে সর্বগ্রাসী যুদ্ধ দেখবে বিশ্ব।
যেমনটা ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, পরমাণু অস্ত্র যখন আছে তখন পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কাও আছে। ইতোমধ্যেই এরকম একটি যুদ্ধ হয়ে গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমায় পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল, যা থেকে আমরা ভবিষ্যতেও এ রকম যুদ্ধের আশঙ্কা করতে পারি।
মন্তব্য করুন