পাকিস্তানে অবৈধভাবে বসবাসকারী আফগান শরণার্থীরা দেশটি ছাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে ৩০টি পরিবারের এক হাজারের বেশি শরণার্থী সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে ফিরে গেছেন। আজ শুক্রবার (৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে জিও নিউজ।
গত মঙ্গলবার পাকিস্তানে বসবাসরত ১৭ লাখের বেশি আফগান শরণার্থীকে ১ নভেম্বরের মধ্যে দেশ ছাড়ার আল্টিমেটাম দেয় দেশটির সরকার। ১ নভেম্বরের পর থেকে অভিযানে নামবে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সে সময় যদি কোনো অবৈধ শরণার্থী ধরা পড়ে, তাহলে তাদের জোর করে নিজেদের দেশে পাঠানো হবে বলে সতর্ক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি। পাকিস্তান সরকারের এমন শক্ত অবস্থানের মুখে গ্রেপ্তার বা আইনি জটিলতা এড়াতে আগেই দেশটি ছাড়া শুরু করেছেন এসব আফগান শরণার্থী।
গতকাল বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের সীমান্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৩০টি পরিবারের এক হাজারের বেশি শরণার্থী তাদের দেশে উদ্দেশে রওনা হয়েছে। শরণার্থীদের জন্য তোরখাম সীমান্তে একটি পার্কিং এলাকা বরাদ্দ করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া তাদের গ্রহণ এবং রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আফগানিস্তানের লাঘমান প্রদেশের বাসিন্দা বারয়ালে হাসরাত দ্য নিউজকে বলেছেন, ৯ সদস্যের পরিবার ২০ বছর ধরে তিনি নওশেরাতে বসবাস করেন। তিনি আফগান নাগরিক। তিনি স্বেচ্ছায় আফগানিস্তানে ফিরে যাচ্ছেন। কেননা তাদের দেশের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি পাকিস্তানের তুলনায় ভালো।
এর আগে গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী আনওয়ার উল হক কাকার এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানে বসবাস করা ১৭ লাখের বেশি আফগান অভিবাসীকে দেশ ছাড়ার আল্টিমেটাম দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি।
সংবাদ সম্মেলনে সরফরাজ বলেন, তাদের কাছে যে কোনো দেশের চেয়ে পাকিস্তানের নাগরিকদের নিরাপত্তা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের নাগরিকদের জান-মালের নিরাপত্তা রক্ষার্থে এই প্রথম ইসলামাবাদ এমন আল্টিমেটাম দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আগামী ১ নভেম্বরের মধ্যে সব অবৈধ শরণার্থীকে নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে। ১ নভেম্বরের পর থেকে অভিযানে নামবে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সে সময় যদি কোনো অবৈধ অনুপ্রবেশাকারী ধরা পড়েন, তাহলে তাদের জোর করে নিজেদের দেশে পাঠানো হবে।
সরফরাজ বুগতি সরাসরি কোনো নাম উল্লেখ না করলেও ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে তিনি যে অবৈধ আফগান শরণার্থীদের বুঝিয়েছেন, তা স্পষ্ট। কারণ পাকিস্তানে আফগানিস্তান ব্যতীত অন্য কোনো দেশের লোকজন শরণার্থী হিসেবে বাস করেন না।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী-বর্তমানে পাকিস্তানের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে নিবন্ধিত শরণার্থীর সংখ্যা ৮ লাখ ৮০ হাজার। অনিবন্ধিত শরণার্থী রয়েছেন ১৭ লাখের বেশি। যাদের কাছে কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এই শরণার্থীদেরই ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পাকিস্তান।
মন্তব্য করুন