কৃষ্ণসাগরে শস্য চুক্তি বাতিলের পর নৌপথে জাহাজ চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় রাশিয়া। দেশটি জানায়, এ শস্য চুক্তি বাতিলের পর এ পথে চলাচলকারী জাহাজগুলোকে যুদ্ধের জন্য সম্ভাব্য অস্ত্রবাহক হিসেবে ধরে নেওয়া হবে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার রুশ সেনাবাহিনী কৃষ্ণসাগরে বেসামরিক জাহাজ চালাতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে যুক্তরাজ্য।
বুধবার (২৬ জুলাই) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের এমন শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের শঙ্কা যে রুশ সেনাবাহিনী যে কোনো সময় কৃষ্ণসাগরে বেসামরিক জাহাজে হামলা চালাতে পারে। তাদের কাছে এ বিষয়ে তথ্য রয়েছে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৃষি কমিশনার জানুসজ ওজসিকোস্কি জানান, ‘সংহতি লেনের’ মাধ্যমে এ অঞ্চলে ইউক্রেনের কৃষি পণ্য রপ্তানির সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। যদিও কৃষকদের প্রতিরোধের কারণে পোল্যান্ড এবং ইউরোপের পূর্বাঞ্চলে ইইউর শস্য রপ্তানি বেশ জটিল প্রক্রিয়া।
আরও পড়ুন : ইউক্রেনের মাইন অপসারণে সময় লাগবে শতশত বছর
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর অফিস জানিয়েছে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে। এসময় তারা শস্য রপ্তানি নিশ্চিতের বিষয়ে একমত হয়েছেন।
এর আগে গত শনিবার (২৩ জুলাই) ন্যাটো মহাসচিব জেন স্টলটেনবার্গের সঙ্গে ফোনালাপে অংশ নেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। এসময় তারা শস্য রপ্তানির জন্য বিকল্প রুট খুঁজে বের করার বিষয়ে একমত হন। তিনি জানান, আগের চেয়ে বর্তমানে ন্যাটোর সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্ক অনেক গাঢ় হয়েছে।
আলোচনার পর স্টলটেনবার্গ এক টুইটবার্তায় জানান, ‘আমরা মস্কোর খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানায়। ন্যাটো ইউক্রেনের সঙ্গে আছে। ন্যাটোর সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্ক আগের চেয়ে অনেক মজবুত হয়েছে’।
অন্যদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জানান, বিশ্বের উচিত রাশিয়ার দাবি মেনে নেওয়া। তাদের ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার শস্য চুক্তি বাতিলের পর থেকে বিশ্বব্যাপী ক্রমেই খাবারের দাম বেড়েছে। বিষয়টি নিয়ে সমাধানে পৌঁছাতে না পারলে বিশ্বব্যাপী খাবারের দাম যুদ্ধের শুরু পর্যায়ে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
আরও পড়ুন : কৃষ্ণ সাগরে শস্যচুক্তি : তুরস্কের দিকে তাকিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র : ব্লিঙ্কেন
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের জুলাইয়ে রাশিয়া ইউক্রেনের মাঝে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় কৃষ্ণসাগরে বছরব্যাপী শস্য রপ্তানি চুক্তি হয়। তবে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ১৭ জুলাই এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় রাশিয়া। রাশিয়ার দাবি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দেওয়া শস্য ও সার রপ্তানিতে বিধিনিষেধ তুলে নিলেই করিডোর পুনরায় চালু করা হবে।
অন্যদিকে ইউক্রেন বলেছে, রাশিয়া সহযোগিতা করুক আর না-ই করুক তারা বিশ্বে শস্য রপ্তানি চালিয়ে যাবে। কেননা বিশ্বকে খাদ্য সংকটে ফেলার একক অধিকার কারও নেই। জাতিসংঘ বলছে, রাশিয়ার এমন পদক্ষেপ বিশ্ব খাদ্য পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।
মন্তব্য করুন