দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানিয়েছেন, এ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন সম্ভব হচ্ছে না এবং যদি যথাযথভাবে কাজ করতে না পারেন, তবে পদে থাকার কোনো অর্থ নেই।
ড. ইউনূসের পদত্যাগের এমন ইচ্ছা প্রকাশের পর এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। সেখানে শিরোনাম করেছে ‘নির্বাচন নিয়ে চাপের মুখে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের হুমকি’।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আদর্শবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের স্বপ্ন জাগে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে থাকা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন সেই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ায়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে হতাশা তৈরি হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমস আরও জানায়, আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে দেশে একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের অন্যতম সম্ভাব্য নেতা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। কিন্তু এখন তিনি রাজনৈতিক ও সামরিক মহলের চাপের মুখে নিজেকে বাধাগ্রস্ত ও একঘরে মনে করছেন।
তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে গড়ে ওঠা এক ধরনের ঐক্য তার নীতিমালা ও নেতৃত্বের প্রতি সংশয় তৈরি করেছে। এদের মতে, ড. ইউনূস নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ধীরগতিতে এগোচ্ছেন।
গত বৃহস্পতিবার একটি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ড. ইউনূস স্পষ্টভাবে বলেন, যদি রাজনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা না পাওয়া যায়, তবে তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন। এমনকি তিনি তার পদত্যাগপত্রের খসড়া তৈরি পর্যন্ত করে ফেলেছিলেন বলে জানিয়েছেন এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। পরে অন্যান্য উপদেষ্টারা তাকে বোঝান, তার পদত্যাগ দেশের স্থিতিশীলতা আরও বিঘ্নিত করবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের ‘এই বছরই নির্বাচন হওয়া উচিত’ বক্তব্যে ড. ইউনূস বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানান এবং এটিকেই তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তার ধারণা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং সেনাবাহিনীর কিছু অংশ তার পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
ড. ইউনূস এর আগেও বলেছিলেন, ২০২৬ সালের জুন নাগাদ একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হতে পারে, তবে নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করেননি। তিনি মনে করেন, বর্তমানে দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের মতো পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি।
অন্যদিকে, বিএনপির দাবি—দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের আগে জনগণের গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট প্রয়োজন। শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর বিএনপি এখন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে মনে করছে।
বৃহস্পতিবারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে দেশের সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন ড. ইউনূস। সেখানে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের অভাব, রাস্তা অবরোধ, সংস্কার উদ্যোগের স্থবিরতা এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দপ্তরের অসহযোগিতার বিষয়টি তুলে ধরেন। এসব কারণে কাজ করতে না পারার হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমি থাকলে কী হবে—যদি কোনো সংস্কারই না হয়?’
সেদিন সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় দেখা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। পরে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ড. ইউনূস পদত্যাগের বিষয়ে গভীরভাবে ভাবছেন।
মন্তব্য করুন