মৃত্তিকা সাহা
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৫২ এএম
আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যাংকে নারী কর্মী বাড়লেও নেতৃত্বে পিছিয়ে

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন
ব্যাংকে নারী কর্মী বাড়লেও নেতৃত্বে পিছিয়ে

পারিবারিক এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং সরকারি-বেসরকারি নীতির কারণে দুই দশক ধরে কর্মক্ষেত্রে বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ। অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ। ব্যাংক খাতও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে সংখ্যানুপাতে ব্যাংকগুলোর প্রারম্ভিক পর্যায়ে নারী কর্মীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও উচ্চপদে এখনো সেভাবে বাড়েনি সংখ্যা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ব্যাংক খাতে কর্মরত নারীর সংখ্যা ৩৪ হাজার ৩৬৮। এই নারীদের মধ্যে বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে বসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অনেকে। আবার ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন নারীরা। তবে উচ্চপদ অর্থাৎ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বা উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদে নারী এখনো হাতে গোনা। দেশে বর্তমানে পরিচালিত ৬১ ব্যাংকের একটিতেও নারী এমডি নেই। তবে গত বছর ট্রাস্ট ব্যাংকে একমাত্র নারী এমডি ছিলেন হুমায়রা আজম। তিনি বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান লংকাবাংলা ফিন্যান্সে এমডির দায়িত্বে আছেন। অবশ্য ডিএমডি পদে বেশ কয়েকজন নারী রয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব বলছে, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংক খাতে মোট জনবল ২ লাখ ৭ হাজার ৯৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৮, আর নারীর সংখ্যা ৩৪ হাজার ৩৬৮। সেই হিসাবে ব্যাংকে নারীকর্মীর অনুপাত ১৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩২ হাজার ৫৬৭ জন বা ১৬ দশমিক ৩২ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে নারী ব্যাংককর্মীর সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ৮০১। ২০২২ সালের জুনের শেষে দেশে নারী ব্যাংককর্মীর সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৫৪৮ বা ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ।

গতকাল সোমবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যাংকে যোগদানের সময় কর্মরত নারীকর্মীর অনুপাত ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ হলেও উচ্চ পর্যায়ে এই অনুপাত ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। অর্থাৎ শুরু থেকে উচ্চপর্যায়ে যেতে যেতে নারীর অনুপাত অর্ধেকে নেমে গেছে। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্যারিয়ারের মাঝামাঝি সময়ে পুরুষের তুলনায় নারীদের ব্যাংকের চাকরি ছাড়ার হার বেশি। পারিবারিক এবং সামাজিক এবং কর্মস্থলের মূল্যায়নের অভাবে অনেকে মাঝপথে চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। নারী ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পারিবারিক ও সামাজিক নানা চাপে তারা ব্যাংক ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। এক নারী ব্যাংকার বলেন, একজন নারী ব্যাংকারকে আবশ্যিকভাবেই ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি দিতে হয়। অনেক ব্যাংক ওই সময়ে বা ওই বছরে তার র্যাংকিং কমিয়ে দেয়। যদিও একজন মা নারী হিসেবে পরিবারে যেমন শ্রম দিচ্ছেন তেমনি তার প্রতিষ্ঠানেও শ্রম দিচ্ছেন। তার পরও র্যাংকিং কমে যাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই তাকে হতাশা গ্রাস করে। শুধু তাই নয়, সমান যোগ্যতাসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও নারীকর্মীদের বেশিরভাগ সময়েই সমান মূল্যায়ন করা হয় না। এ ছাড়া, সব ব্যাংকের সব শাখায় শিশু দিবাযত্নকেন্দ্রের মতো সুবিধা পাওয়া যায় না। এতে বাধ্য হয়ে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অনেক নারীকর্মী মাঝপথে চাকরি ছেড়ে দেন। এসব কারণেই উচ্চপর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে না। তাদের মতে, নারীদের কাজের সঠিক মূল্যায়ন হলে এবং সব ব্যাংকে পর্যাপ্ত শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র ও যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকলে নারী ব্যাংকারের সংখ্যা আরও বাড়ত। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর পর্ষদকেও উদ্যোগ নিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নীতিনির্ধারণী পর্যায়, পরিচালক, বড় ধরনের উচ্চপদে নারীর সংখ্যা এখনো অনেক কম। কর্মক্ষেত্রে নারীর এ অগ্রগতি টেকসই করতে হবে। কর্মপরিবেশ আরও নিরাপদ করতে হবে। এ জন্য বাল্যবিয়ে বন্ধ, উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো জরুরি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন নাগাদ দেশের ব্যাংক খাতে বোর্ড সদস্য বা পরিচালক হিসেবে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল ১৪ দশমিক ০৫ শতাংশ। বছরের ব্যবধানে সেটা কমে হয়েছে ১৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এ সময়ে বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে নারী পর্ষদ সদস্যদের অংশগ্রহণের হার সবচেয়ে বেশি হলেও বিশেষায়িত বাণিজ্যিক ব্যাংকে নারী বোর্ড সদস্যের অংশগ্রহণ শূন্য। আর রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকে নারী বোর্ড সদস্যের হার ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ।

রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগ-সংক্রান্ত নীতিমালায় বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের এক-তৃতীয়াংশই থাকবেন নারী। এ ছাড়া সরকারের শেয়ার রয়েছে, এমন বেসরকারি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও এ নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। সরকারি ব্যাংকগুলোয় নীতিনির্ধারণের জন্য পরিচালক নিয়োগ দেয় সরকার। নারী উদ্যোক্তা, সাবেক নারী ব্যাংকার, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় মালিকদের স্ত্রী, কন্যা, পুত্রবধূ ও ঘনিষ্ঠজনদের পরিচালক হিসেবে দেখা যায়।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলোতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন, বিশেষায়িত ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ে বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক নারী কর্মকর্তা বা কর্মচারী কাজ করছেন। নারীকর্মীর সংখ্যা সবচেয়ে কম বিশেষায়িত ব্যাংকে। বিদেশি ব্যাংকে নারীকর্মীর অংশগ্রহণ ২৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ, বেসরকারি ব্যাংকে ১৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকে ১৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ ছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকে ১৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ নারীকর্মী রয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, নারীদের জন্য দেশের ৬১ তপশিলি ব্যাংকে ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি কার্যকর আছে। এসব ব্যাংকে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নীতিমালা আছে। ৫৮টি ব্যাংক লিঙ্গসমতা বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে। ৪০টি তপশিলি ব্যাংক তাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র স্থাপন করেছে। নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ৫২টি ব্যাংকের আছে নিজস্ব পরিবহন সুবিধা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করল জবি প্রশাসন 

অর্থবছর শেষে কমেছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি

মধুমতীতে বিলীন ১৪ ব্যারাক, আরও ৩টি অতিঝুঁকিতে

ভাঙার দুই দিনেও মেরামত হয়নি বেড়িবাঁধ, তলিয়েছে ঘরবাড়ি

শহীদ মীর মুগ্ধের জন্মদিনে ভাই স্নিগ্ধের আবেগঘন পোস্ট

ঢাকায় ১০ লাখ শিশুকে টাইফয়েড টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা, নিতে পারবে নিবন্ধন ছাড়াও

২৮ বছরের ক্রিকেট ইতিহাস নতুন করে লিখলেন ভারতীয় ওপেনার

হামাস-ইসরায়েলের সংলাপকে স্বাগত জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি

‘আইয়া দেখি মা-বাবাকে মাইরা খাটের ওপর বইসা রইছে’

নওগাঁর সাবেক এমপি ওমর ফারুক কারাগারে

১০

হামজাদের খেলা দেখতে গেট ভেঙে স্টেডিয়ামে ঢুকলেন দর্শক

১১

শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আমদানিকালে ৭৫ হাজার কেজি সুতা জব্দ

১২

মায়ের লাশ আটকে সম্পত্তি ভাগ-বাঁটোয়ারা, ২০ ঘণ্টা পর দাফন

১৩

ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড

১৪

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বাংলাদেশে নতুন করে দমন-পীড়ন : এইচআরডব্লিউ

১৫

রাকসু নির্বাচন / ১৬ দফার ইশতেহার দিল গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ

১৬

ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা, তিন দিন পরও হয়নি মামলা

১৭

হঠাৎ খুমেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, বিপাকে রোগীরা

১৮

‘মবোক্রেসি আমাদের ব্যর্থতা, সামাল দেওয়া যায়নি’

১৯

‘চন্দন কাঠ’ ভেবে উৎসুক জনতার ভিড়, না বুঝেই চলছে কেনাবেচা

২০
X