ডিজিটাল বাংলাদেশকে আরও রূপান্তরের মাধ্যমে ২০৪১ সাল নাগাদ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার অভিমুখে রয়েছে সরকার। আর এ অভিযাত্রায় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাত। কীভাবে এ দায়িত্ব পালন করবে তারা। চলমান সমস্যার সমাধানই আসবে কীভাবে? এ বিষয়ে দৈনিক কালবেলার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আইসিটি প্রতিবেদক শাওন সোলায়মান।
কালবেলা: ডিজিটাল বিপ্লবের পর এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছি। এই স্মার্ট বাংলাদেশের বিষয়বস্তুকে একটু সহজভাবে বলুন?
বেসিস সভাপতি: স্মার্ট বাংলাদেশের গভীরতা ব্যাপক। তবে এক কথায় বলতে হবে, যেখানে এক ক্লিকেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত সব তথ্য ও সেবা। কমবে হয়রানি। বাঁচবে অর্থ ও সময়। এর জন্য যদি শিল্পক্ষেত্র বিবেচনায় নেই, তাহলে তৈরি পোশাক, চামড়া কিংবা যে কোনো শিল্প খাতের কথাই বলি না কেন—প্রতিটি ইন্ডাস্ট্রিকেই হতে হবে স্মার্ট। আবার কর্মক্ষেত্র ও সেবা বিবেচনায় নেওয়া হলে সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানও হবে স্মার্ট। সেটি তখনই সম্ভব হবে, যখন সর্বত্র সার্বিকভাবে কর্মকাণ্ড ও সেবা প্রদানের পদ্ধতি হবে সম্পূর্ণ অটোমেশন এবং তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক।
কালবেলা: তাহলে কীভাবে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব?
বেসিস সভাপতি: স্মার্ট বাংলাদেশ একটি লম্বা সফর। আজ আমরা ২০২৩-এ আছি, আর স্মার্ট বাংলাদেশ হবে এখন থেকে ১৮ বছর পর ২০৪১-এ। এই ১৮ বছরে আমরা কী আশা করব, বলাটা কঠিন। তার চেয়ে বরং যদি বছরওয়ারি এটাকে ভাবা হয় তাহলে ভালো হয়। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জন তখনই সম্ভব, যখন সবখানেই আইসিটির যথাযথ প্রয়োগ ও ব্যবহার নিশ্চিত হবে। সেই বিবেচনায় স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আইসিটিকেই নিউক্লিয়াসের ভূমিকায় থাকতে হবে। সেজন্য আইসিটিতেই সবাইকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।
কালবেলা: এ জন্য আপনাদের কী ধরনের উদ্যোগ রয়েছে?
বেসিস সভাপতি: স্মার্ট বাংলাদেশের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি থ্রি বাই থ্রি ফর্মুলা বাস্তবায়নের ওপর। এটা হলো সরকার, ইন্ডাস্ট্রি এবং একাডেমিয়ার পারস্পরিক সহযোগিতা। যাকে বলে, সবাইকে নিয়ে কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে একসঙ্গে পথচলা। আমরা মুখে মুখে ইন্ডাস্ট্রি এবং একাডেমিয়ার মধ্যে ‘কোলাবোরেশনের’ কথা বলি; কিন্তু বাস্তবে সেটা আসলেই কতটুকু হচ্ছে, তা প্রশ্নবোধক। ইন্ডাস্ট্রির কী দরকার সেগুলো একাডেমিয়াকে বুঝতে হবে। আবার এসব ক্ষেত্রে যে ধরনের নীতি সহায়তা দরকার, তার জন্য সরকারকেও স্ব-উদ্যোগী থাকতে হবে। এ লক্ষ্যে আইসিটিবিষয়ক সহায়ক নীতি প্রণয়ন ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে জোর দেওয়া হচ্ছে।
কালবেলা: প্রতিনিয়তই নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে। এগুলোর সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রি তথা জনবলের সক্ষমতায় ঘাটতি কোথায়?
বেসিস সভাপতি: বলতে দ্বিধা নেই, এখনো ঘাটতি অনেক। বিশেষ করে একাডেমিয়া যে লোক তৈরি করছে, ইন্ডাস্ট্রিতে কাজে নেওয়ার জন্য তাকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রস্তুত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে না। আবার এমন অনেক কারিকুলাম আছে, যেগুলো দ্রুততার সঙ্গে উন্নত করতে হয়; কিন্তু সেখানে আমাদের কারিকুলাম প্রণয়ন ও অনুমোদনের প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ। অন্যদিকে প্রযুক্তির দুনিয়া খুবই গতিশীল এবং পরিবর্তনশীল। আবার অনেক কারিকুলাম আছে যেগুলো বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী করলেই হয়, খুব বেশি বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয় না। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি একটি ইন্ডাস্ট্রি সেল রাখা হয় যেখানে আলোচনা হবে যে ইন্ডাস্ট্রি কী চায়, কীভাবে চায়। আবার আমরা অনেক বেশিসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছি; কিন্তু গুণগত মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছি কি না—সেটিও সরকারের দেখা উচিত যেন স্নাতকধারী কর্মহীন যুব সমাজ তৈরি না হয়।
কালবেলা: সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ দিকে স্মার্ট বাংলাদেশের বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
বেসিস সভাপতি: আমি বলব যে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আমরা ভালো অর্জন করেছি। তবে এখন একটা বিশ্লেষণ হওয়া দরকার, কতটুকু অর্জন করেছি, কী বাদ পড়েছে এবং আরও কী অর্জন হতে পারত। কারণ, সেখান থেকে আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা নেওয়ার থাকবে। সেই শিক্ষাটা যেন স্মার্ট বাংলাদেশে প্রয়োগ করা হয়।
মন্তব্য করুন