নূর হোসেন মামুন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যবসায়ীদের গলার কাঁটা দুই ওজন স্কেল

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
ব্যবসায়ীদের গলার কাঁটা দুই ওজন স্কেল

বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর হলো চট্টগ্রাম বন্দর, যা দেশের আমদানি ও রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশ পণ্য সামলায়। এসব পণ্যের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ পাঠানো হয় ঢাকায়, যার প্রধান পরিবহন মাধ্যম সড়কপথ—বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। একসময় ব্যবসার জন্য আশীর্বাদ হিসেবে বিবেচিত এই মহাসড়ক এখন ব্যবসায়ীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড ও দাউদকান্দি এলাকায় স্থাপিত ওজন স্কেলের (এক্সেল লোড কন্ট্রোল) কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। এতে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় ধ্বংসের মুখে পড়েছে। বহুবার আন্দোলন, সংগ্রাম, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিয়েও সরকার বা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে কোনো সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ দেখতে পাননি ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের দাবি, সড়কে চলাচলকারী পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের ওজন নিয়ন্ত্রণের নামে কার্যত চট্টগ্রামের ব্যবসার ওপর কর্তৃত্ব করছে বাইরের একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, যার প্রভাব পড়ছে বাজার ব্যবস্থায়। তাই দ্রুত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উন্নয়ন করে এই স্কেলগুলো সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, পণ্যবাহী গাড়িতে অতিরিক্ত ওজন পরিবহনের কারণে মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এমন অজুহাতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুটি স্থানে ওজন মাপার স্কেল বসানো হয়।

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে ৩৫টি মহাসড়ক থাকলেও ওজন স্কেল আছে কেবল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। ফলে চট্টগ্রাম থেকে পণ্য পরিবহনের খরচ অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক বেশি। এতে করে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না।

একসময় একটি ট্রাকে একসঙ্গে ১৮ থেকে ৩০ টন পণ্য পরিবহন করা যেত, এখন তা কমিয়ে ১৩ টনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। ফলে আগে যেখানে একটি গাড়ি যথেষ্ট ছিল, এখন প্রয়োজন হচ্ছে দুটি গাড়ির। এতে পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এই অতিরিক্ত ব্যয় পণ্যের দামে প্রতিফলিত হচ্ছে, ফলে ক্রেতারা চট্টগ্রাম বিমুখ হয়ে পড়ছেন। এতে করে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছেন এবং এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও।

দুই এক্সেলবিশিষ্ট (৬ চাকার) মোটরযানে মাত্র ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহন করতে না দেওয়ায় শিল্পের কাঁচামাল, ভোগ্যপণ্য এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পরিবহন ব্যয় কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামেও এখন এই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মীর গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, ‘চট্টগ্রামে বেশি পণ্যের প্রয়োজন পড়ে না; বরং এখানকার মালপত্র দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়; কিন্তু ওজন স্কেলের কারণে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসা সরে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। আমদানিকারকরা এখন চট্টগ্রামে পণ্য আনলোড করতে চান না। কারণ ট্রাক ভাড়া আর সামলানো যাচ্ছে না।’

সংগঠনের আইনবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘২০১৭ বা ২০১৮ সালে ওজন স্কেল বসানোর পর থেকেই আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে বহুবার অনুরোধ জানিয়েছি। মানববন্ধন, স্মারকলিপি, সংবাদ সম্মেলন—কিছুই বাদ রাখিনি। দেশের কোথাও এমন স্কেল নেই, কেবল এই দুটি ছাড়া। পরিকল্পিতভাবে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিলে ২০-৩০ টনের ট্রাকও ওজন স্কেল অতিক্রম করতে পারে। অথচ সারা দেশেই ২০-২৫ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে।

সীতাকুণ্ড সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারহান বলেন, ‘মার্চের ৩০ তারিখ পর্যন্ত র‌্যাবমুন নামের একটি প্রতিষ্ঠান দারোগাহাটের স্কেল নিয়ন্ত্রণ করছিল। বর্তমানে তাদের সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়েছে। আপাতত সড়ক ও জনপথ বিভাগ দায়িত্ব পালন করছে। নতুন টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে, যা এখন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। কেউ প্রমাণ দিতে পারলে আমরা পরিচয় গোপন রেখে অভিযান চালাব এবং দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেব।’

কুমিল্লার দাউদকান্দি ওজন স্কেল নিয়ন্ত্রণ অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাজমুল এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে স্কেল ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত আরশেদ বলেন, ‘ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। এখানে সিসি ক্যামেরা রয়েছে।’

চট্টগ্রাম বিভাগীয় সড়ক ও জনপথ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহে আরেফীন বলেন, ‘ওজন স্কেল প্রত্যাহার করার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত দিতে পারি না। বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে বলা যায়, এখন শুধু চট্টগ্রামেই নয়, খাগড়াছড়ির রামগড়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২৮টি স্কেল নির্মাণাধীন, যার মধ্যে ১৪-১৫টির কাজ শেষ পর্যায়ে এবং চলতি বছরই সেগুলো চালু হবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডাকসু নির্বাচন / প্রচারণার প্রথম দিনই শিবিরের ব্যানার ভাঙচুর

হিজাব বিতর্কে ভিকারুননিসার সেই শিক্ষিকা বরখাস্ত

এই ৩ ভুল করছেন? শত চেষ্টাতেও কমবে না মেদ

একদিন পর ভেসে উঠল ইসমাইলের মরদেহ

বিশ্বে প্রথমবার মানব শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন

নির্বাচনের তারিখ নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই : হাসনাত

ডাকসু নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী ৪৭১

আমি বিবাহিত, ফেসবুকে প্রমাণ করার কিছু নেই : অপু

বাংলাদেশে শুরু হলো দ্বিতীয় আইসিএফপি সম্মেলন

মালয়েশিয়ায় নিবন্ধিত বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা প্রকাশ

১০

ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণা নিয়ে সাদিক কায়েমের পোস্ট

১১

বিটিভি চট্টগ্রামের বিশেষ নাটক ‘জিনের বাদশা’

১২

লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সাক্ষাৎ

১৩

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৪৭০ জন

১৪

ব্যবসায়ী হত্যার দায়ে দুজনের মৃত্যুদণ্ড, একজনের যাবজ্জীবন

১৫

ড্রেনে গ্যাস জমে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, কেঁপে উঠল আশপাশের এলাকা

১৬

আমিরকে নিয়ে এশিয়া কাপের জন্য দল ঘোষণা ওমানের

১৭

গাইবান্ধায় কবরস্থান থেকে ৩০টি কঙ্কাল চুরি

১৮

কাতারে জুমার নামাজের সময় দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ

১৯

বরগুনায় অবৈধ ডায়গনস্টিক সেন্টারে অভিযান

২০
X