পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেডের ব্যবসা ধসে পড়েছে। একসময় লাভজনকভাবে পরিচালিত হওয়া এ কোম্পানিটি মাত্র ছয় বছরের টানা লোকসানে বিপর্যস্ত। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিকভাবে এতটাই দুর্বল অবস্থায় রয়েছে যে, দৈনন্দিন ব্যবসা পরিচালনাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।
২০১৯ সালে শুরু হওয়া লোকসান ২০২৪ হিসাব বছর পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ ছয় বছরে কোম্পানিটি মোট নিট লোকসান করেছে ১ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা, যা তার পরিশোধিত মূলধনের কয়েকগুণ বেশি। এর ফলে কোম্পানির ভবিষ্যৎ ব্যবসা পরিচালনার সম্ভাবনা ব্যাপকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
সর্বশেষ ২০২৪ হিসাব বছর শেষে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি লোকসান করেছে ১১ টাকা ৯৯ পয়সা, যেখানে মোট নিট লোকসানের অঙ্ক ২০৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। পূর্ববর্তী বছর ২০২৩ সালে এ লোকসান আরও গুরুতর ছিল—শেয়ারপ্রতি ৩৫ টাকা ১৭ পয়সা, যার মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
বিগত বছরগুলোর আর্থিক চিত্রও হতাশাজনক: ২০২২ সালে শেয়ারপ্রতি লোকসান ১১.৯৫ টাকা। মোট লোকসান ২০৬.২৪ কোটি টাকা, ২০২১ সালে শেয়ারপ্রতি লোকসান ৮.০৩ টাকা। মোট লোকসান ১৩৮.৫৮ কোটি টাকা, ২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি লোকসান ৩.০৮ টাকা। মোট লোকসান ৫৩.১৫ কোটি টাকা, ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি লোকসান ৬.১৩ টাকা। মোট লোকসান ১০৫.৭৯ কোটি টাকা।
এ লোকসানের কারণে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৬৩ টাকা ২ পয়সা। বিশ্লেষকদের মতে, যদি কোম্পানিটি ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়, তাহলে এর শেয়ারহোল্ডারদের কোনো অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
লোকসানের পেছনে থাকা মূল কারণগুলো: কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এ আর্থিক বিপর্যয়ের জন্য কয়েকটি বড় কারণ তুলে ধরেছে। ঋণখেলাপিদের কারণে অতিরিক্ত সঞ্চিতি গঠনের প্রয়োজন, নন-পারফর্মিং লোন বৃদ্ধির ফলে আরও সঞ্চিতি সংরক্ষণ, সুদজনিত আয় কমে আসা, পুঁজিবাজারের দীর্ঘমেয়াদি মন্দার ফলে ব্রোকারেজ কমিশন আয় হ্রাস।
১০ বছর ধরে লভ্যাংশহীন শেয়ারহোল্ডাররা: লোকসানের পাশাপাশি কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের জন্য রয়েছে আরেকটি দুঃসংবাদ—গত ১০ বছর ধরে তারা কোনো লভ্যাংশ পাননি। সর্বশেষ লভ্যাংশ প্রদান করা হয়েছিল ২০১৫ সালে, যেখানে নগদ লভ্যাংশ ছিল মাত্র ৫ শতাংশ।
অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে শেয়ারবাজারেও কোম্পানিটির অবস্থান দুর্বল। ২০২৪ সালের আগস্টে শেয়ারদর ছিল ৯ টাকা ৪০ পয়সা, যা ২০২৫ সালের জুনে কমে দাঁড়ায় মাত্র ৩ টাকা ৮০ পয়সা। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার (তারিখ অনির্দিষ্ট) শেয়ারদর ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে কোম্পানির সচিব আব্দুল হান্নান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এভাবে মিডিয়ায় কথা বলা আমাদের বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে। আমি কিছু বলতে পারব না। ডিএসই ওয়েবসাইটে অনেক তথ্য দেওয়া রয়েছে কেন আমাদের লোকসান হচ্ছে। এর বাইরে কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’
২০০৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ইউনিয়ন ক্যাপিটালের অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিশোধিত মূলধন ১৭২ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বিপরীতে কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ১৭ কোটি ২৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮৪৩টি। এর মধ্যে ২৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ এবং বাকি ৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।
মন্তব্য করুন