শেষ সময়ে এসে গতি পেয়েছে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন। গত মাসেই সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) বাস্তবায়ন হার চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এমনকি গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মে মাসে। তবে সামগ্রিক অগ্রগতিতে গত অর্থবছরের চেয়ে এখনো পিছিয়ে চলতি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়ন।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে মাস পর্যন্ত ১১ মাসে এডিপি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। শুধু মে মাসেই খরচ হয়েছে ২৬ হাজার ৯৫৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাকি এক মাসে খরচ করতে হবে ৯০ হাজার ৫৩৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
গতকাল রোববার চলতি অর্থবছরের মে মাসের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হার ৬১ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যা করোনার সময় ছাড়া গত ৫ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। একই সঙ্গে গত অর্থবছরের চেয়ে ৩ দশমিক ১১ শতাংশ কম বাস্তবায়ন হয়েছে এবার। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়ন হয়েছিল ৬৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৮ দশমিক ৩৬, ২০১৯-২০ অর্থবছর ৫৭ দশমিক ৩৭ এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর ৬৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল।
তবে সামগ্রিক অগ্রগতি কম হলেও মাসের হিসেবে মে মাসের এডিপি বাস্তবায়নের হার চলতি অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এমনকি ২০১৮-১৯ অর্থবছর ছাড়া গত ৫ অর্থবছরের মধ্যে শুধু সর্বোচ্চ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে গত মাসে।
আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু মে মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ১১ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছর ৯ দশমিক ২৭, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮ দশমিক এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ১৩ দশমিক ০৩ শতাংশ।
এর আগে চলতি অর্থবছরের কোনো মাসে এত এডিপি বাস্তবায়ন হয়নি। অর্থবছরের শুরু অর্থাৎ, জুলাইয়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ। আগস্টে ছিল ২ দশমিক ৮৯, সেপ্টেম্বরে ৪ দশমিক ৭১, অক্টোবরে ৪ দশমিক ০৯, নভেম্বরে ৫ দশমিক ৭৭, ডিসেম্বরে ৫ দশমিক ১৩, জানুয়ারিতে ৪ দশমিক ৬৩, ফেব্রুয়ারিতে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। তবে মার্চ থেকে বাস্তবায়ন হার বাড়তে থাকে। মার্চে বাস্তবায়ন হয় ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। এপ্রিলে এ হার বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে এডিপি আওতাভুক্ত প্রকল্পগুলোর মধ্যে উচ্চ অগ্রাধিকার, অগ্রাধিকার ও কম অগ্রাধিকার হিসেবে বাছাই করে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। আবার কিছু প্রকল্পে বরাদ্দ বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের অপ্রয়োজনীয় খাত বাদ দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে অর্থবছরের হিসাবে বাস্তবায়ন হার কম দেখাচ্ছে।
তিনি বলেন, তারপরও তুলনামূলক খুব একটা খারাপ নয়। গত অর্থবছরের চেয়ে যাতে না কমে, সে চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থবছরের শেষ দিকে বাস্তবায়ন হার একটু দ্রুত বাড়ে। কারণ শেষদিকে হিসাব-নিকাষ করে ফাইনাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ কারণে শেষদিকে বাস্তবায়ন হারে গতি বাড়ে।
হালনাগাদ তথ্য থেকে জানা গেছে, মে পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগ প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ করেছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২১ কোটি টাকা। আর শুধু এপ্রিলে খরচ হয়েছে ২৬ হাজার ৯৫৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের মে মাসে খরচ হয়েছিল ২০ হাজার ৮৯৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়। এখন পর্যন্ত তাদের বাস্তবায়ন মোট বরাদ্দের ৯৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থা থাকা জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ৯২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ তৃতীয় সর্বোচ্চ ৮৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বাস্তবায়ন করেছে সর্বোচ্চ ৮৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আইএমইডি ৮৪ দশমিক ৫২ শতাংশ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৮২ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ ৮১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
এ ছাড়া ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৭৭ দশমিক ৬৫, শিল্প মন্ত্রণালয় ৭৭ দশমিক ৭৩, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৭৬ দশমিক ৪১, বিদ্যুৎ বিভাগ ৭৩ দশমিক ৪১, শ্রম ও কর্মসংস্থান ৭২ দশমিক ৪৬, রেলপথ মন্ত্রণালয় ৭১ দশমিক ৪৯ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।
বেশ কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নের হার সন্তোষজনক হলেও কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন কচ্ছপ গতিতে চলছে। এমনকি ১০ মাসে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ৪০ শতাংশের কম বাস্তবায়ন করেছে ৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে অন্যতম অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, স্বাস্থ্য সেবা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়। এক মাস বাকি থাকলেও এসব মন্ত্রণালয় ৪০ শতাংশও খরচ করতে পারেনি।
চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দিয়েছিল। গত ১ মার্চ তা সংশোধন করে প্রকল্প সহায়তা থেকে ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কমিয়ে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এডিপিতে মোট ১ হাজার ৬৮৩ প্রকল্প রয়েছে।
মন্তব্য করুন