বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২
শেখ হারুন
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:৫৪ এএম
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৫, ০১:২৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নিয়ন্ত্রিত অর্থ ছাড়ে খরায় এডিপি বাস্তবায়ন

নিয়ন্ত্রিত অর্থ ছাড়ে খরায় এডিপি বাস্তবায়ন

বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই কৃচ্ছ্রসাধনের মধ্যে রয়েছে সরকার। এ কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রাধিকারকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এজন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় থাকা প্রকল্পগুলোকে ওই অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতাভুক্ত ‘সি’ ক্যাটাগরির সব প্রকল্পেই বছরজুড়ে অর্থছাড় স্থগিত করা হয়েছে। শুধু ‘এ’ ক্যাটাগরির প্রকল্পেই অর্থছাড় করা হচ্ছে। আর ‘বি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পে অর্থছাড় করা হচ্ছে অনেক যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে। অর্থাৎ অর্থ ছাড়ে এমন কড়াকড়ি আরোপের কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) খরা চলছে। আর এই নিয়ন্ত্রিত অর্থ ছাড়ে এডিপিভুক্ত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে স্থবিরতা চলছে। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৭.১১ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১ শতাংশেরও কম এবং ১৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

সবশেষ এডিপির বাস্তবায়ন অগ্রগতির প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বরাদ্দের হিসেবে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ছাড়া বেশিরভাগই তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না।

ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, অন্য অর্থবছরগুলোর তুলনায় চলতি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা দিয়েছে, সেটা ঠিক। এডিপি বাস্তবায়ন হার কম হওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ঠিকমতো অর্থছাড় না হওয়া। কারণ বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হচ্ছে। এজন্য যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নে জনগণ দ্রুত সুফল পাবে সেসব প্রকল্পে অর্থ ছাড়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আর যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নে দ্রুত ফল পাওয়া যাবে না সেগুলোতে অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এসব কারণেই মূলত কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হচ্ছে না।

আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময় এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২৮.১৬ শতাংশ। এদিকে গত ১৪ অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের চিত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। সেই সময় এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল মোট বরাদ্দের ৩৪.৪৩ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৩৩.৩৫ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১৫-১৬, ২০২০-২১ সালে ছিল ২৮ শতাংশের ওপরে। বাকি অর্থবছরগুলো এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৩০ শতাংশের ওপরে।

অর্থবছরের তুলনায় কম হলেও মাসের হিসেবে জানুয়ারিতে এডিপি বাস্তবায়ন হার গত অর্থবছরের সমান হয়েছে। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছর ছাড়া গত ১৪ অর্থবছরের মধ্যে জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে চলতি অর্থবছরে। আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, শুধু জানুয়ারি মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৪.৬৩ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও এই হার একই ছিল। যদিও অন্য অর্থবছরগুলোতে জানুয়ারি মাসে বাস্তবায়ন হার ছিল ৫ থেকে ৭ শতাংশের কাছাকাছি।

পরিকল্পনা কমিশনের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মোট ১ হাজার ৩৯২টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এগুলো বাস্তবায়নে এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হয় ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। অর্থবছরের ৭ মাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের তত্ত্বাবধানে থাকা এসব প্রকল্পের বিপরীতে খরচ হয়েছে মাত্র ৭৪ হাজার ৪৬৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

বরাদ্দের তুলনায় বাস্তবায়ন অগ্রগতিতে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে আইএমইডি। বিভাগটি বাস্তবায়ন করেছে ৯৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করেছে ৭৭.৩৪ শতাংশ। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন করেছে ৭১ দশমকি ০৩ শতাংশ এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ বাস্তবায়ন করছে ৫৯ দশমিক ২৩ শতাংশ।

অন্যদিকে, অর্থবছরের ৭ মাস পার হলেও ১০ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি দুটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়টি ৭ মাসে তাদের বরাদ্দের মাত্র ৩.৫৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। মোট বরাদ্দের মাত্র ৬.৬৪ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। এ ছাড়া এডিপির ২০ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিভাগটি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে খরচ করেছে ১৫ হাজার ২১৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ৩৮ দশমিক ০৫ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম খরচ করেছে বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়। এদের খরচ মাত্র ২৪ লাখ টাকা। যদিও তাদের জন্য এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ১ কোটি টাকা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

পিএসসি সদস্য হলেন অধ্যাপক শাহীন চৌধুরী

রিয়ালের হয়ে ইতিহাস গড়লেন আর্জেন্টিনার ‘মাস্তান’

দাম্পত্য কলহ এড়ানোর সহজ ৫ উপায়

‘গণতন্ত্রের জন্য আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হতে পারে’

আর্থিক খাত নিয়ে খারাপ খবর দিলেন গভর্নর

পৌরসভার ফাইল নিয়ে দুই কর্মকর্তার হাতাহাতি

কর্মস্থলে ‘অনুপস্থিত’, এবার পুলিশের ২ এসপি বরখাস্ত

এশিয়া কাপ দল নিয়ে তোপের মুখে বিসিসিআই

নারী-শিশুসহ ছয় ভারতীয় নাগরিক আটক

১০

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার : উপদেষ্টা আসিফ

১১

পিয়াইন নদীতে অবাধে বালু লুট, হুমকিতে বসতবাড়ি 

১২

সোনালী ও জনতা ব্যাংকের অফিসার পদের ফল প্রকাশ

১৩

নরসিংদীতে একজনকে কুপিয়ে হত্যা

১৪

হোয়াটসঅ্যাপে নতুন কৌশলে অর্থ চুরি, যেভাবে নিরাপদ থাকবেন

১৫

টিটিইসহ ৫ জন আসামি / তিন মাসেও শেষ হয়নি ট্রেন থেকে ফেলে হত্যার তদন্ত

১৬

স্বামীর মোটরসাইকেল থেকে পড়ে স্ত্রীর মৃত্যু

১৭

রওনা দিয়েছে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ, পাল্টা প্রস্তুতি ভেনেজুয়েলার

১৮

দেশে হবে আরও ৫১৬ কমিউনিটি ক্লিনিক

১৯

ফেসবুকে আমেরিকার বিরুদ্ধে কিছু বললেই পাবেন না ভিসা

২০
X