আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কার্বোনেটেড বেভারেজের (কোমল পানীয়) বিক্রি থেকে প্রাপ্ত আয়ের ওপর কর (টার্নওভার ট্যাক্স) ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি অর্থবছরের বাজেটেও এই হার প্রস্তাব করেছিল সংস্থাটি। পরে কোম্পানিগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। এর আগে এই করহার ছিল শূন্য দশমিক ছয় শতাংশ। আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বিষয়টির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কার্বোনেটেড বেভারেজের ওপর ৫ শতাংশ করহার করার পরিকল্পনা নিচ্ছে এনবিআর। যদিও চলতি অর্থবছরেও এই প্রস্তাব ছিল আয়কর বিভাগের। পরে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। তবে আগামী অর্থবছরে এই করহার ৫ শতাংশ করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী সবুজ সংকেতও দিয়েছেন। অর্থাৎ গত রোববার এনবিআরের সঙ্গে বৈঠকে এই করহারের বিষয়ে সায় দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তবে এই বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে আজ মঙ্গলবার। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বাজেটের সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালবেলাকে বলেন, কার্বোনেটেড বেভারেজের টার্নওভার ট্যাক্স ৫ শতাংশ করার প্রস্তাবনা আসতে পারে। যদিও বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী সায় দিয়েছেন।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজেটে অতিরিক্ত টার্নওভার ট্যাক্স আরোপের প্রস্তাবের কারণে কোমল পানীয়র ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তা ছাড়া অতিরিক্ত লোকসানের ঝুঁকিতে অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার সম্ভাবনাও রয়েছে। এমনকি ভবিষ্যতে এ ব্যবসায় বিনিয়োগও নিরুৎসাহিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কোমল পানীয়র দাম বেড়ে গেলে একদিকে যেমন গ্রাহকের সংখ্যা কমে যাবে, তেমনি সরকারের রাজস্বও কমবে। এর ফলে কোমল পানীয় খাত থেকে সরকারের আয় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারেও বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।
জানা গেছে, প্রতি বছর বাংলাদেশের পানীয় শিল্পের প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে। কোমল পানীয়ের খাত থেকে বর্তমানে জাতীয় কোষাগারে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা আসে। প্রস্তাবিত টার্নওভার কর বেড়ে যাওয়ার সরাসরি ফলাফল হিসেবে এটি যে ব্যাপকভাবে কমে যাবে। বর্তমানে বাংলাদেশে কোমল পানীয়র অধিকাংশ কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি কোমল পানীয়র ব্যবসার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। তাই কোমল পানীয় ব্যবসার সম্প্রসারণের কথা মাথায় রেখে অনেক প্রতিষ্ঠানই বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। বর্তমানে কোমল পানীয় উৎপাদনে কোকাকোলা বাংলাদেশ বেভারেজ প্রায় হাজার কোটি আর কোকাকোলার মালিকানাধীন বোতলজাত প্রতিষ্ঠান এবং ফ্র্যাঞ্চাইজ আব্দুল মোনেম লিমিটেডের প্রায় তিনশ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছে। সেইসঙ্গে ট্রান্সকম বেভারেজ ৭৫৬ কোটি টাকা, গ্লোব সফট ড্রিংকস ৫৬৫ কোটি টাকা, এএসটি বেভারেজ ৩৮৪ কোটি টাকা, প্রাণ বেভারেজ ৪৮৫ কোটি টাকা, পারটেক্স বেভারেজ ২২৯ কোটি টাকা, সজীব করপোরেশন ১৪০ কোটি টাকা এবং মেঘনা গ্রুপ ৩৩৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।