কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:৩৬ এএম
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৪১ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পরিবেশ, দ্রব্যমূল্য এবং ফেসবুক

পরিবেশ, দ্রব্যমূল্য এবং ফেসবুক

সকালের বৃষ্টিস্নাত ক্যাম্পাস। ক্ষণিক আগেই একপশলা বৃষ্টি হয়েছে। ক্যাম্পাসটাও হয়ে উঠল সদ্য পুকুর থেকে ওঠা দামাল কিশোর। এমন স্নিগ্ধ পরিবেশে আড্ডায় মেতে গেল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের চার বন্ধু তিথি, লাবণ্য, ইমন, তপু। উঠে এলো দ্রব্যমূল্য থেকে শুরু করে ফেসবুক, পরিবেশ আরও কত কী। টুকে নিয়েছেন মারুফ হোসেন—

মেইন গেটে তপুর জন্য অপেক্ষা করছিল তিথি, লাবণ্য, ইমন। বৃষ্টি কমতেই তড়িঘড়ি বের হয় তপু। লেট হলেই যে শুনতে হবে ঝাড়ি। চারজনে উঠে গেল রফিক ভবনের চারতলায়। নিচে থাকলে ফের বৃষ্টির হানায় বিঘ্ন ঘটতে পারে আড্ডায়।

লাবণ্য : সকালের দিকে কিন্তু রোদ ছিল। হঠাৎ আবার বৃষ্টি।

ইমন : আবহাওয়ার কূল নাই, কিনার নাই।

তিথি : লাস্ট ১০০ বছরে বিশ্বের তাপমাত্রা নাকি ১ ডিগ্রি বেড়েছে।

ইমন : এটা ফারেনহাইট, সেলসিয়াস না। সেলসিয়াস হলে খবরই ছিল।

তপু : তবে তার চেয়ে বেশি তাপ বেড়েছে বাজারে।

লাবণ্য : ঠিক। সেদিন মসলার একটা প্যাকেট কিনব, দাম শুনে কেনা হলো না। বিদেশিদের মতো মসলা খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে। আদা, পেঁয়াজ, রসুন নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে। আমেরিকা-ইউরোপের কোনো খবরে এ পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম নিয়ে হৈচৈ করতে দেখলাম না।

তপু : সবাই বেশি করে ফল খা।

তিথি : মানুষ খাবে কী! সবকিছুর দাম যে হারে বাড়ছে।

তপু : ফল গাছ লাগা। সপ্তাহে একটা করে। তাহলে সামনে আর খাবারের সংকট থাকবে না। রাস্তাঘাটে আম-কাঁঠাল পড়ে থাকবে। পাখিরাও খাবে।

ইমন : ফল খেয়ে আর কত। আমাদের ব্যাচেলরদের জন্য ডিম ছিল ভরসা। সেটাও ফসকে যাচ্ছে।

তপু : আমার মনে হয় দেশে সিন্ডিকেট বেড়ে গেছে। দাম বাড়ার এটাও বড় কারণ। প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।

তিথি : শুধু প্রশাসন কেন? আমরা কঠোর হতে পারি না? যারা কিনছি তারা কঠোর হলে সিন্ডিকেটে ধস নামবে।

লাবণ্য : সেটা কীভাবে?

তিথি : ধর, পাড়ায় পাড়ায় ভোক্তা কমিউনিটি হলো। তারা মাইকিং করে জানান দিল আগামী এক সপ্তাহ কেউ ডিম কিনবেন না। তারপর দেখ কী হয়। আমরা এক হলে সব ঠিক।

লাবণ্য : খাতাপত্র, কাগজ, কলম না কিনে তো থাকা যায় না।

তপু : অবশ্যই যায়। আরেকটু ডিজিটাল হতে হবে সবাইকে। অপচয় কমাতে হবে। ফটোকপি না করে ফোনে ছবি তুলে পড়তে হবে। আর এর জন্য ফোনে ব্লু লাইট ফিল্টার অপশন অন করে রাখবি কিন্তু।

ইমন : আচ্ছা, লাবণ্য তোর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া না?

লাবণ্য : এই আবার শুরু! সোশ্যাল মিডিয়া আজকাল আমাদের রীতিমতো বোকার স্বর্গে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কিছু মানুষ জোকস আর বর্ণবাদের পার্থ্যকই বোঝে না। বিদেশে গিয়ে যদি কেউ তোকে তাচ্ছিল্য করে বলে, তোমার বাড়ি বাংলাদেশ, তাই না! কেমন লাগবে তখন?

লাবণ্যের এক কথাতেই বদলে গেল প্রসঙ্গ। বোঝা গেল লেকচারটা একদম জুতসই হয়েছে।

তপু : এখন ফেসবুকে কিছু মানুষ ভাইরাল হওয়ার নেশায় যা-তা করে বেড়াচ্ছে। এর থেকে মুক্তি চাই।

ইমন : অনেকে বুঝে না বুঝে যা-তা শেয়ার করে বসে।

তিথি : এগুলোর কারণে কী পরিমাণ যে শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে! অনেককে দেখি নেশাগ্রস্তের মতো কেবল রিল দেখছে। একটার পর একটা। একটু আগে কী দেখেছে জানতে চাইলে দেখবি কিছুই বলতে পারছে না।

ইমন : আমরা ফেসবুক বুলির ঝড় তুলি। অথচ নিজেরাই তা পালন করি না। বুড়িগঙ্গার কী অবস্থা! ফেসবুকের এত এত জ্ঞানী এসব দেখে না? গ্রুপের লাখ লাখ মেম্বার গিয়ে একটা অংশ তো পরিষ্কার করে আসতে পারে।

তিথি : ভালো আইডিয়া। যারা সপ্তাহে একদিন এমন কাজ করবে তাদের নিয়েই গ্রুপ খোলা যাক। এরপর নিয়মিত ইভেন্টের আয়োজন করব।

ইমন : করে দেখতে পারিস। মোটিভেশনাল কিছু পোস্ট দিলেই কাজ হবে। তবে তার আগে কয়েকজন মিলে করে দেখাতে হবে। আমরা আবার কাউকে কিছু শুরু করতে না দেখলে এগিয়ে যাই না। তবে এখনো যে গরম। কেউ ঘর থেকে সহজে বের হতে চাইবে না।

তপু : এটাকেই বলে যেমন কর্ম তেমন গলদঘর্ম।

লাবণ্য : বড় গাছগুলো কেটে ফেলছি। ছোট গাছগুলো বাড়তে সময় লাগবে। আমি বুঝি না প্রশাসনের সঙ্গে গাছের এত শত্রুতা কীসের। গাছ তো রাজনীতি করে না।

তিথি : কথাটা বাণী হিসেবে টানিয়ে রাখা উচিত দেয়ালে।

লাবণ্য : আমরা গাছ কাটাতে পটু, কিন্তু লাগানোর বেলায় ঠনঠন।

তিথি : সামান্য জায়গা পেলে ভবন তোলো। আবাসিক ভবনগুলোরও দেখা যায় অনেক খালি। মানুষ টাকা দিয়ে কীসের সুখ আর নিশ্চয়তা কিনছে বুঝি না। টাকা থাকলেই যত্রতত্র ঘরবাড়ি তৈরি করছে। একটার পর একটা ফ্ল্যাট। আবাদি জমি কমে গেলে খাবে কী ওরা?

তপু : তাই আবারও বলছি আমাদের ফলগাছ লাগানো দরকার বেশি। অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারও কমাতে হবে। মাটির উর্বরা শক্তি বাড়াতে পুরোপুরি প্রাকৃতিক জীবন্মৃত নামের একটি পদ্ধতি আছে। খুব কাজের নাকি। ওটার প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে।

ইমন : এই যে রাসায়নিকের কথা বললি। বাজারেও তো ভেজাল খাবারের ছড়াছড়ি।

তপু: এর জন্য নকল পণ্য চিনতে হবে। ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখতে হবে প্রয়োজনে। ভেজাল খাবার মানে স্লো পয়জন। জটিল রোগ মানে ভবিষ্যতের সঞ্চয় পুরোটা হাসপাতালের পকেটে দিয়ে আসা।

তিথি : তার আগে দরকার কাজ। শুধু বুলিতে কাজ হবে না।

ইমন : কড়া আইন লাগবে, কড়া ভোক্তা কমিউনিটি লাগবে। আমিও আজ থেকে লাবণ্যর মতো মসলা খাওয়া কমিয়ে দেব।

তপু : (ইমনকে) তুই তো আইনের ছাত্র। আইন ভাঙবি না। এ ধরনের আড্ডায় লেট করলে পরে সেটার বিচার করব আমরা।

লাবণ্য : আকাশে আবার মেঘ। নামুক বৃষ্টি। শীতল হোক তপ্ত ধরনি।

বৃষ্টি আসি আসি করতেই বিদায় নিল প্রত্যেকে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শতভাগ লুটপাটমুক্ত দল জামায়াতে ইসলামী : ড. মোবারক

মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে এসে মারা গেলেন ছেলেও

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

সিঙ্গারে চাকরির সুযোগ, দ্রুত আবেদন করুন

মেসিহীন মায়ামিকে বাঁচাল রদ্রিগেজের দুর্দান্ত গোল

গাজায় যেভাবে দুর্ভিক্ষ নেমে এলো

লেভান্তের মাঠে বার্সার রোমাঞ্চকর জয়

যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

আকিজ গ্রুপে চাকরি, বেতন ছাড়াও থাকবে নানা সুবিধা 

বাগেরহাটে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল

১০

যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি করছে ভারত

১১

২৪ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১২

নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জনগণ বিএনপিকে বিজয়ী করবে : মোমিন

১৩

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

১৪

বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় কলেজছাত্রীর কাণ্ড

১৫

রোববার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১৬

২৪ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৭

সাতসকালে দিনাজপুরে সড়ক দুর্ঘটনা, বাসে ছিলেন গণঅধিকার পরিষদ নেতা

১৮

তামাকবিরোধী ইয়ুথ মার্চ  / তামাক কোম্পানির সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাতিল, দ্রুত আইন পাসের আহ্বান

১৯

দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সিট পেয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে : ফজলুর রহমান

২০
X