ইতিহাসের সেরা গরম বুঝি এবারই গেল। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লোডশেডিং। এ পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসগুলোর কেমন দশা? অন্ধকারে উত্তর হাতড়ে বেড়িয়েছেন জুবায়ের ইবনে কামাল।
ক্লাস করতে গিয়ে সবাই ঘেমেনেয়ে একাকার। দেখি এ গরমেও বেশ ‘কুল’ আমাদের আইডিয়ার ভান্ডার স্বপন। আইডিয়া স্বপনকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘গরম লাগে না?’ স্বপন উত্তর দেয়, ‘ভাবছি। লোডশেডিং থেকে বাঁচতে আইডিয়া চাওয়া যাক সবার থেকে, কী বলিস?’
‘বুঝিনি’।
‘শোন, ক্যাম্পাসের মূল ফটকে একটা আইডিয়ার বাক্স রাখব। সেখানে লোডশেডিং থেকে বাঁচার উপায় কী হতে পারে এ মর্মে প্রস্তাবনা আহ্বান করা হবে। সবাই আইডিয়া ও অফেরতযোগ্য পাঁচ টাকার কয়েন জমা দেবে সেই বাক্সে। সেখান থেকে সেরা দুই আইডিয়াদাতা পাবে আধঘণ্টা এসির বাতাস খাওয়ার সুযোগ। এসির স্পন্সর খুঁজছি আপাতত।’
পরদিন সত্যিই গলায় গামছা ঝোলানো একটা ছেলেকে দেখি গেটের কাছে বাক্স হাতে দাঁড়িয়ে আছে। মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল ‘ওহ শিট’। ছেলে আমার দিকে বিরক্ত চোখে তাকিয়ে বলল, ‘শীত কই পাইসেন? শীত গাছে ধরে?’
আমতা আমতা করে বললাম, আমি শিট ফটোকপি করতে ভুলে গিয়েছিলাম তো। সেটা মনে পড়ল। ছেলেটার হাতে ধরা বাক্সের প্রিন্ট করা কাগজে লেখা—‘লোডশেডিংবিরোধী আইডিয়া দিন। পুরস্কার জিতুন।’
সেখান থেকে পাওয়া আইডিয়াগুলো কোনো একভাবে আমার হাতেও আসে। শোনানো যাক দুয়েকটা। প্রথম ‘হাইভোল্টেজ’ আইডিয়া-দাতা ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি লিখেছেন—অনেক পাবলিক ক্যাম্পাসে পুকুর আছে। সেখানে ইল মাছ চাষ করা যেতে পারে। একটি ইল মাছ ৬০০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক শক দিতে পারে। এই মাছ থেকে বিদ্যুৎ তৈরির অপরিসীম সম্ভাবনা আছে। সঠিকভাবে বিপুল পরিমাণ ইল মাছ চাষ করা গেলে সেটা দিয়ে ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করে জাতীয় গ্রিডেও সরবরাহ করা যেতে পারে। আর এর জন্য ইইই বিভাগের আমাকেসহ আরও কয়েকজনকে জার্মানি কিংবা আমেরিকা ভ্রমণ করে ইল থেকে বিদ্যুৎ তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ নিতে পাঠানো হোক।
দ্বিতীয় আইডিয়াটাকে বলা যায় সঞ্চয়ী আইডিয়া। তাতে লেখা, অনেকেই কয়লা দিয়ে দাঁত মাজে। যেহেতু কয়লার সংকটে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে ও যাচ্ছে, তাই এবার কাউকেই আর কয়লা দিয়ে দাঁত মাজতে দেওয়া যাবে না। এ বিষয়ক প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে মানববন্ধন করতে চান তিনি। মানববন্ধনের প্রসঙ্গ ওঠায় আপনমনে হাসলাম। ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে, গাছতলায় এখন এত গরম পড়েছে যে সন্ধ্যার পরও খুব একটা ‘মানববন্ধন’ দেখা যাচ্ছে না।
তবে মশকবন্ধনের কমতি নেই। বর্ষার আগেই ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে আসার দাবিতে সোচ্চার তারা। আমাদের মশাগুলোও বেশ শিক্ষাসচেতন। তা না হলে ক্যাম্পাস তাদের এত পছন্দের জায়গা কেন? ঢাবির বন্ধু তপন জানাল কয়েকটি সমাধান—ক্যাম্পাসে বর্ষায় প্রচুর পানি-টানি জমে থাকে। সেগুলো পরিষ্কার করা এবং ঝোপঝাড়ে নিয়মিত ওষুধ স্প্রে করতে হবে। আরেকটি সমাধান হলো সন্ধ্যার পর পর যাবতীয় জোড়-বেজোড় আড্ডা বন্ধ করে মশাদের অনাহারে মেরে ফেলতে হবে।
ফিরে আসি বিদ্যুতে। মাঝে একদিন সকালে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েই শুনি হইচই। সবাই বলছে, বিদ্যুৎ এসেছে! আমি তো অবাক। ক্লাসরুমে ফ্যান তো চলে না। জেনারেটরগুলোর অবস্থা হলো—তেল দে মা জ্বলে বাঁচি অবস্থা। বন্ধু জামিল হন্তদন্ত হয়ে ডাকছে আমাকে। এক সফেদ পাঞ্জাবি পরা লোককে দেখিয়ে বলল, চিনিস? আমি এদিক-ওদিক মাথা ঝাঁকালাম।
‘উনি আমাদের বিদ্যুৎ ভাই। এলাকার নতুন নেতা। সামনে তার বিশাল ভবিষ্যৎ। ক্যাম্পাসে এসে মাঝে মাঝে আমাদের কোল্ড ড্রিংকস আর শিঙ্গাড়া খাওয়ান।’
কোল্ড ড্রিংকসের কথা শুনে অজান্তে প্রশান্তিতে ভরে উঠল মন আমার। সবেগে ভদ্রলোকের সামনে গিয়ে হাত বাড়িয়ে বললাম, ‘বিদ্যুৎ ভাই, আমি শনির আখড়ায় থাকি। মাঝে মাঝে আমাদের এলাকায় আসবেন প্লিজ।’
মন্তব্য করুন