একটা পাখি ডানায় আঘাত পেলে কী করতে পারে? হয়তো সঙ্গীসাথিরা তাকে বাড়িতে নিয়ে যাবে কিংবা পাখি উদ্ধারকারীরা তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে। কিন্তু আমেরিকায় ফেরিসবার্গ নামের এক জাতের কেস্ট্রেল চিল ডানা ভাঙার পর রীতিমতো শিল্পী বনে গেছে। পা দিয়ে ক্যানভাসে আঁকাআঁকি করে ‘শিল্পী’ হিসেবে খ্যাতিও পেয়েছে।
ফেরিসবার্গ আজ থেকে পাঁচ বছর আগে উড়তে গিয়ে ডানায় আঘাত পেয়ে এক ব্যক্তির মাথায় পড়ে। ওই ব্যক্তি চিলটিকে স্থানীয় বন্যপ্রাণী পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। পাখিটি ওড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল। তাই পুনর্বাসনকারী প্রতিষ্ঠান তাকে বনে ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে একটি বন্যপ্রাণীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রাখেন। যেখানে মানুষদের মূলত বন্যপ্রাণীদের বাস্তুতন্ত্র এবং তাদের সুরক্ষার বিভিন্ন দিক শেখানো হয়। তাই ভারমন্ট ইনস্টিটিউট অব ন্যাচারাল সায়েন্সে (ভিআইএনএস) স্থান দেওয়া হয় পাখিটিকে।
পাখিটি যেখানে পাওয়া গিয়েছিল সেই জায়গার নাম অনুসারে তার নামকরণ করা হয়। ছোট ঘুঘুর আকৃতির লালচে-বাদামি পিঠ ও লেজ, নীল-ধূসর মাথা এবং ফ্যাকাশে পেট কালো দাগযুক্ত উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে ছোট ও সবচেয়ে রঙিন ফ্যালকন প্রজাতির পাখি এই কেস্ট্রেল চিল। মাথার পেছনে চোখের মতো দুটি কালো দাগ থাকে, যা শিকারির হাত থেকে এদের বাঁচতে সাহায্য করে।
ভিআইএনএসে আসার পর সেখানকার কর্মীরা ধারণা করেন, ফেরিসবার্গ ছোট থেকেই মানুষের সঙ্গ পেয়ে বড় হয়েছে। তাই সে মানুষ দেখে ভয় পায় না ও বন্ধুর মতোই আচরণ দেখাতে থাকে।
ভিআইএনএসের পরিবেশবিদ ম্যালেরি মুরাটোরি ও লেক্সি স্মিথ খেয়াল করেন, আহত ফেরিসবার্গের ক্যানভাস আর রঙের প্রতি দুর্বলতা আছে। ম্যালেরি মুরাটোরি অবশ্য এর আগেও পাখিদের ক্যানভাসে আঁকা শিখিয়েছেন। তাই অন্যান্য শিল্পী পাখিদের মতো ফেরিসবার্গের আশপাশে কিছু রং ও কাগজ রেখে দিতে শুরু করেন তিনি। পায়ের নখে রঙের আঁচড়ে ক্যানভাসে আঁকিবুঁকি করে সে। আর এমনটা করলেই তাকে খেতে দেওয়া হয় সুস্বাদু পোকা। এভাবে ফেরিসবার্গ বুঝে গেল ছবি এঁকেই তাকে বাকি জীবন খেয়েপরে বাঁচতে হবে। এরই মধ্যে ফেরিসবার্গের শিল্পকর্ম অনেক হয়েছে। এখন বেশ আরামেই কাটছে তার দিন।
ভিআইএনএসে আহত বন্যপ্রাণীদের বিভিন্ন কাজ শেখানো হয়। পাখিগুলোর স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে প্রতিদিন ব্যায়ামও করতে দেওয়া হয়। যেমন উড়ে যাওয়া, লাফানো এবং বিভিন্ন খেলা দেখানো। ফেরিসবার্গের হাড় ভাঙার কারণে এখন ছবি আঁকাই তার সারা দিনের কাজ।