কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২৬ এএম
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

এবি পার্টির ১৭ প্রস্তাব ও পর্যবেক্ষণ

ড. ইউনূসের সঙ্গে সংলাপ
এবি পার্টির ১৭ প্রস্তাব ও পর্যবেক্ষণ

দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি। গতকাল শনিবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপের সময় লিখিতভাবে বিষয়টি জানায় দলটি। রাজধানীর হেয়ার রোডে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় এ সংলাপ হয়। এ সময় এবি পার্টির পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে ছয় দফা পর্যবেক্ষণ ও ১১ দফা দাবি, পরামর্শ ও প্রস্তাব তুলে ধরেন দলের সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু।

এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার, যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ ও সহকারী সদস্য সচিব ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট হাসান আরিফ, আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

পর্যবেক্ষণ:

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই মাস পূর্ণ হতে চলেছে। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা একাধিকবার জাতির উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দিয়েছেন। এতে তিনি সরকারের লক্ষ্য, অভিপ্রায়, অঙ্গীকার ও দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করার পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কার্যক্রমের বিবরণ, অগ্রগতি, প্রতিবন্ধকতা এবং বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলার স্বপ্ন ও রূপকল্প তুলে ধরেছেন। নানা প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমে সরকার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। বেশকিছু ক্ষেত্রে সরকারের কাজে গতিশীলতা এবং সাফল্য পরিলক্ষিত হলেও বেশিরভাগ মন্ত্রণালয়ের কাজ বেশ মন্থর ও দুর্বল। বিশেষ করে জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের কাজে দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভাব এবং সমন্বয়হীনতার কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিচার ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক অচলাবস্থার বিষয়টি বেশ হতাশাজনক। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এখনো ফ্যাসিবাদ ও গণহত্যার সহযোগী-প্রতিভূরা বসে আছেন। পুলিশ বাহিনী অকার্যকর, দুর্বল ও নৈতিক মনোবল হারা। সশস্ত্র বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হলেও মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি। ফ্যাসিবাদের ভয়ংকর দুঃশাসন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ছাত্র-জনতার যে রক্তস্নাত গণঐক্য তৈরি হয়েছিল, বর্তমানে সে ঐক্যে কিছুটা ক্ষত ও মৃদু ফাটল পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে দেশব্যাপী পাবলিক ইউনিভার্সিটি, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি, সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসা ছাত্রদের মধ্যে পূর্বেকার প্রেরণা ও দৃঢ় বন্ধন নেই। রাজনৈতিক দলগুলোও নানা কারণে বাগযুদ্ধে লিপ্ত। সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয় না থাকার বিষয়টিও এ ক্ষেত্রে দৃশ্যমান। এসব কিছুর প্রভাব নাগরিকদের মন ও মননে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের পরিকল্পনা নিয়ে স্পষ্ট রূপকল্প এখনো দেয়নি। ছয়টি কমিশন করার কারণে জনমনে যে আগ্রহ ও উৎসাহ তৈরি হয়েছিল, কমিশনের কার্যক্রম শুরু করতে দেরি হওয়ায় তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন, আহতদের সুচিকিৎসা এবং গণহত্যার নির্দেশ ও মদদদাতাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে সুসংঘবদ্ধ পদক্ষেপের অভাব লক্ষণীয়। সরকারের বৈধতা এবং প্রকৃতি নিয়ে ধোঁয়াশা ক্রমেই জটিল হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে সরকার আইন ও সংবিধান মানার কথা বলছে আবার কিছু ক্ষেত্রে আইন-সংবিধান মান্য করার চাইতেও প্রয়োজনকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এতে সরকারের দ্বিমুখিতা প্রকাশ পাচ্ছে ও সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

দাবি, পরামর্শ ও প্রস্তাব:

দুই মাসের মধ্যে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো, পুলিশকে পূর্ণভাবে সক্রিয় করার চেষ্টা করা এবং প্রয়োজনে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাত্মক সহায়তা নিয়ে দেশের সর্বস্তরে শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনগণের আস্থা সুদৃঢ় করা। জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, আইন, স্বাস্থ্যসহ যেসব মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সন্তোষজনক নয়। প্রয়োজনে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে সহকারী উপদেষ্টা নিয়োগ করা। সংবিধান সংশোধন বা পুনর্লিখনের মাধ্যমে সরকারের বৈধতার সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সরকারের বৈধতার প্রশ্নে আপাতত একটি আইনি প্রতিরক্ষা তৈরি করা, যা অর্ডিন্যান্স জারি করেও করা যেতে পারে। সংবিধান সংশোধন বা প্রণয়নের জন্য একটি কন্সটিটুয়েন্ট অ্যাসেমব্লি গঠন করা এবং সংবিধান রচনার পর গণভোটে সেটি পাস করানো। অবিলম্বে গণতদন্ত কমিশন গঠন করে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত সব নৃশংসতার ঘটনা জাতির সামনে তুলে ধরার ব্যবস্থা করা। প্রতিটি শহীদ পরিবারের পুনর্বাসনে স্পষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ। আহতদের চিকিৎসা কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া।

সিভিল প্রশাসন ও সশস্ত্রবাহিনীর কর্মকর্তা এবং সিপাহিদের মধ্যে যাদের অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাদের বিষয়ে একটি পৃথক কমিশন গঠন করা, যারা নিগ্রহ ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তাদের চাকরিতে ফিরিয়ে আনা বা সম্মানজনক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। গণহত্যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগী ব্যক্তি, সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের বিচারের জন্য ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’-এর পাশাপাশি ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন’ গঠন করা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচারক নিয়োগ দিয়ে তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম শুরু করা, বিলম্বের কারণে বহু আসামি পালিয়ে যাচ্ছে, বহু আলামত নষ্ট হচ্ছে। বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করার জন্য আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার করা একান্ত আবশ্যক। পিলখানা ও শাপলা চত্বরের গণহত্যার জন্যও পৃথক বিচার কমিশন গঠন করা। ছয়টি কমিশনের পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাত নিয়েও একটি জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করার প্রস্তাব করছি। সেনাবাহিনী, বিমান ও নৌবাহিনীর সংস্কার প্রক্রিয়ার জন্যও পৃথক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে একটি ‘শক্তিশালী সমন্বয় টিম’ গঠন করে দেওয়া যাদের মূল দায়িত্ব হবে, অভ্যুত্থানে জড়িত সব পক্ষের মতামত গ্রহণ ও যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে একটি কার্যকর সমন্বয় সংযোগ গড়ে তোলা। এই সমন্বয় টিম একটি জাতীয় সমঝোতা স্মারক তৈরির লক্ষ্য নিয়েও কাজ করতে পারে। দ্রব্যমূল্য সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসার জন্য নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু রাখা। প্রাত্যহিক জনভোগান্তি দূর করতে প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও পরিবর্তনপ্রত্যাশী ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক কমিউনিটি মনিটরিং টিম গঠনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

ফ্যাসিবাদী সরকার বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে দেশবিরোধী যেসব চুক্তি করেছে, তা পর্যালোচনা করা দরকার। দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি করে যারা অবৈধ টাকার পাহাড় গড়েছে এবং বিদেশে টাকা পাচার করে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। দেশে ও বিদেশে তাদের সম্পদ জব্দ করার পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজনৈতিক দল ও সব সামাজিক পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংস্কার এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা। দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে যাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দেওয়া যায়, সে লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা ও আন্তরিক প্রচেষ্টা চালানো।

ছাত্র-জনতার অপরিসীম ত্যাগ, রক্তদান ও জীবনের বিনিময়ে যে স্বপ্ন ও অর্জন, তাকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সে অনুভূতি ও চ্যালেঞ্জ মনে রেখে কাজ করতে হবে। জনগণের কাছে দায়বদ্ধতার জন্য নিজ নিজ সম্পদের হিসাব দেওয়ার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করতে হবে। দুই মাস পরপর প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কাজের অগ্রগতি জাতির সম্মুখে তুলে ধরার চেষ্টা করতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ন্যূনতম কর একটা কালাকানুন : এনবিআর চেয়ারম্যান

ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটি যেদিন

শপথ নিলেন হাইকোর্টের ২৫ বিচারপতি

সাকিবের প্রিয় ‘শিকারের’ তালিকায় তামিম, দেখে নিন পুরো তালিকা

‘ভয়ংকর আফ্রিদির’ মুখোশ খুললেন তানভীর রাহী

ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন শুরু

তথ্য গোপন করে প্রধান শিক্ষক, অতঃপর...

পুঁজিবাজারের প্রতারক চক্র গোয়েন্দা সংস্থার নজরে: ডিএসই

পরিবর্তন হচ্ছে বাংলাদেশ জেলের নাম 

চট্টগ্রামে সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমে ২ শ্রমিকের মৃত্যু

১০

রাতে খাওয়ার পরও ক্ষুধা লাগার কারণ জেনে নিন

১১

বৃষ্টি-গরম নিয়ে নতুন বার্তা দিল আবহাওয়া অফিস

১২

প্রেমের স্মৃতি টেনে কিমের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন ট্রাম্প

১৩

কমলাপুর রেলস্টেশনে নারীকে কুপিয়ে হত্যা, প্রেমিক আটক

১৪

নদীভাঙনের কবলে শতবর্ষী স্কুল, হুমকিতে মাঠ ও শহীদ মিনার

১৫

আবারও সেরা ব্রাজিল, কলম্বিয়াকে হারিয়ে জিতল টানা তৃতীয় শিরোপা

১৬

দুদিন বন্ধ থাকবে ঢাবি মেট্রো স্টেশন

১৭

‘দৈনিক আজকের কণ্ঠ’ নামের পেজটি গুজব তৈরির প্ল্যাটফর্ম : বাংলাফ্যাক্ট

১৮

সরকারি ইজারাবিহীন বালুমহালে মোবাইল কোর্টের হানা

১৯

পর্দায় শুভশ্রীর সঙ্গে নিজেকে দেখে অশ্রুসিক্ত দেব

২০
X