যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতেই ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের জন্য গঠিত সার্চ কমিটির কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে জটিলতা। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব স্বাক্ষরিত সেই চিঠিতে ফেডারেশনগুলোর অ্যাডহক কমিটি গঠনে বিলম্বের জন্য সরকারের গড়ে দেওয়া সার্চ কমিটির ওপর দায় চাপানো হয়েছে। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, এমন বিলম্বের জন্যই ফেডারেশনগুলোকে নির্ধারিত আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা যাচ্ছে না। সেইসঙ্গে চিঠিতে ২০ এপ্রিলের মধ্যে সব ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ নির্দেশনার কারণে নিজেদের কাজ নিয়ে জটিলতার মুখে পড়েছে সার্চ কমিটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দু-একটি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি গঠনে কর্মকর্তাদের আবদার না রাখার কারণেই এমন দায় চাপানোর খেলা শুরু হয়েছে।
মন্ত্রণালয় থেকে আকস্মিক এই চিঠি প্রাপ্তিতে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে সার্চ কমিটি। ক্রীড়া উপদেষ্টা, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ক্রীড়া প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সার্চ কমিটির কার্যক্রম যে অবস্থায় আছে তাতে কোনোভাবেই চলতি বছরের ৫ মের আগে সব অ্যাডহক কমিটি গঠন করা সম্ভব নয়। সার্চ কমিটির আহ্বায়ক জোবায়দুর রহমান রানার স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) যথাযথ সহযোগিতা প্রদান করলে সংস্কারের অনন্য কাজ শেষ করতে আরও বেশি সময় প্রয়োজন হবে।
ক্রীড়া উপদেষ্টাকে প্রেরিত দুই পৃষ্ঠার পত্রে বলা হয়, সার্চ কমিটির কার্য সম্পন্ন করতে প্রজ্ঞাপনে কোনো সময়সীমা না থাকলেও কাজের পরিধি ও ব্যাপকতা অনুধাবন করে ভালোভাবে সময় নিয়ে কাজ সম্পন্ন করার মৌখিক নির্দেশনা ছিল। সার্চ কমিটির কাজের আওতায় ৫৬ ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি গঠনের বিষয়টি না থাকলেও ক্রীড়া উপদেষ্টার ব্যক্তিগত নির্দেশনার আলোকে সার্চ কমিটি এ কাজ হাতে নেয়।
পরবর্তী সময়ে সার্চ কমিটি ফেডারেশনের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে ধাপে ধাপে ২৪টি অ্যাডহক কমিটি গঠন করে। এ তথ্য জানিয়ে পত্রে বলা হয়, প্রথম ধাপে নয়টি কমিটি ১৬ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে জমা দেওয়া হলেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ৪ নভেম্বর ২০২৪-এ তা প্রকাশ করে। দ্বিতীয় ধাপে ৯টি কমিটি ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে জমা দেওয়া হলেও তার মধ্যে ৭টি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি এক মাস পর ২৮ জানুয়ারি ২০২৫-এ এনএসসি প্রকাশ করে। তৃতীয় ধাপে চারটি কমিটি ৬ জানুয়ারি ২০২৫ গঠন করা হলেও তার মধ্যে দুটি কমিটি দুই মাস ১৪ দিন পর ১৯ মার্চ এনএসসি প্রকাশ করে। চতুর্থ ধাপে দুটি কমিটি ২৬ জানুয়ারি জমা দেওয়া হলেও দুই মাস পর ১৯ মার্চ ২০২৫ সালে এনএসসি সেটার প্রজ্ঞাপন জারি করে। সব মিলিয়ে জমাকৃত ২৪ ফেডারেশনের তিনটির অ্যাডহক কমিটির প্রজ্ঞাপন এখনো জারির অপেক্ষায় আছে।
চিঠিতে প্রশ্ন করা হয়, প্রজ্ঞাপন জারি করতেই যদি ২ মাস লাগে, তবে নীতিমালা মেনে কমিটিগুলো গঠনে কত সময় লাগতে পারে। সার্চ কমিটির প্রধান জানিয়েছেন, ৫৩ ফেডারেশনের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা। ২ থেকে ৪ ঘণ্টা করে এ কাজেই শুধু ব্যয় হয়েছে ১৯০ ঘণ্টা। তার সঙ্গে সব পক্ষের কথা শুনে একটি গ্রহণযোগ্য কমিটি করতে ৭ থেকে ৯ দিন সময় লেগেছে। সেইসঙ্গে ফেডারেশনগুলোর জন্য প্রযোজ্য আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় আইন জেনে এবং মেনে গঠনতন্ত্রগুলো নিয়েও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে সার্চ কমিটি।
সার্চ কমিটির আহ্বায়ক, জোবায়দুর রহমান রানা তার পত্রে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ২০ মার্চ ২০২৫ তারিখে প্রেরিত ১৩১ নং স্মারকের পত্রটিকে দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে বলেন, সার্চ কমিটির কাজকে মন্ত্রণালয় যতটা সহজ ভেবে নিয়ে অভিযোগের ভাষায় উপস্থাপন করেছে সার্চ কমিটির সেই দায় প্রাপ্য নয়। ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন প্রকাশে সার্চ কমিটির কোনো এখতিয়ার নেই, বিলম্বের কারণেও দায় নেই বলেও তিনি জানান।
সার্চ কমিটিকে সাচিবিক সহযোগিতা প্রদানের দায়িত্বে থাকা এনএসসি কার্যক্রমে খানিকটা হতাশার কথা আছে সার্চ কমিটির প্রধানের এই পত্রে। জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলোর সঙ্গে সভার আয়োজনের জন্য বিস্তারিত ছক আকারে জানিয়ে ৭ মার্চ একটি পত্র দেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। অথচ পদ্ধতিগতভাবে মতবিনিময় ছাড়া সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে তা নিয়ে নিশ্চিত বিতর্কের সৃষ্টি হবে।
যদিও অ্যাডহক কমিটি গঠনের কাজ ছাড়াও পূর্ণাঙ্গ সংস্কার প্রস্তাবের জন্য সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনকে সঙ্গে মতবিনিময়, খসড়া গঠনতন্ত্র নিয়ে ৫৩ ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠক এবং চূড়ান্ত সংস্কার প্রস্তাবনা প্রস্তুত করার মতো বড় কাজগুলো এখনো বাকি রয়ে গেছে। এসব কাজ ২০ এপ্রিলের মধ্যে করা সম্ভব নয় জানিয়ে পত্রে বলা হয়, ৫ এপ্রিলের মাঝে কাজ শেষ করার ইচ্ছে নিয়ে তারা এগোতে চান।
কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়া ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আকস্মিক এমন পত্র প্রেরণের কারণ ব্যাখ্যায় নাকি এনএসসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বরাতে বলা হচ্ছে, অর্থছাড়ের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়াতেই নাকি এই পত্র প্রেরণ। এমন কথায় চটেছেন সার্চ কমিটির সদস্যরাও। অর্থ ছাড়ের সঙ্গে সার্চ কমিটির সম্পর্ক কোথায়।
এদিকে ৫৩ ফেডারেশনের সবকটিকে দীর্ঘদিন ধরে অনুদানের অর্থ বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত রেখেছে এনএসসি। এতদিন তারা সহজভাবে কাজটি করলেও নিজেদের করা আইনেই নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে অর্থছাড়ে বিলম্ব করছে। ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি এ ধরনের হযবরল পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়েছে ফেডারেশনগুলো। দু-একটি ফেডারেশন নিজেদের অর্থায়নে অল্পবিস্তর কার্যক্রম চালিয়ে নিলেও বেশির ভাগ ফেডারেশনের কার্যক্রম থমকে গেছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে এ অবস্থায় ফেডারেশনগুলোর পক্ষ থেকে ঈদের পর ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা চলছে। এমন খবরে নিজেদের দায় এড়াতেই এনএসসি আকস্মিকভাবে সার্চ কমিটির ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। এ ছাড়া অ্যাডহক কমিটিতে পছন্দের ব্যক্তিদের ঠাঁই না হওয়াতেও সার্চ কমিটির ওপর ক্ষিপ্ত এনএসসির কিছু কর্মকর্তা। একটি ফেডারেশনের কমিটি গঠন নিয়ে সার্চ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে প্রকাশ্যে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এনএসসির সচিব মো.আমিনুল ইসলাম। মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্তা হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও তার জেরেই সার্চ কমিটির কাজে বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অবস্থান জানতে চেয়ে সংস্থার সচিব মো. আমিনুল ইসলামকে এসএমএস পাঠানো হলেও তার কোনো সাড়া মেলেনি।
মন্তব্য করুন